নানা নতুনত্বের কেতন উড়িয়ে শুরু হয়েছে এবারের আইপিএল। টুর্নামেন্টকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে চেষ্টার কমতি রাখেননি আয়োজক কর্তৃপক্ষ। তবে মাঠের খেলাতে চেন্নাইকে ব্যাটিং বিপর্যয় থেকে টেনে তুলেছেন তাঁদের পুরনো সেনানী রুতুরাজ গায়কড়ই। ৯২ রানের মুগ্ধতা জাগানিয়া এক ইনিংসে জানান দিলেন জাতীয় দলে ফেরার দৌড়ে তিনি টিকে আছেন ভালোভাবেই।
আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে এদিন বর্তমান চ্যাম্পিয়ন গুজরাট টাইটান্সের মুখোমুখি হয়েছিল চারবারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংস। ম্যাচ শুরুর আগেই জানা গিয়েছিল শুরুতে পিচ থেকে সুবিধা পাবেন পেস বোলাররা। সেই সুবাদেই কিনা গুজরাটের অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া টসে জিতে নিদ্বিধায় বোলিংটাই বেছে নিলেন। মোহাম্মদ শামিও অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিলেন দারুণভাবে, তৃতীয় ওভারে ডেভন কনওয়ের স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলে।
কিন্তু, একপ্রান্তে রুতুরাজ গায়কড় ছিলেন অবিচল। অপর প্রান্তে সতীর্থদের আসা যাওয়ার মিছিলের মাঝেও দলকে টেনে নিয়ে গেছেন একা হাতে। রানের গতিটা কখনোই কমতে দেননি, বরং চাপটা প্রতিপক্ষের বোলারদের উপর ঠেলে দিয়েছেন। কখনো এক্সট্রা কাভারের উপর দিয়ে হার্দিককে টানা দুই ছক্কা হাঁকিয়েছেন, আবার আলজারি জোসেফকে স্বাগতম জানিয়েছেন লেগ সাইডে টানা চার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে। মোদ্দাকথা নজরকাড়া ব্যাটিংয়ের সব অনুসঙ্গই ছিল তাঁর ব্যাটিংয়ে।
তাঁর অনবদ্য ব্যাটিংয়ের সুবাদেই মাত্র নয় ওভারেই নব্বই রানে পৌঁছে যায় চেন্নাই। একটা পর্যায়ে মনে হচ্ছিল তাঁকে আউট করা বুঝি অসম্ভব, সেঞ্চুরি কেবলই সময়ের অপেক্ষা মাত্র। কিন্তু সেঞ্চুরি থেকে মাত্র আট রান দূরে থাকতে জোসেফের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই তারকা। তাঁর ৫০ বলে ৯২ রানের ইনিংসটি সাজানো ছিল চারটি চার এবং নয়টি ছক্কার মারে। তিনি একপ্রান্তে মারমুখী ব্যাটিং না করলে হয়তো ১৭৮ রানের লড়াকু সংগ্রহ পাওয়াও সম্ভব হতো না ধোনির দলের।
২০২১ মৌসুমে প্রথমবারের মতো আলোচনায় আসেন গায়কড়। সেবারে রান করলেও তাঁর ধীরগতির শুরু কিংবা ছক্কা হাঁকানোতে দুর্বলতার সুবাদে সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন। জাতীয় দলে সুযোগ পেলেও সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ফলে আইপিএল শুরুর আগে খানিকটা চাপে ছিলেন। এমনিতেই চেন্নাইয়ের গত মৌসুমটা ভালো কাটেনি, তাঁর উপর নিজের পারফরম্যান্সে উন্নতি আনার প্রচেষ্টা। কিন্তু মাঠে নামার পর সব চাপ যেন এক ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিলেন এই তারকা।
এদিন ইনিংসের শুরু থেকেই মারমুখী ছিলেন রুতুরাজ। ছক্কা হাঁকিয়ে ফিফটিতে পৌঁছান আকাশছোঁয়া ২১৭ স্ট্রাইকরেটে। ছক্কা হাঁকানোতেও কোনো আপোষ করেননি, চারটি চারের বিপরীতে ছয় মেরেছেন নয়টি। গায়ের জোর কিংবা বোলারের গতিতে নয়, বরং তাঁর প্রতিটি শটে ছিল নিখাদ মুগ্ধতা। প্রপার টাইমিং আর দুর্দান্ত ক্রিকেটীয় শটে বলকে মাঠ ছাড়া করেছেন বারবার। সমালোচকদের সব প্রশ্নের জবাব দিতেই যেন রুতুরাজের নিজেকে ভেঙে গড়া!
তবে তাঁর এমন দুর্দান্ত ইনিংস সত্ত্বেও বাকি ব্যাটারদের ব্যর্থতা এবং বোলারদের খাপছাড়া বোলিংয়ে হার দিয়েই টুর্নামেন্ট শুরু করতে হয়েছে চেন্নাইকে। তবে তরুণ এই ওপেনারের ব্যাটে রান দেখে দলটি সামনে দুদিনের প্রত্যাশা রাখতেই পারে।