চারিদিকটা গভীর অন্ধকারে আচ্ছন্ন। তবুও কোথাও কোথাও সেলুলয়েডের কিঞ্চিৎ আলো। উপমহাদেশের গভীর রাতেও, ইউরোপীয় ফুটবলের মত্ত। সেখানে চ্যাম্পিয়ন্স লিগেরই তো আধিপত্য। গোটা ইউরোপের চ্যাম্পিয়নদের মিলনমেলা। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই আর রোমাঞ্চের এক নিশ্ছিদ্র বাক্স।
তবে এই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বহুবার অবাক করে দিয়েছিল ফুটবল বিশ্বকে। অঘটনের হাজার খানেক গল্প লেখা হয়েছে প্রতিনিয়ত। তবে সেসব থেকে বাছাই করে অল্পখানিক তুলে ধরার প্রচেষ্টা।
- ডায়নামো কিয়েভ-রিয়াল মাদ্রিদ (১৯৯৮/৯৯)
ব্যবধানটা ছিল ২-০। না এই গোল ব্যবধানটা সঠিক তথ্য দেয়না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এখন পর্যন্ত সফলতম দল রিয়াল মাদ্রিদ। সেই রিয়াল মাদ্রিদকেই হতভম্ব করে দিয়েছিল রাশিয়ান ক্লাব ডায়নামো কিয়েভ। প্রথম লেগে কোন রকম ১-১ গোলে রিয়ালের মাঠ থেকে ফেরে কিয়েভ।
দ্বিতীয় লেগে নিজেদের মাঠে রীতিমত রুপকথার জন্ম দেয়। ২-০ গোলে হারিয়ে দেন সেসময়ের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নকে। অঘটনের ষোলকলা পূর্ণ করে চলে যায় সেমিফাইনালে। অ্যান্ড্রি শেভচেঙ্কো কিয়েভের হয়ে দুই দফা খুঁজে ফেলে গোলের ঠিকানা। একাই নিশ্চিত করেন চ্যাম্পিয়নদের বিদায়।
- দেপোর্তিভো লা করুনা- এসি মিলান (২০০৩/০৪)
বেশ একটা ফুরফুরে মেজাজে স্পেনে পা রেখেছিল ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলান। নিজেদের মাঠ স্যান সিরো-তে ৪-১ ব্যবধানে জয় নিয়ে স্বস্তি চলে আসাটা তো স্বাভাবিক। কেননা টূর্নামেন্টের ইতিহাসে ৩-০ গোলে এগিয়ে থাকার পর বিদায় নেওয়ার ঘটনা তখনও ঘটেনি । কিন্তু যা ঘটেনি তা ঘটবে না, সে নিশ্চয়তাই বা দিয়েছে কে!
দেপোর্তিভো ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের রীতিমত নিশ্চুপ করে দেয়। বিস্ময়ের সবটুকু ছড়িয়ে যায় স্পেন থেকে ইতালি কিংবা গোটা ইউরোপ অথবা বিশ্ব। ৪-০ গোলের জয় পেয়ে যায় দেপোর্তিভো। অবিশ্বাস্য এক জয়। মিলানের তখনকার দল বিবেচনায় এটাকে অঘটনের সবচেয়ে বড় উদাহরণই বলতে হয়।
- সেল্টিক- বার্সেলোনা (২০১২/১৩)
তারকায় ঠাসা একটা দল তখন বার্সেলোনা। সেই মৌসুমের আগের চার বছরে দুইবার তারা জিতেছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা। সেই দলটাকেই স্তম্ভিত করে দিয়েছিল স্কটল্যান্ডের ক্লাব সেল্টিক। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে তারা বার্সেলোনাকে হারিয়ে দেয় ২-১ ব্যবধানে।
তবে সবচেয়ে অবাক করেছে সেল্টিকের বল পজিশন। টিকি-টাকা ফুটবলের প্রতিনিধি তখন বার্সেলনা। অধিকাংশ সময়েই বল থাকতো তাদের দখলে। সেবার সেল্টিকের বিপক্ষেও হয়েছিল তাই। মাত্র ১৬.৪% বলের দখল নিয়েও সেদিন জয়ী দল ছিল সেল্টিক। সেটা আবার টূর্নামেন্টের রেকর্ড। সে জয়ে তারা চলে যায় নকআউট পর্বে।
- বার্সেলোনা- ডায়নামো কিয়েভ (১৯৯৭/৯৮)
ডায়নামো কিয়েভের তখনকার দলটা বিপক্ষে স্রেফ পাত্তাই পায়নি লুই ফন গালের বার্সেলোনা। তবে তেমনটা মোটেও হবার কথা ছিল না। গ্রুপ পর্বের প্রথম লেগে নিজেদের ঘরের মাঠে কাতালানদের ৩-০ গোল ব্যবধানে হারিয়েছিল ডায়নামো কিয়েভ। সেটাই ছিল এক অঘটন। তখনও তো ইউরোপের পরাশক্তি বার্সেলোনা।
তবে চমকের সবটুকু যেন তুলে রাখা হয়েছিল ক্যাম্প ন্যু-এর জন্যে। সেখানেই ঘটে আশ্চর্যকর এক ঘটনার অবতারণা। ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত কাতালানরা। কল্পনাতীত এক ঘটনা। শেভচেঙ্কোর হ্যাট্রিকে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিশ্চিত হয় বার্সেলোনার।
- মায়োর্কা-আর্সেনাল (২০০১/০২)
ইউরোপীয় টূর্নামেন্টের শুরুর দিকে হারাটা আর্সেনালের জন্যে খুব বেশি বিস্ময়কর নয়। তবে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছিল স্প্যানিশ ক্লাব মায়োর্কা। ক্লাবটি প্রথমবারের মত খেলতে এসেই চমকে দিয়েছিল আর্সেনালকে। হারিয়ে দিয়েছিল ১-০ গোল ব্যবধানে।
তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, সেবার কেবল একটিমাত্র গোলই করতে পেরেছিল মায়োর্কা। গ্রুপ পর্বের ছয়টি ম্যাচে আর কোন গোলের দেখা পায়নি ক্লাবটি। তবে আর্সেন ওয়েঙ্গারের দলকে বেশ একটা ধাক্কা দিতে পেরেছিল মায়োর্কা।