ভারতের মাটিতে অজিদের ইতিহাস বদলাবেন যারা

ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজ মানেই বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি। কিন্তু শেষ ৬ বছরে এই বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার পরিসংখ্যান বড্ড বিবর্ণ। এই সময়ের মধ্যে হওয়া তিন সিরিজের একটিতেও জিততে পারেনি অজিরা। অথচ তিন সিরিজের দুটিই হয়েছিল তাদের মাটিতে।

দুই বছর বাদে নাগপুর টেস্ট দিয়ে আবারো মাঠে ফিরছে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি। এবার কি তবে স্মিথ, কামিন্সদের দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভাগ্য বদলাবে? পরিসংখ্যান অবশ্য ভিন্ন কথা বলছে। ভারতের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া সর্বশেষ সিরিজ জিতেছিল সেই ১৮ বছর আগে, ২০০৫ সালে। অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার সাম্প্রতিক ফর্ম ইতিহাস বদলানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। কাদের উপর ভর করে এবারের সিরিজটা অস্ট্রেলিয়া জিততে পারে, সেই আলোচনাই চলুন করা যাক।

  •  উসমান খাজা 

ক্যারিয়ারে দুর্দান্ত একটা সময় পার করছেন উসমান খাজা। ২০১৯ সালের পর দুই বছর দলের বাইরে ছিলেন। কিন্তু গত বছরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিডনি টেস্ট দিয়ে দারুণ এক প্রত্যাবর্তন দেখিয়েছিলেন তিনি। দলে ফিরেই এক টেস্টে দুই সেঞ্চুরি। এরপর পুরো বছর জুড়েই ব্যাট হাতে রান বন্যা বইয়ে দিয়েছেন।

৬৭.৮০ গড়ে ২০২২ সালে করেছেন ১০৮০ রান। গত বছরের ফর্ম ধরে রেখেছেন এ বছরেও। ২০২৩ সালে একটি মাত্রই টেস্ট খেলেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সে ম্যাচে ১৯৫ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।

ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ৫৬ টি টেস্ট খেললেও এখন পর্যন্ত ভারতের মাটিতে কোনো টেস্ট খেলেনি উসমান খাজা। তবে সাম্প্রতিক ফর্ম বলছে, কন্ডিশন অচেনা হলেও জাদেজা, অশ্বিনদের পরীক্ষা নিতে পারেন অজি এই ওপেনার।

  • মার্নাস লাবুশেন

আইসিসি’র র‍্যাংকিংয়ে এই মুহূর্তে নাম্বার ওয়ান টেস্ট ব্যাটার। তবে উসমান খাজার মত লাবুশেনের জন্যও ভারতের মাটি অচেনা। ক্যারিয়ারে কখনোই ভারতে টেস্ট খেলেননি তিনি।

উপমহাদেশের উইকেটে যে ৭টি ম্যাচ খেলেছেন তাতে তাঁর পরিসংখ্যান ছিল বেশ গড়পড়তা। অস্ট্রেলিয়ার উইকেটে যেখানে তিনি ৭০.৫০ গড়ে ব্যাটিং করেছেন, সেখানে উপমহাদেশের উইকেটে তাঁর ব্যাটিং গড় মাত্র ৩৪.৬৪! তবে ভারতীয় স্পিনার রবিচন্দ্রন আশ্বিনের বিপক্ষে তাঁর ব্যাটিংয়ের চিত্রটা আবার বেশ ভাল। ক্যারিয়ারে দুইবার আউট হয়েছেন বটে। কিন্তু রান করেছেন প্রায় ৫০ গড়ে।

  • স্টিভেন স্মিথ

ল্যাবুশানের পর আইসিসি’র দ্বিতীয় সেরা টেস্ট ব্যাটার স্টিভ স্মিথ। তবে পার্থক্যটা হচ্ছে, উপমহাদেশের উইকেট ল্যাবুশানেকে যতটা ভুগিয়েছে, ঠিক তেমনভাবেই স্মিথ নিজের আগ্রাসন দেখিয়েছেন এ সব উইকেটে। ভারতের মাটিতে এখন পর্যন্ত ৩ সেঞ্চুরিতে ৬০ গড়ে করেছেন ৬৬০ রান।

একই সাথে, সাম্প্রতিক ফর্মও তাঁর হয়ে কথা বলছে। গত নভেম্বরে হওয়া ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ থেকে ৯২.৬২ গড়ে ব্যাটিং করছেন। এর মাঝে হাঁকিয়েছেন দুটি সেঞ্চুরি এবং ডাবল সেঞ্চুরি।

এমনিতে বোর্ডার গাভাস্কার ট্রফিতে বরাবরই সফল স্মিথ। এখন পর্যন্ত ভারতের বিপক্ষে ৮ সেঞ্চুরিতে ৭২.৫৮ গড়ে রান করেছেন ১৭৪২। স্পিনটা দুর্দান্ত খেলেন তিনি। তাই ভারতের মাটিতে এই সিরিজে আশ্বিন, জাদেজাদের জন্য প্রধান পরীক্ষার নাম হতে পারেন স্মিথ।

  • ট্রাভিস হেড  

শেষ এক বছরে লাল বলের ক্রিকেটে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন ট্রাভিস হেড। দলের বিপদের সময়ে মিডল অর্ডারে হাল ধরতে পারেন তিনি। গত বছরে ২ সেঞ্চুরি আর ৩ হাফসেঞ্চুরিতে ৫০.৩৮ গড়ে করেছেন ৬৫৫ রান।

তবে ভারতের মাটিতে এর আগে কখনোই কোনো টেস্ট ম্যাচ খেলা হয়নি ট্রাভিস হেডের। আর এখানেই চোখ রাঙানি দিচ্ছে ভিন্ন এক পরিসংখ্যানে। অস্ট্রেলিয়ার বাইরে বলার মত তেমন কিছুই করতে পারেননি। এশিয়ার উইকেটে খেলা ৭ টেস্টে মাত্র একটি অর্ধশতক পেয়েছেন। গড়টাও বেশ বিব্রতকর।  ত্রিশেরও কম। এখন দেখার পালা, ভারতের উইকেটে এই চিত্রটা ঠিক কতটা পাল্টাতে পারেন তিনি।

  • নাথান লিঁও

ভারতের মাটিতেই ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেছিলেন নাথান লিঁও। ২০১৭ সালে ব্যাঙ্গালুরুতে হওয়া সে টেস্টে ৫০ রানে নিয়েছিলেন ৮ উইকেট। টেস্ট ক্যারিয়ারে ইংল্যান্ডের পর এই ভারতের বিপক্ষেই সর্বোচ্চ উইকেট নিয়েছেন। ভারতের বিপক্ষে খেলা ২২ টেস্টে নিয়েছেন ৯৪ টি উইকেট। যার মধ্যে রয়েছে ৭ বার ফাইফার।

ভারতের মাটিতেও লায়নের পরিসংখ্যান বেশ উজ্জ্বল। ৭ ম্যাচে নিয়েছেন ৩৪ টি উইকেট। ভারতের কন্ডিশনে তাই নতুন করে খাপ খাইয়ে নিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয় লায়নের। এ বারের সিরিজে নিশ্চিতভাবেই তাঁর অফস্পিন সমস্যার কারণ হতে পারে বিরাট-রোহিতদের জন্য।

  • অ্যাস্টন আগার 

এই তালিকায় অ্যাস্টন আগারের নামটা কিছু বিস্ময় জোগাতেই পারে। ক্যারিয়ারে ৫ টেস্টে মাত্র ৯ টা উইকেট নিয়েছেন। তবে তাঁকে  দলভুক্ত করা হয়েছে অন্য কথা ভেবে। কন্ডিশন বিবেচনায়, ভারতের উইকেটে বাঁ-হাতি বোলাররা বেশ সুবিধা পান। ২০১২ সালের এক সিরিজে এই ভারতের মাটিতেই ইংলিশ স্পিনার মন্টি পানেসার বলতে গেলে একাই ভারতীয় ব্যাটারদের ধসিয়ে দিয়েছিলেন।

এ ছাড়া ২০১৭ সালে ভারতে এসে অস্ট্রেলিয়া যে একমাত্র ম্যাচটি জিতেছিল তাতে বাঁ-হাতি স্পিনার স্টিভ ও কিফ দুই ইনিংস মিলিয়ে একাই নিয়েছিলেন ১২ উইকেট। তাই সেসব মুহূর্তের পুনরাবৃত্তির আশায় অ্যাস্টন আগারকে দলে নেওয়া হয়েছে। আর ক্যারিয়ারে যে ৯ টা উইকেট নিয়েছেন তার ৭ টাই পেয়েছেন বাংলাদেশের উইকেটে। অর্থাৎ বুঝাই যাচ্ছে, স্পিনিং কন্ডিশনে সুযোগ পেলে  ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন এই বাঁ-হাতি স্পিনার।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link