বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে কাণ্ডজ্ঞানহীন বিসিবি!

বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের গণ্ডি পেরিয়েই সিংহভাগ ক্রিকেটারের পেশাদার ক্রিকেটের পথচলা শুরু হয়। বাংলাদেশের বর্তমান ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল এসেছেন এই বয়সভিত্তিক ক্রিকেট কাঠামোর ভিতর দিয়েই। সাকিব, মুশফিকও এই বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের ফসল। অর্থাৎ বাংলাদেশ ক্রিকেটের মূল ভিত্তিটা গড়ে উঠেছে এই বয়সভিত্তিক ক্রিকেট দিয়েই।

তবে, হতাশার ব্যাপার হচ্ছে, সেই বয়সভিত্তিক ক্রিকেটই এখন অনেকটা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। একদম নড়বড়ে কাঠামো যাকে বলে, ঠিক সেভাবেই এগিয়ে চলেছে এই পর্যায়ের ক্রিকেট। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের নির্বাচক প্যানেলে এতদিন প্রধান নির্বাচক পদ থাকলেও এখন সেই পদ আর নেই। কেন নেই, তার যৌক্তিক কোনো ব্যাখ্যাও নেই।

তার উপর এই নির্বাচক প্যানেলের ভবিষ্যতে পদায়ন হওয়ারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। অর্থাৎ বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে যারা কাজ করছেন তাঁরা লক্ষ্যহীন এক পথ পাড়ি দিচ্ছেন। আর এখানেই প্রশ্নের উদয় হয়, পদায়নের নিশ্চয়তা থাকলে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করার অনুপ্রেরণা পান তো নির্বাচকরা?

বয়সভিত্তিক নির্বাচক প্যানেলে এত দিন পর্যন্ত ছিলেন– হাসিবুল হোসেন শান্ত, হান্নান সরকার, সাজ্জাদুল ইসলাম শিপন ও এহসানুল হক সেজান। তবে  কাজের ব্যাপ্তি বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে দুইজন নির্বাচককে প্যানেলে যুক্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি মেহরাব হোসেন অপি আর সজল চৌধুরী এই প্যানেলে যুক্ত হয়েছেন।

কিন্তু এই নির্বাচক প্যানেল কত অবহেলায় পড়ে থাকে তা বুঝ যায়, সময়ের পরিক্রমায় এই প্যানেলের কোনো রদবদল না আসার ঘটনায়। এখান থেকে কেউ বাদও পড়েন না, আবার পদায়নও হয় না। এ ছাড়া, এই কাজের ধারায় জাতীয় দলের নির্বাচক প্যানেলেও কারো জায়গা পাওয়ার কথাও শোনা যায় না। সব মিলিয়ে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের নির্বাচক প্যানেল এক প্রকার ব্রাত্যই থেকে যায় অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য।

অবশ্য বিসিবি সূত্রে কয়েক মাস আগে জানা গিয়েছিল, জুনিয়র নির্বাচকদের থেকে প্রমোশন দিয়ে দুই জনকে জাতীয় দলের নির্বাচক প্যানেল যুক্ত করা হবে। কিন্তু সে প্রক্রিয়াও বেশিদূর এগোয়নি। বরং এমন কিছুর ঘোষণা পর্যন্তই আটকে ছিল দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস এর আগে আশার বাণীই অবশ্য শুনিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘বোর্ডে অনুমোদন হয়েছে জুনিয়রদের থেকে দুই জনকে নেবে। কোন দুই জনকে নেওয়া হবে, সেটা ঠিক হয়নি। আমরাও এই সিদ্ধান্ত কার্যকরের অপেক্ষায় আছি।’

বয়সভিত্তিক নির্বাচক প্যানেলে কেন প্রধান নির্বাচক নেই–  এমন প্রশ্নে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন বলেন, ‘এখানে দীর্ঘমেয়াদে খেলোয়াড় থাকে না। দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে তারা বয়সভিত্তিক দল থেকে চলে আসে। এই বিভাগের কাজ হলো অনেকটা অ্যাসাইনমেন্টভিত্তিক। বয়সভিত্তিক যে লিগ বা টুর্নামেন্ট হয় সেখানে নির্দিষ্ট একজন নির্বাচককে দায়িত্ব দেওয়া হয় খেলোয়াড় বাছাই করতে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলেও একজনকে মনোনয়ন করা হয়। এ কারণে নির্দিষ্ট করে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে প্রধান নির্বাচকের প্রয়োজন হয় না।’

তবে এমন যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে আবার সম্পূরক প্রশ্নও তৈরি হয়। জাতীয় দলে নতুন নির্বাচক নেওয়ার ক্ষেত্রে বরাবরই বিসিবি বেশ জটিলতার মধ্যে গিয়েছে। কিন্তু তাদের ভাষ্যমতে, জুনিয়র পর্যায়েই ভিন্ন ভিন্ন দলের জন্য নির্বাচক ঠিক করা আছে। তাহলে জাতীয় দলের ক্ষেত্রে নির্বাচক খুঁজতে এতো জটিলতা কিসে?

জুনিয়র পর্যায়ের নির্বাচকদের পদোন্নতির ধারা থাকলেই তো এই সমস্যা সহজেই নিরসন করা যেত। একই সাথে, পদোন্নতি থাকলে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে ভাল করার একটা তাগিদও অনুভব করত নির্বাচক। কারণ তাদের সামনে এখানে ভাল করলেই জাতীয় দলের নির্বাচক প্যানেলে যাওয়ার হাতছানি। কিন্তু এমন সহজ প্রক্রিয়াও যেন কাঠিন্যের আবহে ঢেকে রাখতে চাইছে বিসিবি। ফলত, নির্বাচকরা ভাল কাজ করার অনুপ্রেরণা আদৌ পাচ্ছেন কিনা, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link