চট্টগ্রামে শেষ ওয়ানডেতে সাকিব আল হাসানময় এক ম্যাচে সান্ত্বনার এক জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে নজর কেড়েছে শেষ ম্যাচের আগে সেন্টার পিচে সাকিব আল হাসান এবং তামিম ইকবালের কথোপকথন।
শুরুতে কেবল কোচ এবং অধিনায়ক থাকলেও একপর্যায়ে তামিম নিজেই ডেকে নেন এই অলরাউন্ডারকে। আপাত দৃষ্টিতে নিরীহদর্শন এক ঘটনা মনে হলেও গত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহে এই দৃশ্যটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে ভীষণ জরুরি।
ইংল্যান্ড সিরিজের ঠিক আগমূহুর্তে রীতিমতো বোমা ফাটান বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। এক সংবাদ সম্মেলনে জানান সাকিব এবং তামিমের সম্পর্কে ফাটলের ফলে বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমের পরিবেশ হয়ে উঠেছে অস্বাস্থ্যকর। এক সময়ের দুই বন্ধু নাকি এখন আর নিজেদের মধ্যে কথা বলেন না।
গত কয়েকদিনে তাই এই নিয়েই আলোচনায় মেতে ছিল গোটা ক্রিকেটপাড়া। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দুই ওয়ানডের হার সেই পালে হাওয়া লাগিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে খুব একটা না আসায় সাকিবকে তেমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে না হলেও তামিম সেই সুযোগটা পাননি। তাঁকে বারবারই জর্জরিত হতে হয়েছে সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণে।
তামিম অবশ্য নিজে উড়িয়ে দেননি সম্পর্কে ফাটলের ঘটনা। বরং দাবি করেছেন মাঠের বাইরের সম্পর্কটা যেমনই হোক না কেন, মাঠের ভেতরে তাঁরা বাংলাদেশ অন্ত:প্রাণ।
নিজেদের সেরাটা দিয়েই তাঁরা লড়ে যান, বাইরের সম্পর্ক কোনো প্রভাব ফেলবে না। তাছাড়া একই দলের দুই ক্রিকেটারের কথা না বলার ঘটনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আজকে নতুন নয়।
মাঠের ক্রিকেটেও দেখা যাচ্ছে তাঁর প্রতিফলন। মিরপুরে প্রথম ওয়ানডের আগে ব্যাটিং অনুশীলনে একত্রে ব্যাটিংয়ের সময় নেটে দুজনকে কথা বলতে দেখা যায়। তৃতীয় ওয়ানডের আগেও তাই শুরুতে কোচ এবং কিউরেটরদের সাথে কথা বললেও একপর্যায়ে সাকিবের মতামত নিতে ডেকে নেন অধিনায়ক তামিম।
চট্টগ্রামে এদিন সাকিব, তামিম এবং কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহের সাথে পিচ দেখছিলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু এবং হাবিবুর বাশার সুমন। প্রধান নির্বাচকের মতে ক্রিকেটীয় ব্যাপারে সাকিব এবং তামিমের সম্পর্ক আগের মতোই আছে, দুজনেই এ ব্যাপারে পেশাদার।
নান্নু বলেন, ‘দুজনেই উইকেটের ব্যাপারে নিজেদের মতামত জানাচ্ছিল এবং তাঁদের মাঝে সবকিছু ঠিকই আছে। আমি যেটা মনে করি সেটা হলো তাঁরা ম্যাচ পরিকল্পনার বিষয়ে নিজেদের মতামত দিচ্ছিল এবং সিরিজে ভালো করতে যা যা করা প্রয়োজন সেসব নিয়েই আলাপ করছিল। আমাদের ভালো করার জন্য এটাই যথেষ্ট।’
তিনি আরো বলেন, ‘তাঁরা দুজনেই পেশাদার এবং দলের প্রতি তাঁদের নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে দুজনেই সচেতন। এটাই আসলে সবচেয়ে জরুরি। সত্যি বলতে আমি কখনো এমনটা দেখিনি দলের প্রয়োজনে মাঠে কিংবা মাঠের বাইরের পরিকল্পনায় কাউকে ডাকা হলে সে আসেনি। দলের ভালো করার জন্য এটাই সবচাইতে বেশি জরুরি।’
চট্টগ্রামে তৃতীয় ওয়ানডেতে মাঠের খেলাতেও ফুটে উঠেছে সেই দৃশ্য। দলীয় অধিনায়ক তামিমের নেতৃত্বে মাঠে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন অলরাউন্ডার সাকিব।
ব্যাট হাতে ৭১ বলে ৭৫ রান করে দলকে লড়াকু সংগ্রহ এনে দেয়ার পর বল হাতেও নিয়েছেন চার উইকেট। তাঁর অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ভর করেই জয়ে ফিরেছে টাইগাররা। আর ম্যাচ শেষে অধিনায়ক তামিমের কণ্ঠে ঝরেছে সাকিব-স্তুতি। চূড়ান্ত পেশাদারিত্ব তো একেই বলে।