আচ্ছা, সকাল কি সব সময় দিনের সঠিক পূর্বাভাস দেয়? কখনও দেয়, কখনও দেয় না। অন্যান্য ক্ষেত্রের মত ক্রিকেটও এমনই। দু:স্বপ্নের মত শুরু করবার পরও যেমন আলো ছড়ানোর গল্প আছে, তেমনি শুরুতেই সবার নজর কেড়ে আবির্ভাবের পর পথ হারিয়ে ফেলার গল্পও রয়েছে।
আচ্ছা একজন ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অভিষেকে সর্বনিম্ন কত রান করতে পারেন? আরে এটা আবার প্রশ্ন হলো! সীমিত ওভারের ক্রিকেট হলে এক ইনিংসে শূন্য আর ক্রিকেটের সব বড় পরীক্ষার মঞ্চ হলে দুই ইনিংসেই শূন্য, যাকে আমরা ক্রিকেটিয় ‘পেয়ার’ বলি।
অভিষেক হোক কিংবা অন্য কোনো ম্যাচে, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে একজন ব্যাটসম্যানের শূন্য রান ততটা অবমাননা করে না যতটা এই ‘পেয়ার’ করে, আর সেটা অভিষেকের মঞ্চে হলে অভিশপ্ত মনে হতে থাকে ব্যাটসম্যানের পক্ষে।
সেটা আরও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে যখন নিজের প্রথম তিনটি টেস্টে পরপর প্রায় একই ঘটনা ঘটতে থাকে। কিন্তু এত কিছুর পরও যদি সেই ব্যাটসম্যান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৪ হাজার রান সহ দেশের অন্যতম সেরা ওপেনার ব্যাটসম্যান ও অধিনায়ক হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার শেষ করেন তবে তা তার পরিশ্রম ও নৈপুণ্যের কথাই তুলে ধরে।
এমনই একজন শ্রমিক শ্রেণীর ক্রিকেটারদের উজ্জ্বল প্রতিনিধি হলেন তিনি। তিনি সাধারণ থেকে নিজেকে অসাধারণের পর্যায়ে তুলে নিয়ে যাওয়াদের একজন। তিনি হলেন মারভান আতাপাত্তু।
প্রথম ছয়টি টেস্ট ইনিংসে পাঁচটি শূন্য-সহ মাত্র এক রান! এর পরও ছয়টি ডাবল সেঞ্চুরি তিনি করেছেন – যা একজন ওপেনার ব্যাটসম্যান হিসেবে সর্বোচ্চ। আবার তার বিপরীত দিকটি দেখলে দেখা যাবে ছয়টি সেঞ্চুরি করবার পরও তার গড় ৪০ এর সামান্য কম যেখানে অন্যান্যদের ৫০ বা তাঁর বেশি। কিন্তু একজন ব্যাটসম্যান যিনি তার প্রায় তিনভাগের একভাগ ইনিংসে ৩০ এর গণ্ডি পেরোতে পারেননি তার কাছে এটাই অসাধারণ গড় হওয়া উচিৎ।
অন্যদিকে, শুরুর দিকের খারাপ সময় কাটিয়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের একজন অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হয়ে উঠেছেন। লঙ্কানদের অধিনায়ক হিসেবেও যথেষ্ট দক্ষতা দেখিয়েছেন। বার বার হোঁচট খাওয়ার পরও তিনি নিজেকে সামলে নিয়ে লড়াইটা চালিয়ে গেছেন।
‘তুমি কত বার হুমড়ি খেয়ে পড়েছ সেটা ব্যাপার ব্যাপার নয়, কতবার তুমি উঠে দাঁড়িয়েছ এবং লড়াই করেছ সেটাই বড় ব্যাপার।’ – মারভান আতাপাত্তুর আন্তর্জাতিক সরণী যেন এই কথাটারই বাস্তব রূপায়ন।