বিজয়ের রান ফোয়ারা চাপ বাড়াচ্ছে তামিমের

ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করাটাকে যেন ‘ডালভাত’ বানিয়ে ফেলেছেন এনামুল হক বিজয়। গত মৌসুমে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে লিস্ট ‘এ’ ফরম্যাটে বিশ্বরেকর্ড গড়ে করেছেন হাজারের বেশি রান। বিজয়ের সেই অতিমানবীয় পারফরম্যান্স উপেক্ষা করতে পারেননি নির্বাচকরাও। তবে এক সিরিজের পারফরম্যান্সেই আবারো বাদ পড়েন জাতীয় দল থেকে। তবে দমে যাননি বিজয়। এবারের প্রিমিয়ার লিগেও ছোটাচ্ছেন রান ফোয়ারা।

ঘরোয়া ক্রিকেটে মাঠে নামবেন আর রান করবেন, ব্যাপারটাকে অনেকটা নিয়মের মতই বানিয়ে ফেলেছেন বিজয়। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ কিংবা জাতীয় ক্রিকেট লিগ বা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) বিজয়ের ব্যাটে রানের ফোয়ারা চলতেই থাকে। তবে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ এলেই যেন রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন বিজয়। গত মৌসুমে যেখানে শেষ করেছেন, এবার সেখান থেকেই শুরু করলেন যেন।

বিজয়ের ইনিংস গুলোর দিকে একটু চোখ বোলালেই পাওয়া যাবে সেই প্রমাণ। ১২৩, ৫৪, ১৭, ৩৮,৮০, ১০৭, ১৫৩। সাত ম্যাচ খেলে দুই সেঞ্চুরি আর দুই ফিফটিতে ইতোমধ্যেই ৫৭২ রান করে ফেলেছেন বিজয়। গড়টা অবিশ্বাস্য ১১৪.৪। গত মৌসুমে নিজেরই করা বিশ্বরেকর্ড ভাঙার পথে আছেন ভালো ভাবেই।

শুধু যে রানই করছেন বিজয় এমনটা নয়। আধুনিক ওয়ানডে ক্রিকেটের চাহিদা মিটিয়ে ব্যাট করছেন এই ওপেনার। এই যেমন সর্বশেষ ইনিংসটার কথাই ধরা যাক। ১২৭ বলে ১৩ চার আর পাঁচ ছক্কা করেছেন ১৫৩ রান। ১২০ এর ওপর স্ট্রাইকরেটও সেটিই জানান দেয়। এই স্ট্রাইকরেট নিয়ে ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় সমালোচনা শুনতে হয়েছে বিজয়কে। সেই দূর্বলতা কাটাতে বিজয় যে কাজ করেছেন তার প্রমাণ রাখছেন ব্যাটিংয়েও।

২০১২ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকটা দুর্দান্ত হয়েছিল বিজয়ের। প্রথম ১৮ ওয়ানডেই করেছিলেন তিন সেঞ্চুরি। ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ইনজুরিতে পড়ার পর দলের বাইরে ছিলেন প্রায় তিন বছর। ২০১৮ সালে ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করে দলে সুযোগ পেলেও টানা সাত ওয়ানডে খেলে ব্যর্থ ছিলেন বিজয়। হাথুরুসিংহে প্রথম মেয়াদে বাংলাদেশের কোচ হিসেবে কাজ করার সময় কোচের গুডবুকেও ছিলেন না বিজয়।

বিজয়ের বিরুদ্ধে কোচের অভিযোগ ছিলো, নিজের জন্য খেলেন তিনি। অতিরিক্ত ডট বল খেলে অন্য ব্যাটারদের ওপর চাপ বাড়ানোর অভিযোগও ছিল তাঁর ওপর। তবে বিজয় কাটিয়ে উঠেছেন নিজের দূর্বলতা। গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সহস্রাধিক রান করে দলে ফেরার পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তাদের মাটিতে দুটি সত্তুরোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেন বিজয়। দুটি ইনিংসই ছিল ১০০ এর কাছাকাছি বা তার বেশি স্ট্রাইক রেটে।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পারফর্ম করলেও ভারতের বিপক্ষেই আর পারেননি। ফলে, পরের সিরিজেই দল থেকে বাদ পড়েন বিজয়। তবে আবারো যে জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়ছেন, তা বোঝা যাচ্ছে তাঁর পারফরম্যান্সে।

জাতীয় দলের ওপেনিং পজিশনে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন লিটন দাস। আরেক ওপেনার হলেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল যার ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ আবার প্রশ্নের মুখে বেশ কিছু সময় ধরে। আধুনিক ওয়ানডে ক্রিকেটের সাথে তামিমের ব্যাটিং মানায় কিনা সেটি নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। চান্দিকা হাতুরুসিংহে কোচ হয়ে আসার পর দলের খোলনলচেই পাল্টে ফেলেছেন।

আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের যে রেসিপি তিনি দলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাইছেন তার সাথে মানানসই ক্রিকেটারদেরই দলে রাখতে চাইবেন হাতুরু। সেই মানদণ্ডে না পড়লে অধিনায়কের ওপরও যে খড়গ নেমে আসতে পারে সেটি ভাবাও অসম্ভব কিছু নয়। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বিশ্রামের মোড়কে দল থেকে বাদ দেয়া কিংবা মুস্তাফিজুর রহমানকে একাদশ থেকে বাদ দেয়ার ঘটনাগুলো সেদিকেই সায় দিচ্ছে।

বিকেএসপিতে বিজয়ের বিরাট স্কোর গড়ার দিনেই মিরপুরে আরেকটিবার ব্যর্থ হলেন তামিম। হোক সেই ফরম্যাটটা ভিন্ন। প্রিমিয়ার লিগে বিজয়ের এমন আক্রমণাত্মক ব্যাটিং তাই কিছুটা হলেও চাপ বাড়াচ্ছে ব্যাটার তামিমের ওপর। একসময় কম স্ট্রাইক রেটে জন্য যিনি দলের বিবেচনার বাইরে ছিলেন সেই বিজয়ের আক্রমণাত্মক অ্যাপ্রোচ হাতুরুসিংহের মন এবার গলাতে পারে কিনা সেটিই দেখার বিষয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link