আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকটা দেরিতে হলেও টি-টোয়েন্টিতে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন সুরিয়াকুমার যাদব। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ক্রিকেটে তাঁর স্যার ডন ব্র্যাডমান সুলভ পারফরম্যান্স দেখেই কিনা প্রশ্ন উঠছে বাকি দুই ফরম্যাটে কেমন করবেন এই তারকা।
শ্রীলংকার বিপক্ষে সেঞ্চুরির পর গৌতম গম্ভীর তো বলেই বসেছেন, সুরিয়াকে টেস্টে খেলানো উচিত। যদিও টি-টোয়েন্টি এবং টেস্ট সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর জায়গা। সুতরাং টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি এই দুইয়ের মাঝে থাকা ওডিয়াই নিয়ে আলোচনা করা যেতেই পারে।
এক যুগ বাদে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর বসছে ভারতে। ঘরের মাঠে শিরোপাটা নিজেদের কাছেই রেখে দেবার লক্ষ্যেই মাঠে নামবে রোহিত শর্মার দল। সেই লক্ষ্যে সুরিয়াকে ওডিয়াই দলে ডাকার গুঞ্জন উঠলেও ভারতের মিডল অর্ডারে খেলানোর জায়গা কই! চার থেকে ছয় নাম্বার পর্যন্ত তিন পজিশনেই রয়েছেন একাধিক দাবিদার। বিগত দুই বছরে দাবিদার। ঋষাভ পান্ত, শ্রেয়াস আইয়ার, সঞ্জু স্যামসন, লোকেশ রাহুল, হার্দিক পান্ডিয়া, দীপক হুডা যিনিই সুযোগ পেয়েছেন, নিজের সেরাটা দিয়ে পারফর্ম করেছেন।
অন্যদিকে, টি -টোয়েন্টির ন্যায় ওডিয়াইতেও দুর্দান্ত শুরু করেছিলেন সুরিয়া। প্রথম আট ম্যাচেই ৫৩ গড় এবং ১০৩ স্ট্রাইক রেটে রান করছিলেন দেদারসে। কিন্তু পরের আট ম্যাচেই যেন ক্রিকেটের নির্মম রূপটা দেখতে পেয়েছিলেন তিনি। চারবার আউট হয়েছেন দুই অংক পেরোনোর আগেই, বিশ রানের আগে আউট হয়েছেন দুবার।
এছাড়া তাঁর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা বাকিরা ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিং কিংবা কিপিং করতে জানেন। একমাত্র শ্রেয়াস আইয়ারই দলে স্পেশালিস্ট ব্যাটার হিসেবে খেলেন। ঋষাভ পান্ত, লোকেশ রাহুল, সাঞ্জু স্যামসন তিনজনেই বিকল্প উইকেটরক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে জানেন। তবে টি-টোয়েন্টির ফর্মটা সুরিয়া ওডিয়াইতে ধরে রাখলে পারলে এত হিসেব নিকেশের প্রয়োজনই পড়বে না।
ঘরোয়া ক্রিকেটে সুরিয়ার পারফরম্যান্সও তাঁর পক্ষেই কথা বলবে। বিগত চার বছরে তিনি ৪৫ গড় এবং ১২২ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ১৬৪৭। বলা হচ্ছে বিশ্বকাপের আগে খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়ে নেই ভারত। তবে শ্রীলংকা এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই সিরিজে তাঁকে বাজিয়ে দেখার সুযোগটা নিতেই পারে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে তাঁকে খেলানোর অর্থ হচ্ছে লোকেশ রাহুল কিংবা শ্রেয়াস আইয়ারের একজনকে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। যদিও অধিনায়ক রোহিত শর্মার ভাবনাটা ভিন্ন।
তিনি বলেন, ‘দুই ফরম্যাটকে একত্রে মিলিয়ে ফেললে সমস্যাটা বাঁধে। আমাদেরকে দেখতে হবে ওডিয়াইতে কারা ভাল পারফর্ম করছে। কোন পরিস্থিতিতে তাঁরা পারফর্ম করেছে, চাপের মুখে তাঁরা ব্যাট করেছে এবং রান করেছে। দল নির্বাচনের আগে আপনাকে সবকিছুই বিবেচনায় রাখতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি ফর্মের ব্যাপারটা মানি। ফর্মটা জরুরি কিন্তু কোন ফরম্যাটে খেলা হচ্ছে সেটাও মাথায় রাখতে হবে। ওডিয়াই ক্রিকেট একটা আলাদা ফরম্যাট। যারা ওডিয়াইতে বিগত দিনগুলোতে ভাল করেছে তাঁরাই সুযোগ পাওয়া ডিজার্ভ করে। আমরা নিজেদের পরিকল্পনা নিয়ে সচেতন।’
সুতরাং সুরিয়াকে প্রমাণ করতে হবে তিনি ওডিয়াই ক্রিকেটের চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। দশ ওভারের মাঝেই দুই কিংবা তিন উইকেট পড়ে যাবার পরের পরিস্থিতি আর টি-টোয়েন্টিতে ছয় ওভারে ৫০ রানের দুই উইকেট পড়ার পরিস্থিতি নিশ্চিতভাবেই এক নয়। টি-টোয়েন্টিতে প্রতিটা বলেই আক্রমণ করার স্বাধীনতা থাকে, উইকেটের গুরুত্বটা এখানে কম। ওয়ানডেতেও কি তিনি একই মেজাজে ব্যাট করতে পারবেন?
ইংল্যান্ড দেখিয়েছে তাঁরা পুরো পঞ্চাশ ওভারই টি-টোয়েন্টির মেজাজে ব্যাট করতে জানে। কিন্তু তাঁদের পুরো দলটাই একই নীতিতে চলে, তাঁদের ড্রেসিংরুমের পরিবেশ আর ভারতের পরিবেশ আলাদা। এছাড়া টি-টোয়েন্টিতে একজন বোলার কেবল চার ওভারই বল করতে পারে। অন্যদিকে, ওয়ানডেতেও একজন বোলারের কোটা থাকে দশ ওভার। এমনটা তাই ঘটতেই পারে সুরিয়া ব্যাটিংয়ে এলে প্রতিপক্ষের অধিনায়ক তাঁর সেরা বোলারকে ব্যবহার করবেন তাঁর বিপক্ষে।
তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য, সুরিয়াকে তাঁরা কোন পজিশনে খেলাবেন। তিনি কি টি-টোয়েন্টির ন্যায় চারে খেলবেন নাকি আরেকটু নিচের দিকে পাঁচ কিংবা ছয় নম্বরে?
চারে ব্যাট করলে সুরিয়া ব্যাটিংয়ে বাড়তি সুবিধা পাবেন। কেননা মাঝের ওভারগুলোতে কেবল চারজন ফিল্ডার ত্রিশ গজ বৃত্তের বাইরে দাঁড়াতে পারেন। অন্যদিকে, পাঁচ কিংবা ছয়ে নামলে বেশিরভাগ সময়ে তাঁকে খেলতে হবে ইনিংসের শেষের ১৫ কিংবা ২০ ওভার। সেক্ষেত্রে ইনিংস গড়ার চাইতে বরং মারমুখী ব্যাটিং করতে হবে শুরু থেকেই। সুরিয়াও স্বাধীনতাও সেখানে বেশি, তিনি চাইলে টি- টোয়েন্টি মেজাজেই খেলতে পারবেন পুরোটা সময়।
সবকিছু মিলিয়ে কাজটা মোটেই সহজ নয়। কিন্তু নামটা যেহেতু সুরিয়াকুমার যাদব, ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট তাই ভরসা রাখতে পারেন চোখ বন্ধ করেই।