বাংলাদেশে লেগ স্পিনার খুঁজে বেড়াচ্ছেন অখ্যাত পাকিস্তানি

যে আক্ষেপের একটা সমাধান ভাবা হচ্ছে রিশাদকে, সেই লেগ স্পিন দুর্দশার সুদিন কি রিশাদ পর্যন্তই থাকবে সীমাবদ্ধ?

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড খরতাপের মাঝে এক রত্তি বর্ষণ হয়ে আগমন ঘটেছে রিশাদ হোসেনের। বাংলাদেশ ক্রিকেটে বহুদিনের আক্ষেপ ঘোচাতে যেন তার আগমন ঘটেছে। তবে যে আক্ষেপের একটা সমাধান ভাবা হচ্ছে তাকে, সেই লেগ স্পিন দুর্দশার সুদিন কি রিশাদ পর্যন্তই থাকবে সীমাবদ্ধ? উত্তরটা হচ্ছে, সম্ভবত না।

কেননা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গেম ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম উদ্যোগ নিয়েছে দেশের আনাচে-কানাচে থেকে লেগ স্পিনার খুঁজে বের করবার। নিরবে-নিভৃতে সে কার্যক্রম চলেছে বিগত প্রায় আট মাস ধরে। প্রায় ৮০ জন লেগ স্পিনার খুঁজে বের করা হয়েছে ।

সে কাজটি যিনি করেছেন তিনিও একপ্রকার অখ্যাত। তাই সম্ভবত বাংলার গ্রামীণ জনপদে গিয়ে সম্ভাবনাময় লেগিদের বাছাই করতে সুবিধা হয়েছে তার। পাকিস্তানের শাহেদ মেহমুদ একেবারে লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে লেগ স্পিনারদের খুঁজে বের করবার কাজটা করে গেছেন।

অবহেলিত লেগস্পিনারদের মধ্য থেকে সম্ভাবনাময় ৮০ জন লেগ স্পিনারকে নিয়ে আগামী ২-৩ মে শুরু হতে পারে ক্যাম্প। এসব তথ্যই অবশ্য জানিয়েছেন বিসিবির গেম ডেভলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ সুজন। তিনিই প্রথম শাহেদ মেহমুদের নিরবে কাজ করে যাওয়ার বিষয়টি সামনে আনেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শাহেদ কখনোই খেলেননি। সুতরাং তার পরিচয় সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা নেই কারোই।

এমনকি তার ক্যারিয়ারের উজ্জ্বল দাগ কেটে যাওয়ার মত কোন অধ্যায়ও নেই। তবে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ লম্বা সময় খেলেছেন তিনি। এমনকি পারফরমও করেছেন ব্যাটে-বলে। অন্তত বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে একবিংশ শতাব্দীর শুরুর আগে পরে তিনি খেলেছেন। তার লেগ স্পিন সেসময় প্রসিদ্ধও ছিল।

খোদ খালেদ মাহমদু সুজনের সতীর্থও ছিলেন শাহেদ মেহমুদ। তাইতো সুজন জানতেন শাহেদের সামর্থ্য সম্পর্কে। তার নির্বাচনেই শাহেদ পেয়েছেন লেগ স্পিনার খোঁজার দায়িত্ব। তবে প্রশ্ন আসতে পারে, নামি-দামি কোন কোচ নিয়োগ না করে কেন শাহেদ মেহমুদকে দেওয়া হল দায়িত্ব? সে প্রশ্নের জবাবও দিয়েছেন সুজন।

দেশীয় এক গণমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘বড় বড় কোচদের অনেক বেতন দিতে হয়। বড় কোচরা এসে কেউ গ্রামে যাবে না। আমাদের প্রথম পরিকল্পনাই ছিল গ্রামে গ্রামে যেতে হবে। সেখানে অযত্নে, অবহেলায় পড়ে থাকা লেগিদের খুঁজে বের করে আনতে হবে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল মানেই হলো গ্রামের নিভৃত পল্লী। সেখানে গিয়ে ট্যালেন্ট হান্ট সহজ কাজ না। কোনো ভিনদেশি হাই-প্রোফাইল কোচ গ্রামে-গঞ্জে যাবেন না। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে তরুণদের খুঁজে বের করার কাজ করতে চাইবেন না।’

সে চিন্তাভাবনা থেকেই শাহেদ মেহমুদকে নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। ইতোমধ্যেই পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলা শাহেদের কাজে সন্তুষ্ট সংশ্লিষ্ট কর্তারা। তাছাড়া পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা তিনি বিলিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের মাঝেও। এশিয়া জয় করা যুবাদের সাথে চার মাস ক্যাম্প করেছিলেন শাহেদ।

নামের বিচারে তিনি কোন এক ধ্রুব আকাশ নন। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের নাড়ি-নক্ষত্র জানা সুজন যখন ভরসা করেছেন শাহেদের উপর, তখন ভাল কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা করাই যায়। সেই ৮০ জন থেকে হবে ২০। তারপর ছোট হয়ে হয়ত ৪-৫ জনের একটা লেগস্পিনিং পুল হবে। সেখান থেকে বিশ্ব পর্যায়ে ছড়ি ঘোড়াবেন স্বদেশী কেউ। সেদিনটির অপেক্ষা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...