ডিআরএস = ডিসিশন রিভিউ সংকট!

ডিআরএস ব্যবহার শেখানোর জন্য কোচ নেবার প্রচলন এখনো চালু হয়নি বিশ্ব ক্রিকেটে। সেটির হয়তো প্রয়োজনও নেই৷ কিন্তু বাংলাদেশের যে অতিসত্তর এই কোচের প্রয়োজন তা যেন দিন দিন আরো বেশি করে বোঝা যাচ্ছে।

ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম বা ডিআরএস ব্যবহার শেখানোর জন্য কোচ নেবার প্রচলন এখনো চালু হয়নি বিশ্ব ক্রিকেটে। সেটির হয়তো প্রয়োজনও নেই৷ কিন্তু বাংলাদেশের যে অতিসত্তর এই কোচের প্রয়োজন তা যেন দিন দিন আরো বেশি করে বোঝা যাচ্ছে। তা না হলে এই রিভিউ নেবার ক্ষেত্রে বারবার কেনই বা এতটা অদক্ষতার পরিচয় দেবে বাংলাদেশ দল? আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টেও নিজেদের চিরায়ত সেই সমস্যার প্রমাণই দিলেন সাকিব-লিটনরা।

ডিআরএস ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশের সমস্যা নতুন কিছু নয়। কখন ডিআরএস নিতে হবে – সেটা বুঝতে পারা খুব জরুরি। কোভিড পরবর্তী ক্রিকেটে বাড়ানো হয়েছে ইনিংস প্রতি অসফল রিভিউ নেবার সুযোগ। তাই ডিআরএসের যথার্থ ব্যবহার যেকোনো দলের জন্যই ম্যাচের দিক নির্দেশক হতে পারে। আর এই দিক থেকে বরাবরই পিছিয়ে বাংলাদেশ।

মিরপুর টেস্টে যেন নিজেদের ডিআরএস ব্যবহারে ব্যর্থতা গুলোই চোখে আঙুল দিয়ে দেখালো বাংলাদেশ। টেস্টে প্রতি ইনিংসের জন্য বরাদ্দ থাকা তিনটি রিভিউই বাজে ভাবে খরচ করেছে বাংলাদেশ। ইনিংসের একাদশ ওভারে তাইজুলের বলে আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবির্নির বিরুদ্ধে কট বিহাইন্ডের আবেদনটিকে আপাতপক্ষে আবেদন করার জন্যই করা বলে মনে হচ্ছিলো। উইকেটের পেছনে থাকা লিটন দাস ছাড়া অন্য ফিল্ডাররা খুব একটা উৎসাহী ছিলেন না সেই আবেদনে।

স্ট্যাম্প মাইকেও কোনো আওয়াজ শোনা গেছে বলে মনে হয়নি। কিন্তু কি মনে করে সাকিব আল হাসান রিভিউটি নিয়ে নিলেন। রিভিউতে যাবার পর তৃতীয় আম্পায়ার আল্ট্রা এজ ব্যবহার না করেও হয়তো নট আউটের রায় দিতে পারতেন। ব্যাট ও বলের ফাঁকে স্পট দেখা যাচ্ছিলো দিনের আলো। নষ্ট হলো প্রথম রিভিউ।

পরের রিভিউটি নষ্ট করতেও বেশি সময় নিলো না বাংলাদেশ। ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। জোরালো লেগ বিফোরের আবেদন। খালি চোখেই বোঝা যাচ্ছিলো স্ট্যাম্প মিস করবে বলটি। তবুও কিছুক্ষন ভাবার পর রিভিউটা নিয়েই নিলেন সাকিব। তৃতীয় আম্পায়ার বল ট্র্যাকিংয়ে যাবার আগেই বোঝা যাচ্ছিলো এই রিভিউটিও নষ্ট হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের।

এরপরের রিভিউ নষ্ট হবার ঘটনাটা অবশ্য শেষ সেশনের। খালেদ আহমেদের বলটা মিডল স্ট্যাম্প বরাবর পিচ করে ব্যাট ঘেষে চলে গেলো উইকেট কিপার লিটন দাসের গ্লাভসে। কিপার আর বোলারের জোরালো আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলেও মূলত লিটন দাসের আত্মবিশ্বাসের ওপর ভরসা রেখে শেষ রিভিউটাও নিয়ে নিলেন সাকিব। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা গেলো বেশ বড় ব্যাবধানেই ব্যাট মিস করেছে বলটি। তিনটি রিভিউয়েরই অসফল প্রয়োগ করলো বাংলাদেশ।

এমন ঘটনা বাংলাদেশের জন্য নতুন নয়। নিশ্চিত আউটের সম্ভাবনায় রিভিউ না নেয়া কিংবা এমন অহেতুক রিভিউ নিয়ে রিভিউ নষ্ট করাটাকেই নিজেদের অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। বল ব্যাটারের ব্যাট স্পর্শ করে কিপারের তালুবন্দি হলেও অনেক সময় সেই আওয়াজই শুনতে পাননা বাংলাদেশের উইকেট রক্ষকরা। তাই নিশ্চিত উইকেট থেকে বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। অনেক সময় সেটির ফলে ম্যাচটাই বের হয়ে যায় হাতের মুঠো থেকে।

শুধু বোলিং ইনিংসেই নয়, ব্যাটিং ইনিংসেও এমন বাজে রিভিউ নেবার জন্য কুখ্যাতি আছে বাংলাদেশ ব্যাটারদের। নিশ্চিত ব্যাটে লেগেছে জেনেও আউট হওয়া ব্যাটার হরহামেশাই রিভিউ নষ্ট করে ফেরেন সাজঘরে। ফলে পরের দিকের ব্যাটারদের পড়তে হয় বিপদে। আবার বল স্ট্যাম্প মিস করবে বলে খালি চোখে মনে হলেও নন স্ট্রাইকে থাকা ব্যাটার রিভিউয়ের পরামর্শ দিতে পারেননা আউট হওয়া ব্যাটারকে।

রিভিউ ব্যবহারে এমন অদক্ষতায় বহু ম্যাচ হাতছাড়া করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ দল যে রিভিউ ব্যবহারে কাঁচা তা অনেকটা প্রমাণিত সত্যের মতই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। দীর্ঘদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ক্রিকেটাররাও নিয়মিতই ভুল করছেন রিভিউ ব্যবহারে। এই ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য দলের চেয়ে এখন যোজন যোজন পিছিয়ে বাংলাদেশ। তাই রিভিউ ব্যবহারে এমন ভুল কমানোর সমাধান কি হতে পারে তা এখনই ভাবা শুরু করা উচিত বাংলাদেশ।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...