একদিকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। আর অন্যদিকে, এই ফরম্যাটে উন্নতির সন্ধানে আটকে থাকা বাংলাদেশ। দুই দলের অসম ব্যবধান। তারপরও সিরিজের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে চমক দেখিয়েছিল বাংলাদেশ। সেটা যে কোনো ফ্লুক ছিল না, তার জন্য প্রয়োজন ছিল আরেকটি জয়। হয়েছেও তাই। চট্টগ্রাম থেকে মিরপুর, একই চিত্রের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে। ইংল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিয়েছে টাইগাররা।
মিরপুরের উইকেট মানেই স্পিনস্বর্গ। আর সেই স্পিনেই একদম নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছিল ইংলিশ ব্যাটারদের। টসে হেরে ব্যাট করতে নামা ইংল্যান্ডকে প্রথম ধাক্কাটা অবশ্য দিয়েছিল পেসাররাই। তাসকিন আহমেদের বলে পুল করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে হাসান মাহমুদের তালু-বন্দী হন ডেভিড মালান। ইংল্যান্ডের দুর্দশার শুরু সেখান থেকেই।
ইংল্যান্ডের হয়ে ইনিংস শুরু করা আরেক ওপেনার ফিল সল্টও তাঁর ইনিংসকে বড় করতে পারেননি। শুরু থেকেই আগ্রাসী ভূমিকায় খেলতে থাকা এ ইংলিশ ব্যাটার ব্যক্তিগত ২৫ রানে ধরা দেন সাকিবের কাছে। এরপর ক্রিজে এসে আগের ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরিয়ান জশ বাটলারও ফিরে যান দ্রুতই। হাসান মাহমুদের দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে ফিরে যান তিনি।
ইংলিশ ব্যাটারদের জন্য এরপর যমদূত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। শুরুটা করেন মইন আলীকে আউট করে। এরপর একে একে তুলে নেন স্যাম কারান, ক্রিস ওকস আর ক্রিজ জর্ডানের উইকেট। ৪ ওভারের বোলিং স্পেলে মাত্র ১২ রান খরচায় একাই নেন ৪ উইকেট। মূলত মিরাজের কিপ্টে বোলিংয়েই ইংল্যান্ডের রান থেমে যায়। শেষ পর্যন্ত সবকটি উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ইংলিশরা জমা করে ১১৭ রান।
১১৮ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে শুরুটা মোটেই ভাল হয়নি বাংলাদেশের। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই সাজঘরে ফিরে যান লিটন দাস। লিটন দাসের মতো আরেক ওপেনার রনি তালুকদারও নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি। ব্যক্তিগত ৯ রানে জোফরা আর্চারের শিকার হন তিনি।
ইনিংসের শুরুতেই দুই ওপেনারের উইকেট হারিয়ে তখন কিছুটা চাপে বাংলাদেশ। যদিও আগের ম্যাচের মতোই শান্ত আর তৌহিদ হৃদয় লক্ষ্যের পথেই রয়েসয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে দুজনের ২৯ রানের জুটি ভাঙ্গে অভিষিক্ত স্পিনার রেহান আহমেদের বলে। ব্যক্তিগত ১৭ রান করে সাজঘরে ফিরে যান তৌহিদ হৃদয়।
একদিকে ৬ এর নিচে রানরেটে ৫৬ রানেই ৩ উইকেটের পতন। অন্যদিকে, একই সাথে বোলিং প্রান্ত থেকে আদিল রশিদ আর রেহান, দুই লেগির ভীতি জাগানিয়া স্পিন আক্রমণ। বাংলাদেশের ম্যাচ জয়ের আকাশে মেঘ জমেছিল ঠিক তখনই। তবে সে মেঘ সরে যায় শান্ত আর মিরাজের ব্যাটিং দৃঢ়তায়।
সাময়িক চাপ সামলে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন এ দুই ব্যাটার। আর রানরেটের ধাক্কা নিমেষেই উড়িয়ে দেন মিরাজ। আদিল রশিদ আর মইন আলীকে দুই ছক্কা মেরে ম্যাচ একদম হাতের মুঠোয় নিয়ে আনেন তিনি। যদিও লক্ষ্য থেকে ২১ রান দূরে থাকতে আউট হয়ে যান তিনি। মিরাজের পর সাকিবও ক্রিজে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ফেরেন শূন্য রানে। সাকিবের পথ ধরে আফিফও আর্চারে বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান মাত্র ২ রান করে।
মিরাজের কল্যাণে সহজ হয়ে যাওয়া ম্যাচটা তখন আবারো জটিলতার পথে এগোচ্ছিল। তবে উইকেটে তখনও টিকে ছিলেন শান্ত। আর সেই শান্তর ব্যাটে চেপেই ৭ বল হাতে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। শান্ত শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৪৬ রানে।
এ জয়ের ফলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিল বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে থ্রি লায়ন্সদের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো কোনো ফরম্যাটে সিরিজ জিতলো টাইগাররা। একই সাথে, বিশ ওভারের ক্রিকেটে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সাথে মুখোমুখি লড়াইয়ে ২-১ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।