অখ্যাত সেই ভ্যালেন্টিন ক্যাস্তেলানোর নামই আজ সবার মুখে

স্বপ্নিল এক রাতই বলা চলে! এমন এক রাত হয়তো আজীবন মনে রাখবেন তাতি ক্যাস্তেয়ানোস। আর্জেন্টাইন এ ফুটবলার এই একটা রাতের আগেও ছিলেন অচেনা, অপরিচিত, অখ্যাত এক নাম। কিন্তু রাতটা যখন পার হয়ে গেছে তখন বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় নামটি— ক্যাস্তেয়ানোস। 

স্বপ্নিল এক রাতই বলা চলে! এমন এক রাত হয়তো আজীবন মনে রাখবেন ভ্যালেন্টিন ক্যাস্তেলানো। আর্জেন্টাইন এ ফুটবলার এই একটা রাতের আগেও ছিলেন অচেনা, অপরিচিত, অখ্যাত এক নাম। কিন্তু রাতটা যখন পার হয়ে গেছে তখন বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় নামটি— ভ্যালেন্টিন ক্যাস্তেলানো।

অখ্যাত থেকে দৃশ্যপটে— গল্প কিংবা ইতিহাস রচনা বুঝি এভাবেই করতে হয়। রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে স্কোরশিটে জিরোনার ৪ গোল। সেটাই বিস্ময়ে ডোবানোর জন্য যথেষ্ট। কিন্তু সেই বিস্ময়কর মুহূর্তটাই আরো তীব্রতায় রূপ নেয়, যখন দেখা যাচ্ছে, জিরোনার হয়ে ৪ গোলের ৪ টিই এসেছে একজন ফুটবলারের পা থেকে!

রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে একাই ৪ গোল করা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়! শেষবার এমন প্রায় অসাধ্য কাজটা করেছিলেন রবার্ট লেভানডভস্কি। তবে আজ থেকে সেই তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন, তাতি ক্যাস্তেয়ানোস! ২৪ বছর বয়সী এই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের একার ৪ গোলেই জিরোনার কাছে ৪–২ ব্যবধানে উড়ে গিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ।

রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে গুণে গুণে চার গোল! এমন এক ম্যাচ দিয়ে এরই মধ্যে ইতিহাসের পাতায় নাম ছাপা হয়ে গিয়েছে ভ্যালেন্টিন ক্যাস্তেলানোর। ইতিহাসের দশম ফুটবলার হিসেবে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে এক ম্যাচে ৪ গোল করার অনন্য এক কীর্তি গড়েছেন এই আর্জেন্টাইন।

অবশ্য ক্যাস্তেলানোর আগেও একজন আর্জেন্টাইন রিয়ালের বিপক্ষে এ কীর্তি গড়েছিলেন। ২০০৬ সালে কোপা দেল রে’র সেমিফাইনালে একাই চারবার রিয়ালের জালে বল পাঠিয়েছিলেন রিয়াল জারাগোজার দিয়েগো মিলিতো। সেই হিসেবে রিয়ালের বিপক্ষে এক ম্যাচে ৪ গোলের কীর্তিতে দ্বিতীয় আর্জেন্টাইন হচ্ছেন, ক্যাস্তেলানো।

রিয়ালের বিপক্ষে ৪ গোলের কীর্তিতে ক্যাস্তেলানো দ্বিতীয় আর্জেন্টাইন হলেও লা লিগা’র ম্যাচ হিসেবে এই শতাব্দীতে রিয়ালের বিপক্ষে এক ম্যাচে ৪ গোল করার ঘটনা কিন্তু এটিই প্রথম। সর্বশেষ ১৯৪৭ সালে লা লিগা’র ম্যাচে এই কীর্তি গড়েছিলেন ওভিয়েদোর স্ট্রাইকার এস্তেবান এচেভেরিয়া। এচেভেরিয়া অবশ্য রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ৪ নয়, ৫ টি গোল করেছিলেন।

মজার ব্যাপার হলো, এই ক্যাস্তেলানোর ফুটবল ক্যারিয়ারটাই কাটছে অনেকটা ‘ভবঘুরে’র মতো। এ মৌসুম এই দলে, তো অন্য মৌসুমে দেখা মিলে অন্য কোনো ক্লাবে। জিরোনার হয়ে রিয়ালের বিপক্ষে এ ম্যাচ জয়ের নায়ক ক্যাস্তেয়ানোস আবার জিরোনার নিজস্ব কোনো খেলোয়াড়ও নয়। চলতি মৌসুম শুরুর আগ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ক্লাব নিউইয়র্ক সিটি এফসি তাঁকে ধারে পাঠায় জিরোনাতে।

তবে ধারে এসেও এ মৌসুমে দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে উঠে আসা জিরোনাকে দারুণ ভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ক্যাস্তেয়ানোস। চলতি মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১২ গোল করে এখন পর্যন্ত জিরোনার সর্বোচ্চ গোলদাতাও ২৪ বছর বয়সী এ আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।

নাগরিকত্ব সূত্রে ক্যাস্তেলানো আর্জেন্টাইন হলেও তাঁর ফুটবল ক্যারিয়ারটা শুরু হয়েছিল চিলিতে। ১৭ বছর বয়সে আর্জেন্টিনার কোনো ক্লাবে জায়গা না পেয়ে দেশ ছাড়েন এই ফুটবলার। এরপর তাঁকে দলে নেয় ইউনিভার্সিটি অব চিলি। যদিও চিলিতেও বেশিদিন স্থায়ী হতে পারেননি এ ফুটবলার। ২০১৭ সালের তাঁকে ধারে পাঠানো হয় উরুগুয়ের ক্লাব মন্টেভিডিও সিটি টর্কে।

এরপর আবারো ধারে ২০১৯ সালে নিউইয়র্ক সিটিতে যোগ দেন ক্যাস্তেলানো। আর যুক্তরাষ্ট্র এসেই গড়েন নতুন এক কীর্তি। ২০২১ সালে প্রথম আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় হিসেবে এমএলএসে জেতেন গোল্ডেন বুট। আর এরপরেই স্প্যানিশ ক্লাব জিরোনাতে পা পড়ে ক্যাস্তেয়ানোসের।

ফুটবলার হিসেবে ক্যাস্তেলানো বড় কোনো নাম নয়, সেটির জন্য মানদণ্ডে যাওয়ারও প্রয়োজন নেই। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে এমন ইতিহাসই বা গড়েন ক’জন। রিয়ালের বিপক্ষে ক্যাস্তেয়ানোসের ৪ গোলের কীর্তি নিশ্চয়ই তাঁর পুরো ফুটবল ক্যারিয়ারের ফেলে আসা সময়, অর্জনকেও ছাপিয়ে গিয়েছে।

এক রাতের ব্যবধানেই যে এই ক্যাস্তেয়ানোস হয়ে উঠেছেন ফুটবল অনুরাগীদের কাছে মহা এক বিস্ময়ের নাম, একটা চর্চার নাম, একটা ইতিহাসের নাম। এমন একটা রাতকে তাই ক্যাস্তেয়ানোসের জন্য ‘স্বপ্নিল’ না বলে উপায় কই!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...