সারাদিন মাঠের বৃত্তের মাঝে বসে খেলা দেখাচ্ছেন।
গ্যালারিতে ভিড় করে, উল্লাস করে খেলা দেখছে হাজার বিশেক মানুষ। খেলা শেষে সেসব মানুষ স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, যার যার বাড়ি চলে যাচ্ছেন। আর খেলোয়াড়রা গিয়ে আবার বন্দী হচ্ছেন হোটেলে। এ যেনো মানুষকে বন্দী থেকে খেলা দেখানোর মতো ব্যাপার।
ভারতীয় খেলোয়াড়দের বক্তব্য সোজাসাপ্টা। তাঁরা বলছেন তাঁরা মোটেও চিড়িয়াখানার জন্তু নন। এমনটা বলার পেছনে কারণও বলেছেন তাঁরা। আর সেটি হল, যদি ২০ হাজার দর্শক মাঠে গিয়ে খেলা দেখতে পারেন তবে তাদের এই এতদিন পরও অস্ট্রেলিয়াতে কেন একেবারেই হোটেলবন্দী থাকতে হবে।
মেলবোর্ন থেকে সিডনী যাওয়ার আগে ভারতীয় খেলোয়াড়দের জানুয়ারীর ৩ তারিখে আবার কোভিড টেস্ট করানো হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় এক খেলোয়াড় ক্রিকেট বিষয়ক গণমাধ্যম ক্রিকবাজকে বলেছেন, যদি এই টেস্টে দলের সবাই নেগেটিভ আসেন তাহলে আর বাকি সফরে কোয়ারেন্টাইন কোন প্রয়োজন দেখছেন না তাঁরা।
যুক্তিটা অবশ্যই একেবারে ফেলনা নয়। যেহেতু অনেকদিন হয়ে গেছে তাঁরা অস্ট্রেলিয়াতে আছেন, আর জানুয়ারির তিন তারিখেও তাঁরা নেগেটিভ হন তার মানে বাইরে থেকে তাঁরা আর অস্ট্রেলিয়ার ভাইরাস বাহক নন। তাঁর মানে সাধারণ অস্ট্রেলিয়ানরা যা করতে পারছে, তা তাদের করতে বাধা থাকার কথা নয়।
ক্রিকবাজকে সেই ক্রিকেটার বলেছেন, ‘সমর্থকেরা মাঠে আসছেন, স্বাধীনভাবে খেলা দেখছেন আর আমাদের জন্যে কঠোর কোয়ারেন্টাইনের ব্যাবস্থা করা হচ্ছে, এটা এক রকম বিপরীতমুখী চিন্তা হয়ে গেল না? বিশেষ করে আমরা যখন এখানে আসার পর এতবার নেগেটিভ হলাম। আমরা মোটেও এখানে চিড়িয়াখানার জন্তুদের মত জীবন কাটাতে চাই না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই ক্রিকেটার আরো বলেছেন, ‘আমরা বলতে চাইছি, আমাদের জন্যেও একই নিয়ম থাকুক যেমনটা প্রত্যেক অস্ট্রেলিয়ানের জন্যে আছে এখানে। যদি সমর্থকেরা মাঠে না আসতেন, তাহলেও আমাদের এভাবে হোটেলবন্দী করে রাখার একটা অর্থ ছিল।’
এই এতো কথার শুরু রোহিত শর্মাদের কয়েক জনের প্রটোকল ভাঙার অভিযোগ থেকে। জনা পাঁচেক ক্রিকেটার কোয়ারেন্টিনের নিয়ম না মেনে রেস্টুরেন্টে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে মিশেছেন বলে অভিযোগ। সে নিয়ে অনেক সোরগোল হচ্ছে। এমনকি কুইন্সল্যান্ড সরকারের স্বাস্থ্য ছায়া মন্ত্রী রস বেটস ভারতীয় ক্রিকেটারদের সতর্ক করে দিয়েছেন। বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার নিয়ম না মানতে পারলে এখানে আসার দরকার নেই। এই ব্যাপারটা ভারতীঅয় দলেও বেশ প্রতিক্রিয়া তৈরী করেছে।
ব্রিসবেনে থাকার সময় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার মেডিকেল টিমের নির্দেশনা ছিল ভারতীয় ক্রিকেটাররা তাদের হোটেলের ফ্লোর থেকেও নিচে নামতে পারবেন না। এক তলা থেকে অন্য তলায় যেতে পারবেন না। ভারতীয় দলের সেই ক্রিকেটারের কাছে যেটা কিনা একটু বারাবাড়িই, ‘আমাদের বলা হয়েছিল আমরা আমাদের ফ্লোর থেকেও সরতে পারব না। এই সিদ্ধান্ত আমাদের সিনিয়রদের কাছেও মেনে নেওয়ার মত মনে হয়নি।’
‘আমাদের বলা হয়েছিল আমরা আমাদের ফ্লোর থেকেও সরতে পারব না। এই সিদ্ধান্ত আমাদের সিনিয়রদের কাছেও মেনে নেওয়ার মত মনে হয়নি।’
কিভাবে থাকতে চান এমন প্রশ্নে সেই ক্রিকেটার বলেছেন, ‘আমরা সাধারণ অস্ট্রেলিয়ানদের মত সময় কাটাতে চাই। কোভিডের সব প্রটোকল আমরা মানব, তবে সেটা সাধারণ অস্ট্রেলিয়ানরা যেমনটা মানে তেমন , এই যেমন মাস্ক পরে চলা, রেড জোন চিহ্নিত এলাকা এড়িয়ে চলা এসব।’
কুইন্সল্যান্ডের চিফ হেলথ অফিসার ড. জিনেত ইয়ং এর কথা শুনলে অবশ্য ভারতীয় দল একটু খুশিই হতে পারেন। তিনিও ব্রিসবেন থেকে উড়াল দেবার পর ভারতীয় দলের জন্যে কঠোর কোয়ারেন্টিনের প্রয়োজন দেখছেন না।
ক্রিকবাজের রিপোর্ট অনুসারে, যদি কোয়ারেন্টিন শিথিল না করা হয় কঠোর অবস্থানে যেতে পারে ভারতীয় দল ।তাঁরা দাবি জানাতে পারে বাকি দুটি টেস্ট একই ভেন্যুতে করার।
বেশ কিছুদিন আগে ভারতীয় দলের পাঁচজন ক্রিকেটার কোয়ারেন্টাইন ভেঙে বাইরে খেতে গেছেন বলে খবর বেরিয়েছিল। এরপর ফ্লাইটে ঐ পাঁচজনকে আলাদা ভ্রমণ করতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে ক্রিকবাজকে ঐ ক্রিকেটার বলেছেন, ‘তাঁরা ইনডোরেই খেতে গিয়েছিলেন কারণ ঐ রাতে অনেক বৃষ্টি হচ্ছিল। আমি বুঝতে পারছিনা, তাদের কেন আলাদা যেতে হবে যেখানে তাঁরা সবাই কোভিড নেগেটিভ।’
ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরটা অনেক লম্বাই যাচ্ছে বলা চলে। এত লম্বা সময় কারো পক্ষে বায়ো বাবলে থাকা কিছুটা অসম্ভবই বলা চলে। ঐ ক্রিকেটার বলেছেন, ‘আমাদের খেলোয়াড়েরা অনেক আত্মত্যাগ করছে। আপনি দেখুন, সিরাজ তাঁর বাবার শেষকৃত্যে অব্দি যায়নি। আমাদের কিছু খেলোয়াড় তো গত ছয় মাস ধরে বায়ো বাবলে আছে আর এটা যে কারো পক্ষেই অসম্ভবের মত।’
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া না বুঝতে চাইলে সেই অসম্ভব সময়টা ভারতীয় ক্রিকেটারদের জন্যে আরো বাড়বেই!