এক ফ্রেমে ৭৪৪ রান!

অনুশীলন শেষে দুজনে একই ফ্রেমে বন্দী হলেন। যে ফ্রেমে আছে এবারের বিপিএলে সাতশোরও বেশি রান। দুজনই আছেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকের তালিকায়। এবারের বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সের সাফল্যের অন্যতম কারণও এই ফ্রেমটাই। এই ফ্রেমে বন্দী হওয়া দুজন ব্যাটসম্যান। নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) এবারের আসরে এখন পর্যন্ত সাড়ে তিনশো রান করতে পেরেছেন মাত্র দুজন ব্যাটসম্যান। তাঁদের একজন নাজমুল হোসেন শান্ত, আরেকজন তৌহিদ হৃদয়। এই দুজনই এবার সিলেট স্ট্রাইকার্সের প্রাণভোমরা, বিপিএলেরও অন্যতম আকর্ষণ।

এবারের বিপিএলের সবচেয়ে বড় পাওয়া সিলেটের ব্যাটার তৌহিদ হৃদয়। নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করেছেন এই ব্যাটার। লাল বলের ক্রিকেটের জন্য তাঁকে সম্ভাবনাময় ভাবা হত। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতার পর থেকেই ছিলেন বিসিবির তত্ববধানে। দীর্ঘদিন এইচপির ক্যাম্প করেছেন। কঠিন ট্রেনিং এর মাধ্যমে গড়ে তোলা হচ্ছিল এই ক্রিকেটারকে।

তবে বিপিএলে হৃদয় নিজেকে প্রমাণ করলেন নতুন করে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও যে হৃদয় এতটা কার্যকর হতে পারেন সেটা জানা ছিল না কারোই। আর সেই অবিশ্বাস্য কাজটাই করে দেখালেন এই ব্যাটার। সিলেট স্ট্রাইকার্সকে একা হাতে ম্যাচ জেতাচ্ছেন সেই শুরু থেকেই।

মাঝে ইনজুরির কারণে থমকে যেতে হয়েছিল। মনে হচ্ছিল, এই বাঁধা কাটিয়ে তিনি বোধহয় আর শুরুর ছন্দটা ধরে রাখতে পারবেন না। তবে সবাইকে আরেকবার ভুল প্রমাণ করলেন হৃদয়। ইনজুরি থেকে ফিরে এসে যেন আরো আগ্রাসী হয়ে উঠেছেন এই ব্যাটার।

মাত্র নয় ম্যাচ খেলেই তিনি এই মুহূর্তে বিপিএলের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। এখন পর্যন্ত ৫৩.২৮ গড়ে করেছেন ৩৭৩ রান। সেরা পাঁচে থাকা বাকি চারজনই তাঁর থেকে বেশি ম্যাচ খেলেছেন। তবুও সবার উপরে জ্বল জ্বল করছে হ্রদয়ের নামটা। অবাক করে তাঁর স্ট্রাইকরেটটাও। এবারের বিপিএলে তিনি ব্যাট চালাচ্ছেন প্রায় দেড়শো স্ট্রাইকরেটে। পাঁচটি অর্ধশতকের পাশাপাশি সর্বোচ্চ ৮৫ রানের ইনিংসও এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে।

বিপিএলে তাঁর এমন পারফর্মেন্স নজর কেড়েছে সবার। শোনা যায় জাতীয় নির্বাচকরা তাঁকে নিয়ে নতুন করে ভাবছেন। সব ঠিক থাকলে হয়তো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দলেও ডাক পেতে পারেন হৃদয়। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এমন ধারবাহিক ও আগ্রাসী ব্যাটারকেই তো খুঁজছে বাংলাদেশ।

ওদিকে বিপিএলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক হিসেবে আছেন সিলেটেরই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রায় প্রতি ম্যাচেই দলটাকে শক্ত ভিত গড়ে দিচ্ছেন তিনি। ১১ ম্যাচ খেলে শান্ত এখন পর্যন্ত করেছেন ৩৭১ রান। সব সমালোচনা, ট্রলের জবাব এবার যেন তিনি মাঠেই দিতে চান। এই বিপিএলে তিনি ব্যাটিং করছেন প্রায় ৪২ গড়ে।

সিলেট প্রায় প্রতি ম্যাচেই দারুণ শুরু পাচ্ছে এই ওপেনারের কারণেই। এমন দুরন্ত ফর্মে থাকা শান্তকে নিয়েও অবশ্য কিছু সমালোচনা রয়েছে। কিছু কিছু ম্যাচে তিনি একটু বেশি ধীরগতিতে খেলছেন। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে যা ভোগাতে পারে দলকে। যেমন এখন পর্যন্ত বিপিএলে তিনি ব্যাটিং করছেন মাত্র ১১১.৪১ স্ট্রাইকরেটে। ফলে এই জায়গাটায় তাঁর কাজের উন্নতি করার জায়গা আছে অবশ্যই। তবুও যেমন ধারবাহিক ভাবে শান্ত রান করে যাচ্ছেন তাঁর প্রশংসা করতে হয়।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link