ইনজামাম উল হককে তো সবারই মনে আছে নিশ্চয়ই। ১৯৯২-এর বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তরুণ ইনজি ঝড় না তুললে পাকিস্তান হয়তো ফাইনালেই পৌঁছাতো না। সেই ইনজির বাবা একটা সময়ে নাকি অসমের জোড়হাটে ছিলেন। কর্মসূত্রে ছিলেন এই দেশে। জোড়হাটে যে বাড়িতে ইনজামামের বাবা থাকতেন, সেই বাড়িই এখন দ্রষ্টব্যস্থানে পর্যবসিত হয়েছে। বাড়িটি ইনজামাম উল হকের বাড়ি বলে পরিচিত।
আমার এক সাংবাদিক বন্ধু দীর্ঘদিন ধরেই বলছে এই গল্প। আমি গোড়ায় বিশ্বাসই করিনি। গতকাল আরেক সাংবাদিক বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করায় তিনি বলেন, এই খবর বেশ কয়েকবছর আগে তিনিই করেছিলেন। আমি তাঁকে বারংবার জিজ্ঞাসা করলাম, ‘এটা কি সত্যি নাকি?’ সে জোর দিয়ে বলল, ‘একশো শতাংশ সত্যি।’
উল্লেখ্য, সেই বন্ধু অসমেরই সাংবাদিক। একবার আমরা একসঙ্গে জেকে বোস টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়েছিলাম। আমার প্রাক্তন বসকে এবিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি আমাকে আদেশ করলেন, ‘ইনজামামকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করছো না কেন?’ ইনজামাম উল হকের সঙ্গে আমার দূরত্ব কয়েক আলোকবর্ষের। আমি চেষ্টা করলেও তাঁর কাছে পৌঁছতে পারবো না। তবে জোড়হাটে ইনজামামের আদি বাড়ি, এ কিন্তু বেশ ইন্টারেস্টিং। এবিষয়ে আরও কিছু তথ্য জানার আগ্রহ রইল।
বিশ্বক্রিকেটে ইনজামামের রান আউট নিয়ে কত যে গল্প ছড়িয়ে আছে তার ইয়ত্তা নেই। ইনজিকে নিয়ে প্রাক্তন পাক অধিনায়ক ওয়াসিম আক্রমের মজাদার গল্প তো এখন মিথের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আক্রমকে অনুরোধ করা হত সেই গল্পটি বলার জন্য আর তিনি হাসতে হাসতে বলতেন, ‘ইনজিকে আগে থেকেই বলে রেখেছিলাম ব্যাটে বল লাগুক বা প্যাডে আমি কিন্তু দৌড়বো। তুইও দৌড়স।’
তার পরের ঘটনা হল, বোলারের ইয়র্কারে ইনজামাম পড়ে যান। আক্রম আগের কথা মতো ছুটতে শুরু করেন নন স্ট্রাইক এন্ড থেকে। ইনজামামের কাছে আক্রম পৌঁছে দেখেন তখনও ইনজি মাটি থেকে ওঠার চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রাণপনে। সামনে আক্রমকে দেখে অবাক হয়ে ইনজামাম নাকি বলে ওঠেন, ‘ওয়াসিম ভাই, আপনি এখানে কী করছেন?’
প্রাক্তন পাকিস্তানি গ্রেটকে নিয়ে আরও একটা গল্প আছে। একবার ভারত সফর চলাকালীন এক তরুণের সঙ্গে ইনজির পরিচয় হয়েছিল। সেই তরুণ একটা ফোন নম্বর দিয়ে ইনজামামকে বলেছিলেন, এটা তাঁর মায়ের নম্বর। সেই তরুণের মায়ের নাম পুষ্পা গোয়েল। ইনজির কাছে অনুরোধ করে সেই তরুণ বলেছিলেন, নম্বরটা যেন ইনজি তাঁর বাবাকে দেন। ইনজামামের বাড়ি মুলতান।
সেখান থেকে ফোন আসে পুষ্পা গোয়েলের কাছে। ইনজির বাবা ভোলেননি পুষ্পাকে। হরিয়ানার হানসি বলে একটা জায়গায় থাকতেন ইনজামামের বাবা। তখন খুব অশান্ত সময়। ইনজিদের পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছিলেন এই পুষ্পা গোয়েল। সেই কৃতজ্ঞতার কথা ভোলেননি ইনজামামের বাবা। পরে ছেলের বিয়েতে পুষ্পাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এরকম একটা গল্প প্রচলিত আছে।
এগুলো শুনলে, পড়লে মনে হয়, লাইফ ইজ স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিকশন। কোথায় ইনজামাম, কোথায় অসম আর কোথায় বা হরিয়ানা! সব কেমন এক সুতোয় বাঁধা।