ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ডের সাথে এক মাত্র টেস্ট ম্যাচের স্কোয়াড ঘোষণা হয়েছে ইতোমধ্যে। নানান জল্পনা কল্পনা ছাপিয়ে যেখানে সাকিব-লিটনকে রেখেই ঘোষনা হয়েছে স্কোয়াড। অর্থাৎ আইপিএলের জন্য অনাপত্তিপত্র নিয়ে বিসিবি বস নাজমুল হাসান পাপন তাঁর সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। নানা জায়গায় এবং ক্রিকেট প্রেমিদের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে। টেস্ট ক্রিকেটে অপেক্ষাকৃত নবীন দল আয়ারল্যান্ড। সেই দলের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে সাকিব- লিটনকে কি আইপিএলের জন্য ছাড় দেয়া যেত না?
৩১ মার্চ ফ্রাঞ্চাচাইজি ক্রিকেটের সবচেয়ে জাকজমকপূর্ণ টূর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শুরু হয়েছে। যেখানে এইবার বাংলাদেশের হয়ে সুযোগ পেয়েছে সাকিব আল হাসান, লিটন দাস ও মুস্তাফিজুর রহমান। মুস্তাফিজ টেস্ট দলের বিবেচনায় না থাকায় তাকে অনাপত্তি দেয়া হয়েছে। সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস বাংলাদেশ টেস্ট দলের চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়। সেখানে বোর্ডের কাছে তাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকে বিসিবির নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থেকে আন্তর্জাতিক ম্যাচের মাঝে তাদের ছাড়পত্র না দেয়াটা ভীষণ স্বাভাবিক বিষয়।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের অভিভাবক হিসাবে বিসিবি তাদের জায়গায় থেকে সঠিক সিধান্ত নিয়েছে। তবুও সমর্থকদের মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক। টেস্ট ক্রিকেটে অপেক্ষাকৃত দূর্বল আয়ারল্যান্ডের সাথে টেস্টে বিসিবি কি সাকিব-লিটনইকে অনাপত্তি পত্র দিলে কোন ক্ষতি হত কিনা! আয়ারল্যান্ডের সাথে একমাত্র টেস্ট ম্যাচ আইসিসির টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশও নয়।
প্রথমত, ওয়ানডেতে বাংলাদেশের অবস্থান শক্ত, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের নবজাগরনের দেখা মিলছে। তবে টেস্টে টাইগারদের অবস্থান তলানিতে। গুটি কয়েক জয় ছাড়া টেস্টের পারফর্মেন্সে আহামরি সাফল্য নেই। সেখানে আয়ারল্যান্ড বাংলাদেশের শক্তি বিচারে পিছনে থাকলে তাদেরকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।
কারণ খর্ব শক্তির আফগানিস্তানের কাছেও ঘরের মাঠে হারের লজ্জাজনক স্মৃতি রয়েছে বাংলাদেশের। সেখানে আয়ারল্যান্ডকে হালকাভাবে নেওয়ারটা নেহায়েত বোকামি। সে হিসাব করেই বিসিবি বাংলাদেশের সর্ব শক্তির দল নিয়ে আটঘাট বেধে নামছে মাঠে। টেস্ট দলে সাকিব বাংলাদেশের বড় একটা অংশ জুড়ে রয়েছেন। সাকিব বর্তমান বাংলাদেশ টেস্ট দলের কাপ্তান।
তাছাড়া সাকিবের মত কার্যকর একজন অলরাউন্ডার সব দলের চাহিদা। কোন বোর্ড তাঁর দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে আন্তর্জাতিক ম্যাচের সময় হুট করে ছুটি দিবে না তা অনুমেয়ই। এর মাঝেও সাকিব আল হাসান অনাপত্তিপত্র পেলে স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন জাগত, দলের ক্যাপ্টেন কে হবেন? সেখানে বিসিবির হাতে বিকল্প নেই বললেই চলে। কারণ অতীতে নানান সমালোচনা ও চাপের মুখে পড়ে দলের সিনিয়র ক্রিকেটাররা ক্যাপ্টেন্সি ছেড়েছেন।
মুমিনুল হক সৌরভও টেস্টে ক্যাপ্টেন হিসেবে বলার মত সাফল্য এনে দিতে ব্যর্থ। সেক্ষেত্রে মেহেদি হাসান মিরাজকে বাজিয়ে দেখা যেত। কিন্তু মিরাজের মত একজন খেলোয়াড়কে হুট করে জাতীয় দলের টেস্ট অধিনায়ক বানিয়ে দিলে চাপের মুখে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রবল।
বর্তমানে টেস্ট দলের সহ-অধিনায়কের পদটা বরাদ্দ রয়েছে লিটন দাসের নামে। লিটন দাসও মিরাজের মত এত বড় চাপ সামলে নিজের ব্যাটিং পারফর্মেন্স ধরে রাখতে পারবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়ে যায়। আর সাকিব অনাপত্তিপত্র পেলে লিটন কেন পাবে না এটি নিয়ে সমালোচনায় পড়তে হত বিসিবিকে।
মূলত বিসিবি সামগ্রিক দিক বিবেচনায় সব কিছু চিন্তা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিসিবি সাকিব-লিটনকে অনাপত্তি দিচ্ছে না বিষয়টা এমন নয়। আন্তর্জাতিক ম্যাচ থাকাকালীন সময় অনাপত্তি পত্র পাবেন না সেই সিদ্ধান্তে অটল বিসিবি। এটি আইপিএলের নিলামের সময়ও জানিয়ে দেয়া হয়েছিল সবাইকে। সকল সমালোচনা উপেক্ষা করে আগামী চার এপ্রিল থেকে মিরপুরে এক মাত্র টেস্টে সাকিবের নেতৃত্বে আয়ারল্যান্ডের মুখমুখি হবে বাংলাদেশ।