ভারতীয় উইকেট রক্ষকদের উপর দু:সময় যেন জেঁকে বসেছে। গুরুতর এক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ঋষাভ পান্ত এখন হাসপাতালে বন্দি। এরপর আরেক তরুণ ব্যাটার সাঞ্জু স্যামসনও পড়েছেন চোটের কবলে। হাঁটুতে আঘাত পাওয়ায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ থেকেই ছিটকে গিয়েছেন তিনি। লোকেশ রাহুল বিশ্রামে, ঋষাভ পান্ত আর সাঞ্জু স্যামসন মাঠের বাইরে – সব মিলিয়ে তাই হঠাৎ করে উইকেট রক্ষক শূন্য হয়ে পড়েছে ভারতীয় স্কোয়াড।
আর তাই তো জাতীয় দলে ডাক পড়েছে অর্ধ পরিচিত এক ক্রিকেটারের; ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে পাঞ্জাব কিংসের হয়ে কিপিং করা এই ক্রিকেটারের নাম জিতেশ শর্মা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাকি দুইটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের জন্য স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তাঁকে। যদিও টিম ম্যানেজম্যান্টের এমন সিদ্ধান্ত একপ্রকার চমকই বটে, কেননা এই মুহূর্তে জাতীয় দলের আশেপাশে ছিলেন না জিতেশ।
আইপিএলে পাঞ্জাব কিংসের হয়ে খেলার সময়ই নির্বাচকদের নজরে পড়েছিলেন জিতেশ শর্মা। তবে এর আগে ২০১৭ সালে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের স্কোয়াডের অংশও ছিলেন তিনি। অবশ্য রোহিত শর্মার দলের হয়ে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি এই ব্যাটার। দীর্ঘ অপেক্ষার পর চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে আইপিএল অভিষেক হয় তাঁর, সে ম্যাচে ১৭ বলে ২৬ রান করেছিলেন তিনি।
সব মিলিয়ে এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার এখন পর্যন্ত প্রীতি জিনতার পাঞ্জাবের হয়ে ১২টি ম্যাচে মাঠে নেমেছেন। এসময় ১০ ইনিংসে ২৩৪ রান সংগ্রহ করেছেন তিনি। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ৩৪ বলে ৪৪ রানের ইনিংসটি এই ডানহাতির আইপিএল ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর।
ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে বিদার্ভা প্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন জিতেশ শর্মা। দলটির অন্যতম ধারাবাহিক পারফর্মারও তিনি। ২০১২/১৩ মৌসুমে কুচবিহার ট্রফিতে প্রথম বিদার্ভার স্কোয়াডে নেয়া হয়েছিল তাঁকে। সেই টুর্নামেন্টে মাত্র ১২ ম্যাচেই ৫৩৭ রান করে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দেন এই তরুণ।
২০১৪ সালে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণেও পা রাখেন জিতেশ শর্মা। একই বছর তাঁর লিস্ট এ ক্যারিয়ারও শুরু হয়েছিল। সীমিত ওভারের খেলায় অধিকাংশ সময় উপরের দিকেই ব্যাট করতেন জিতেশ, বিদার্ভা প্রদেশের ব্যাটিং লাইন আপের নেতৃত্ব তাঁর কাঁধেই ছিল। পরের বছর আরো ক্ষুরধার হয়ে ওঠেন তিনি। মুস্তাক ট্রফিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন এই উইকেট রক্ষক। ১৪০ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে ৩৪৩ রান করেছিলেন তিনি যেখানে ছিল একটি সেঞ্চুরি এবং দুইটি হাফসেঞ্চুরির মার।
এমন দারুণ পারফর্ম করার পর আইপিএলের ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর চোখ পড়ে জিতেশ শর্মার উপর। ২০১৬ সালের নিলামে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স নিজেদের করে নেয় তাঁকে। তবে দলটির হয়ে খেলার সুযোগ পাননি তিনি, সর্বশেষ ২০২২ সালে ঠিকানা বদলে পাঞ্জাবে চলে আসেন এই ক্রিকেটার। এখন পর্যন্ত আহামরি ভাল না করলেও আস্থার প্রতিদান ঠিকই দিয়েছেন তিনি।
ঋষাভ পান্ত, সাঞ্জু স্যামসন আর লোকেশ রাহুলের অনুপস্থিতির কারণে স্ট্যাম্পের পেছনে গ্লাভস হাতে দাঁড়ানোর জন্য ভারতীয় দলে ছিলেন কেবল ঈশান কিষাণ। এই বাঁ-হাতিকে বিশ্রাম দিতে চাইলে অথবা অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে খেলার বাইরে চলে গেলে জিতেশ শর্মার উপরই ভরসা রাখবে টিম ইন্ডিয়া। এই উদীয়মান তারকা শুধু স্ট্যাম্পের পেছনে নয়, সামনেও চমৎকার। মিডল অর্ডার বা লোয়ার মিডল অর্ডারে ঝড়ো ব্যাটিং ভালোই আয়ত্তে আছে তাঁর।
২৯ বছর বয়সী এই ব্যাটার পাঞ্জাব এবং বিদর্ভের জন্য পারফেক্ট ফিনিশারের ভূমিকা পালন করে থাকেন। যদিও সাম্প্রতিক সৈয়দ মুশতাক আলী টি-টোয়েন্টি এবং বিজয় হাজরে ট্রফিতে খুব একটা আলো ছড়াতে পারেননি জিতেশ তবু তিনি বিশেষই বটে। তাঁর সবচেয়ে বড়গুণ হল এই তরুণ প্রথম বল থেকেই বিগ হিট করতে পারেন।
আপাতত অপেক্ষা মাঠে নামার; ভারতের আকাশি-নীল জার্সি গায়ে জড়িয়ে মাঠে নামতে পারলেই পূরণ হবে জিতেশ শর্মার স্বপ্ন। তবে এতটুকুতেই থামতে চাইবেন না তিনি, আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেকে রাঙিয়ে রাখতে নিশ্চয়ই উদগ্রীব হয়ে আছেন ভারতীয় ব্যাটার।