ধীরে ধীরে বড় হওয়া…

তখন ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটটা নিয়মিত দেখাতো টিভিতে, আর দেখতেও বেশ লাগতো। যে বারে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) চালু হলো মানে ২০০৮ সালে সেবারে কাউন্টি ক্রিকেটের টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মিডলসেক্স।

এমনিতেই দলটাকে বেশ পছন্দ হয়ে গিয়েছিলো তাদের জার্সির রঙের জন্য, গোলাপি রঙের সেই জার্সি বেশ চোখ টানতো। আর তার সাথে চোখ টানতো তখন বছর ২১ এর এক বাঁহাতি ব্যাটসম্যান, নাম ডেভিড মালান।

সেই দলে বর্তমান ইংল্যান্ড অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যান বা সেসময়ে টি-টোয়েন্টিতে ঝড় তোলা এক দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডার টাইরন হেন্ডেরসন থাকলেও আলাদা করে নজরে পড়তেন মালান তাঁর স্বভাবসিদ্ধ আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের জন্য। সেবার টি-টোয়েন্টি কাপে ল্যাঙ্কাশয়ারের বিরুদ্ধে ছয় নম্বরে নামা প্রথম ব্যাটসম্যান হিসাবে অনবদ্য এক সেঞ্চুরি করে শিরোনামে এলেন মালান।

এর পরের বছর একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন রাজস্থান রয়্যালসের মুখোমুখি হয়েছিল মিডলসেক্স, সেই ম্যাচে মালান ব্যাট হাতে তেমন কিছু করতে না পারলেও চোখ টানলেন বল হাতে দুই উইকেট নিয়ে। এরপর ধীরে ধীরে কালের অমোঘ নিয়মে মনে হচ্ছিলো হারিয়েই যাচ্ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার পার্লে বড় হওয়া এই আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান।

আসলে এরপরের গল্পটা শুরু ২০১৭ সাল থেকে, ততদিনে মালান আর খুব তরুণ নন, বয়সটা ৩০-এর কোঠায় গিয়েছে। কাউন্টি ক্রিকেটে দারুণ পারফরমেন্স সেবার ইংল্যান্ড জাতীয় দলে জায়গা করে দিলো মালানকে, আর নতুন স্বপ্ন দেখানোর শুরু বোধহয় সেদিন থেকেই।

২৫ জুন,২০১৭ কুড়ি বিশের ফরম্যাটে অভিষেক লগ্নে প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা, আর কার্ডিফের সে ম্যাচেই মরকেল, মরিস, তাহিরদের ঠেঙিয়ে এলো ৭৮ রানের ঝকঝকে ইনিংস আর তার সাথে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচেই ম্যাচ সেরার স্বীকৃতি। টি-টোয়েন্টি অভিষেক লগ্ন রাঙিয়ে দেওয়ার পর প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচেও সুযোগ এসে গেল।

কিন্তু, বিশেষ সুবিধা করতে পারলেন না, যদিও বছরের শেষে অ্যাশেজ সিরিজে অনবদ্য সেঞ্চুরি করে তাক লাগিয়ে দিলেন। কিন্তু মালানের আসল প্রতিভা লুকিয়ে ছিল ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটেই। অস্ট্রেলিয়া – নিউজিল্যান্ডে হওয়া ২০১৮ টি-টোয়েন্টি সিরিজে দুর্দান্ত পারফরমেন্স দেখিয়েও মরগ্যানের টি-টোয়েন্টি ব্রিগেডে নিয়মিত হতে পারছিলেন না মালান।

বছর ঘুরতে অবস্থা বদলাতে শুরু করলো আবার সেই নিউজিল্যান্ড সফরেই, ৪৮ বলে শতরান হাঁকিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটকে জানান দিলেন তিনি থাকতেই এসেছেন। কিন্তু তখনও বোধহয় চমকের বেশ কিছুটা বাকি ছিল। ২০১৯ সালের শেষ লগ্ন থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নবীনতম ফরম্যাটে ইংরেজ ব্যাটিংকে রাঙিয়ে দেওয়ার দায়িত্বটা কাঁধে তুলে নিলেন মালানই।

চোখ জুড়ানো সব কাট আর পুল শটে দিনের পর দিন আছড়ে ফেলতে লাগলেন পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকাকে। জাম্পা, শাদাব, শামসিদের মত স্পিনারদের তুলে তুলে ফেলতে লাগলেন বাউন্ডারির বাইরে। সদ্য সমাপ্ত দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে অপরাজিত ৯৯ রানের অসাধারণ ইনিংসে এক রানের জন্য সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ ভুলিয়ে মালানের জন্য বড়দিনের উপহার হিসেবে এসে গেল টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ৱ্যাকিংয়ে বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যানের তকমা।

সবার অলক্ষ্যে যেন চুপিসাড়েই ফার্স্ট বয়ের সিংহাসনটা দখল করে ফেললেন মালান। বিশ্বের বেশ অনেকগুলো টি-টোয়েন্টি লিগেই খেলে ফেলা ও মাত্র ১৯টা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৫৩ গড়ে ৮৫৫ রান করা মালান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ক্রিকেট লিগের হটকেক এখনো হননি কেন সেটা কিন্তু একটা রহস্য।

আইপিএলে খেলার স্বপ্ন এখনো অধরাই থাকা মালানের জন্য আগামী আইপিএলের নিলামে কাড়াকাড়ি পড়বে না কে বলতে পারে। আর ২০১৬ সালের তিন এপ্রিল ইডেনের হতাশা ভুলিয়ে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপের মতো আসন্ন কুড়ি বিশের বিশ্বকাপেও ইংরেজদের জয়ধব্জা ওড়াতেও বদ্ধপরিকর মালান। ফার্স্ট বয়ের তকমা তো তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বুমরাহ, স্টার্ক, রাবাদা, রশিদরা তৈরী তো?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link