ইংল্যান্ডের হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ। ডেভিড মালান ও জস বাটলার দুজনই তখন সেট। অথচ সেই ম্যাচই বের করে আনলেন তিনি। মুস্তাফিজুর রহমানের একটা ওভারে বদলে গেল সবকিছু। উড়তে থাকা ইংল্যান্ড ধাক্কা খেল আর বাংলাদেশ ফিরে পেল আত্মবিশ্বাস। মুস্তাফিজ আরেকবার প্রমাণ করলেন তিনি এখনো ফুরিয়ে যাননি।
১৩ ওভারের খেলা শেষে ইংল্যান্ড স্কোর বোর্ডে জমা করেছে ঠিক ১০০ রান। উইকেট হারিয়েছে মাত্র একটা। ডেভিড মালান ও জস বাটলার দুজনই ইংল্যান্ডকে নিয়ে যাচ্ছেন সহজ জয়ের দিকে। একপ্রান্তে মালান ৪৭ বল থেকে করেছেন ৫৩ রান। আরেকপ্রান্তে বাটলারের ব্যাট থেকে এসেছে ৩১ বলে ৪০ রান। দুজনে মিলে গড়েছেন ৯৫ রানের বিশাল জুটি।
জয়ের জন্য শেষ সাত ওভারে প্রয়োজন মাত্র ৫৯ রান। এমন অবস্থায় নিজের সেরা বোলারকেই আনলেন সাকিব আল হাসান। নিজের প্রথম দুই ওভারে মুস্তাফিজ খরচ করেছিলেন মাত্র ৭ রান। আর নিজের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই ফেরালেন ডেভিড মালানকে। শর্ট লেন্থে পিচ করা বলটা মালানের ব্যাট ছুঁয়ে চলে গেল লিটনের গ্লাভসে।
এরপরের বলেই ফিরলেন জস বাটলারও। এবার অবশ্য পুরো কৃতিত্ব মেহেদী হাসান মিরাজের। ম্যাচের অন্যতম টার্নিং পয়েন্টও এটিই। বলটা আলতো করে ছুঁয়ে দ্রুত একটা সিঙ্গেল নেয়ার চেষ্টা ছিল। তবে মিরাজ যেন হঠাতই বাজপাখি হয়ে গেলেন।
বলটা ধরেই সরাসরি থ্রো করলেন স্ট্যাম্পে। ব্যাস, তাতেই রান আউট হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরতে হল ভয়ংকর হয়ে ওঠা বাটলারকে। পরপর দুই বলে মালান ও বাটলার আউট হওয়াতেই আবার ম্যাচের লাগাম ফিরে পায় বাংলাদেশ। হারতে থাকা ম্যাচে আবার আসে নিয়ন্ত্রণ।
সেই ওভারে মুস্তাফিজ খরচ করেছিলেন মাত্র দুই রান। মুস্তাফিজ নিজের খেল দেখিয়েছেন ইনিংসের ১৮ তম ওভারেও। শেষ তিন ওভারেও ভালো ভাবেই ম্যাচে ছিল ইংল্যান্ড। জিততে হল করতে হত ৩৬ রান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে খুব কঠিন কোন সমীকরণ নয়। তবে ডেথ ওভারে মুস্তাফিজের বল সামলানো তো আর সহজ কথা নয়।
ইনিংসের আঠারো তম ওভার ও নিজের শেষ ওভারে ফিজ খরচ করলেন মাত্র পাঁচ রান। আর ওই ওভারেই মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আরেকটি জয়। মুস্তাফিজ শেষ পর্যন্ত চার ওভার বোলিং করে খরচ ক্রেছেন ১৪ রান। উইকেট পেয়েছেন একটা।
চাপের মুখে তাঁর নিখুঁত বোলিং বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে দিয়েছে বহুবার। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্যাটারদের রান করতে না দেয়ার ক্ষমতাটাই তাঁকে করেছে অনন্য। অন্তত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই কাজটা তারচেয়ে ভালো আর কেউই করতে পারেনা।
যদিও তাঁর ফর্ম নিয়ে তর্ক-বিতর্কের শেষ নেই। সেসব যে একেবারেই অযৌক্তিক তাও নয়। বিশেষ করে ওয়ানডে ফরম্যাটে তাঁর ধার কমেছে অনেকটাই। দশ ওভার করতে তিনি প্রস্তুত না এমন আলোচনাও হয় প্রায়ই।
তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চারটা ওভার করে দেয়ার জন্য তিনি এখনো সেরাদের একজন। যার প্রমাণ পাওয়া গেল আজকের ম্যাচটাতেও। শেষ দুই ওভারে যিনি খরচ করেছেন মাত্র সাত রান। সাথে ডেভিড মালানের উইকেট। বাংলাদেশকে ম্যাচ জেতানোর জন্য এরচেয়ে বেশি আর কীই বা করতে পারতেন মুস্তাফিজ।