অবারিত সূর্যের হাসি

অস্ট্রেলিয়ার মিস্টার ক্রিকেট খ্যাত মাইকেল হাসির অভিষেক হয়েছিল ২৯ বছর বয়সে; অবশ্য অভিষেকের পর থেকে আর পিছনে ফিরতে হয়নি। ক্রিকেটের তিন সংস্করণেই নিজের প্রতিভা দেখিয়েছিলেন এই ব্যাটসম্যান। মাইকেল হাসির মতই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানোর জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে ভারতের সুরিয়াকুমার যাদবকে।

সুরিয়ার বয়স এখন ৩২ বছর, অথচ জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন মাত্র তিন বছর আগে। অন্য ক্রিকেটারদের চেয়ে দেরিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখার আক্ষেপ-ই হয়তো তিনি এখন নিজের সেরা নিংড়ে দিচ্ছেন।

এই যেমন ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে রীতিমতো তান্ডব ছড়িয়েছেন সুরিয়াকুমার যাদব। চামিকা করুনারত্নে, দিলশান মাধুশাঙ্কাদের বলে কয়ে বাউন্ডারি ছাড়া করেছেন তিনি। ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে মাঠে আসা সুরিয়া অপরাজিত থেকেই প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন। আর এর মাঝে মাত্র ৫১ বলে করেছেন ১১২ রান। সাত চার আর নয়টি ছয়ের মারে গড়া এই ইনিংসে ছিল না কোন খুঁত।

লঙ্কানদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমেছিল ভারত। ওপেনার সুবমান গিল কিছুটা রয়ে সয়ে শুরু করলেও তিন নম্বরে নামা রাহুল ত্রিপাঠী ছিলেন দুর্দান্ত। ভারতকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেওয়া এই ডানহাতি ফিরেছেন ১৬ বলে ৩৫ রান করে। এরপর শুধুই সুরিয়া-কাব্য। শ্রীলঙ্কার বোলিং লাইনআপের উপর ঝড় বইয়ে দিয়েছেন তিনি।

শুরুটা চামিকা করুনারত্নেকে দিয়েই, এই পেসারের করা দ্বিতীয় ওভারে প্রথম বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন সুরিয়াকুমার যাদব। এরপর তাঁর ব্যাট থেকে হয়েছে শুধুই বাউন্ডারি বৃষ্টি।

প্রথম দশ ওভারে ভারতের রান ছিল দুই উইকেটে ৯২; আর তখন পর্যন্ত ১৫ বলে ২৫ রান করেছিলেন সুরিয়াকুমার। অথচ নির্ধারিত বিশ ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়িয়েছিল ২২৯ রানে পাঁচ উইকেট; এবং মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের তারকার নামের পাশে ছিল ১১২ রান। অর্থাৎ এসময় ভারত ৬০ বল থেকে করেছে ১৩৭ যেখানে সুরিয়া একাই করেছেন ৩৬ বলে ৮৭ রান। ছোট্ট এই পরিসংখ্যানটিই বোধহয় এই ব্যাটারের আধিপত্য বোঝাতে যথেষ্ট।

বর্তমান আইসিসির টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানদের র‍্যাংকিংয়ে সবার উপরে আছেন সুরিয়াকুমার যাদব। কেন তিনি সবচেয়ে সেরা সেই উত্তরই আরো একবার ব্যাট হাতে দিলেন এই তারকা। মাঠের চারদিকেই শট খেলেছেন; সব বোলারকেই শাসন করেছেন। পুরোদস্তুর ৩৬০° ব্যাটিংয়ের দেখা মিলেছে ভারতের রাজকোট স্টেডিয়ামে।

টোয়েন্টিতে ৪০ গড়ে ব্যাটিং করতে পারবে অনেকে, আবার ১৭০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করাও খুব একটা কঠিন নয়। কিন্তু দুটোই যদি একসাথে করতে বলা হয় – সেটি তাহলে অবিশ্বাস্যই মনে হবে। আর এই কাজটাই করেছেন সুরিয়াকুমার যাদব। প্রায় তিন বছর ধরে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার পরেও তাঁর ব্যাটিং গড় ৪৪ আর স্ট্রাইক রেট ১৮১ এর কাছাকাছি।

ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়া দলগুলোর মাঝে আবার কেউই করতে পারেননি এমন কীর্তি গড়তে। অর্থাৎ পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচ খেলে এমন দলের ব্যাটারদের মাঝে একমাত্র সুরিয়াকুমারই পেরেছেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে কমপক্ষে ১৭০ স্ট্রাইক রেট এবং ৪০ এর বেশি গড়ে ব্যাটিং করতে।

এবিডি ভিলিয়ার্সের পর নতুন ব্যাটার হিসেবে মি.৩৬০° উপাধি পেয়েছেন ৩২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। প্রতিপক্ষের বোলাররা যেভাবেই বল করুক, যেভাবেই ফিল্ডিং সাজাক না কেন সুরিয়াকুমার যাদবের হাতে শট আছে; তিনি গ্যাপ খুঁজে নিবেনই।

প্রতিনিয়ত সঠিকভাবে শট খেলার এমন সক্ষমতা আরো বাড়িয়ে তুলছেন এই তারকা ব্যাটার। এমন ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে ক্যারিয়ার শেষেহয়তো দেরিতে অভিষেক হওয়ার আক্ষেপটুকু থাকবে না সুরিয়াকুমার যাদবের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link