একটা সময় তাকে নিয়ে বেশ চর্চা হত। বিভিন্ন বিশ্লেষণায় তাকে খুঁজে পাওয়া যেত। তাকে বাংলাদেশ ক্রিকেটে আক্ষেপ ঘোচানোর মাধ্যম হিসেবে বিবেচনাও করা হত। তবে তিনি প্রত্যাশার সবটুকু নিঙড়ে দিতে পারেননি। স্বাভাবিকভাবেই আজ তাই শামীম হোসেন পাটোয়ারি আলোচনার বাইরে।
শামীম হোসেন পাটোয়ারি, যুব বিশ্বকাপ জয়ী তরুণ ক্রিকেটার। সম্ভাবনার বিশাল দ্বার খুলে তিনি এসেছিলেন জাতীয় দলে। তবে সেই স্ফুলিঙ্গটায় বিস্ফোরণ ঘটেনি। নিজের সামর্থ্যের ঠিকঠাক প্রতিফলন তিনি ঘটাতে পারেননি। কিন্তু এটা ধারণা করা হয় যে- বড্ড দ্রুত তাকে জাতীয় দলের কঠিন দায়িত্ব কাঁধে তুলে দেওয়া হয়েছিল।
হ্যাঁ, তা অবশ্য একদিক থেকে ঠিক। বেশ তাড়াহুড়ো করে তাকে জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশের যে একজন হার্ড-হিটিং ফিনিশারের বড্ড বেশি প্রয়োজন ছিল। তাই হয়ত পরিণত হওয়ার সময়টুকু পাননি শামীম। তবে অভিষেকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আশার আলো দেখিয়েছিলেন তিনি।
আর ঠিক তখনই আলোচনার হট টপিকে পরিণত হন শামীম। সবাই তার সামর্থ্য আর সম্ভাবনার আলাদা আলাদা ছক কষতে শুরু করে। কিন্তু তরুণ এই ক্রিকেটার এত সব প্রত্যাশার চাপ সইতে পারলেন না। তাছাড়া দলের চাহিদা মিটিয়ে ব্যাটিংটাও ঠিকঠাক করতে পারছিলেন না তিনি। তাই হয়ত খানিকটা হতাশা জেঁকে ধরে তাকে। আর ঠিক তখনই তিনি খেই হারিয়ে ফেলতে শুরু করেন।
তারপর রীতিমত নির্বাসনে চলে গেলেন তিনি। ২০২১ এর নভেম্বরে শেষ তিনি ছিলেন টাইগার শিবিরে। এরপর প্রায় দেড় বছর বাদে তিনি জাতীয় দলের দরজা খুঁজে পান। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে নতুন করে পদযাত্রা শুরু হয়। এই সময়টা প্রত্যাবর্তনের সময় শামীমের জন্য। যদিও ব্যাট করবার সুযোগ তার হয়নি। মূলত ফিল্ডার হিসেবেই অংশ নেওয়া তার।
তবে পরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ইনিংস ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন। নিজের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ক্যারিয়ারে প্রথম হাফসেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যান শামীম। ঠিক এরপর শামীম কি করছেন, সে খবর হয়ত খেয়াল রাখার প্রয়োজন মনে করেনি। কিংবা ঠিক কি কারণে তিনি আবার ফেরত এলেন জাতীয় দলে সেটাও খুব একটা প্রয়োজনীয় না সবার কাছে।
তবে হুট করেই তিনি জাতীয় দলে আবার ফিরেছেন, বিষয়টা তেমন নয়। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) এবারের আসরে ফিনিশার রোলেই তিনি খেলেছেন। আট ইনিংসে তিনি ১৭৫ রান করেছেন। গড়টা প্রায় ৩০ ছুঁইছুঁই। তবে বিবেচনায় নেওয়ার বিষয় ছিল তার স্ট্রাইকরেট। প্রায় ১৩৫ স্ট্রাইকরেটে তিনি ব্যাট করেছেন। ঠিক সে কারণেই হয়ত তাকে আবার জাতীয় দলে ফেরানো।
এরপর অবশ্য ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের মঞ্চে খুব একটা আলো ছড়াতে পারছেন না শামীম। ডিপিএলে রুপগঞ্জ টাইগার্সের হয়েও মিডল অর্ডারের শেষের দিকে খেলছেন তিনি। নয় ইনিংসে এখন অবধি ব্যাট করেছেন শামীম। একটিমাত্র ফিফটিতে তিনি রান করেছেন ১৭১। আবারও প্রত্যাশার মানদণ্ডে খানিকটা পিছিয়ে গেলেন হার্ড-হিটার এই ব্যাটার।
মূলত নিজের পেশি শক্তির ব্যবহারটা যথাযথ করতে পারেন শামীম। তবে তার মাঝে ধারাবাহিকতার অভাব প্রচণ্ড। এছাড়া তার ব্যাটিং টেকনিক এবং সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন চাইলেই তোলা সম্ভব। এখানটায় নিজেকে আরও শাণিত করতে নিশ্চয়ই চাইবেন শামীম পাটোয়ারি। কেননা প্রতিনিয়ত চলমান বিবর্তনের সাথে তাল মেলাতে হলে তো একেবারে টপনচ হতে হবে। বাংলাদেশ দলও হয়ত তেমনই কারোর অপেক্ষায়।
তবুও পরিচর্যার বিষয়টি আরও একবার তুলে আনা যায়। টাইগার ক্রিকেট সংস্কৃতি বেশ বিচিত্র। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি জাতীয় দলে রয়েছেন, ততোক্ষণ আপনি থাকবেন আলোচনায়। আপনার পরিচর্যায় মনোযোগ দেবে সবাই। যেই মাত্র আপনি জাতীয় দল থেকে ছিটকে যাবেন, সব আলো মুহূর্তে ভ্যানিশ হয়ে যাবে। প্রাতিষ্ঠানিক সহয়তা ছাড়া আসলে সম্ভাবনা গুলো সক্ষমতায় পরিণত হতে অনেক সময় নেয় কিংবা পরিণত হয় না।