‘বাংলাওয়াশ’ বহুদিন বাদে হয়ত এই শব্দটার সাথে মোলাকাত। টি-টোয়েন্টি সিরিজের হিসেবে সেটা প্রায় এক যুগের অপেক্ষা। তবে শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টিতে হোয়াইটওয়াশ করতে পারবে, এ কথা তো রীতিমত ছিল কল্পনাতীত। তবে সেটা হয়েছে, প্রথমবারের মত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের পাশাপাশি তাদেরকে লজ্জার হোয়াইট ওয়াশ উপহার দিয়েছে টাইগাররা।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হোয়াইট ওয়াশ নতুন কিছু নয়। তবে পার্থক্য হল, একটা সময় বাংলাদেশ এই হোয়াইট ওয়াশের শিকার হতো। তবে দিন বদলেছে, সেই সাথে বদলেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। এই বদলের হাওয়া লাগতে শুরু করেছে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও। দারুণ এক রেকর্ডে ভীষণ স্বস্তি যেন বাংলার আকাশে-বাতাসে।
ইংল্যান্ড বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তি। সাদা বলের দুইটি বিশ্বকাপের শিরোপা বর্তমানে তাদের দখলে। গেল বছরই দ্বিতীয় বারের মত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপায় হাত রেখেছিল ইংলিশরা। এবারের বাংলাদেশ সিরিজে আরও এক দ্বিতীয়ের স্বাদ পেল ইংল্যান্ড। ইংলিশদের ক্রিকেট ইতিহাসে, বাংলাদেশ দ্বিতীয় বারের মত টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করতে পেরেছে। এর আগের ঘটনাটা অবশ্য এক দশক আগের।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে যথারীতি দাপট দেখিয়েছে ইংল্যান্ড। সেই দাপটটা টি-টোয়েন্টি সিরিজে অব্যাহত থাকাই ছিল প্রত্যাশিত। তবে সেই স্বাভাবিক ঘটনাটা পালটে ফেলে সাকিব আল হাসানের দল। ব্যাট, বল আর ফিল্ডিং তিন ইউনিটেই ইংলিশদের বাজিমাত করেছে টাইগাররা। সবচেয়ে দূর্বল ফরম্যাটটায় ধবলধোলাই করেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের।
প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই বাংলাদেশের বোলাররা দারুণ করেছেন। তবে ব্যাট হাতে দূর্দান্ত ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সিরিজ সেরার পুরষ্কারটাও উঠেছে তাঁর হাতে। চট্টগ্রাম থেকে মিরপুর, মাঠ বদলেছে, বদলায়নি ইংল্যান্ডের ভাগ্য। এর আগে টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে কেবল জিম্বাবুয়েকেই টি-টোয়েন্টিতে হোয়াইট ওয়াশ করতে পেরেছিল বাংলাদেশ।
দীর্ঘ একটা বিরতির পর এবার পরাশক্তিদের নাকানিচুবানি খাইয়েছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড এমন লজ্জার সম্মুখীন হয়েছিল শেষবার ২০১৩ সালের শেষ দিকে। সেবারও ভিনদেশে এমন আতিথিয়েতার পরিবর্তের লজ্জার মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড। সেবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ধবলধোলাই হয়েছিল ইংল্যান্ড।
সেই সিরিজে পাত্তাই পায়নি ইংলিশরা। প্রথম ম্যাচটা তাঁরা হেরেছিল ১৩ রানের ব্যবধানে। পরের দুই ম্যাচে হারের ব্যবধান স্রেফ বড় হয়েছে। দ্বিতীয় ম্যাচে আট উইকেটে হারার পর, শেষ ম্যাচটায় ৮৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের মধ্যকার দ্বৈরথটা তাও আবার বহুদিনের।
কিন্তু বাংলাদেশের বিপক্ষে এই সিরিজ সহ ইংল্যান্ড টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে মোটে চারটি। তাতেই বাংলাদেশের পাল্লা ভারী। তাছাড়া পূর্ণ শক্তির একটা দল নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চয়ই প্রচণ্ড দৃষ্টিকটু। পরিস্থিতি আরও একটু বেগতিক করছে সদ্য জেতা বিশ্বকাপ। তবে এই কথা বলার সুযোগ নেই যে, নিজেদের ভুলেই বাংলাওয়াশ হয়েছে ইংলিশরা।
কেনানা প্রতিটা ম্যাচেই বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা দাপট দেখিয়েছে। তিনটি ইউনিটে ইংল্যান্ডের থেকে ভাল খেলেই জিতেছে বাংলাদেশ। মাঝারি মানের রান যেমন ডিফেন্ড করেছে ঠিক তেমনি লো-স্কোরিং ম্যাচেও বাংলাদেশের ব্যাটাররা দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। এই সিরিজ দুই দলই একটা লম্বা সময় ধরে মনে রাখবে। ইংল্যান্ডের জন্যে স্মৃতিটা তিক্ত হলেও বাংলাদেশের জন্যে তা ভীষণ মধুর।