দেশের ক্রিকেটে একটা গুঞ্জন আছে, চান্দিকা হাতুরুসিংহের সময়ে তাঁর প্রিয় ছাত্র হওয়ায় নাকি জাতীয় দলের অটোমেটিক চয়েস ছিলেন সৌম্য সরকার! অবশ্য হাতুরুর সৌম্যপ্রীতির ব্যাপারটাকে গুঞ্জন না বলে, ওপেন সিক্রেট বললেও ভুল হয় না।
২০১৫ সালের বিশ্বকাপের আগে মাত্র ১ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতাতেই বিশ্বকাপ স্কোয়াডে সৌম্যকে ভিড়িয়েছিলেন হাতুরুসিংহে। এ ছাড়া নিজের সময়কালে বরাবরই সৌম্যকে নিয়ে ইতিবাচক ছিলেন লঙ্কান এ কোচ।
অবশ্য হাতুরু অধ্যায় শেষ হওয়ার পরে সৌম্যও একটা সময় পর দল থেকে বাদ পড়ে যান। এরপর নিজেকে বারবার হারিয়ে খুঁজেছেন। জাতীয় দলে উঠেছেন অনিয়মিত। অবাক করা ব্যাপার হলো, সেই অনিয়মিত, অফ ফর্মের বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া সৌম্যকেই নাকি আবারো নিজের দ্বিতীয় মেয়াদে এসে দলে পেতে চাইছেন হাতুরুসিংহে!
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, সৌম্য সরকারের ফর্ম একদম যাচ্ছেতাই। ঘরোয়া ক্রিকেটে রান পাচ্ছেন না। টানা অফফর্মের জেরে কয়েকটা ম্যাচে সাইডবেঞ্চে বসেও কাটিয়েছেন।
সৌম্যর এমন হতশ্রী ফর্মের পরও তাঁকে এক প্রকার জোর করেই দলে পেতে চাইছেন কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে। বিসিবি’র ঘনিষ্ঠ সূত্র জানাচ্ছে, সৌম্যকে দলে টানতে রীতিমত নির্বাচকদের চাপ দিচ্ছেন হাতুরুসিংহে!
জানা গেছে, নিজের দ্বিতীয় মেয়াদে এসেই লঙ্কান এ কোচ বেশ ক’বার নির্বাচকদের কাছে সৌম্যর নাম প্রস্তাব করেছেন। কিন্তু কোচের সে প্রস্তাবে সাড়া দেননি নির্বাচকরা।
অবশ্য দলে রাখার মতো সৌম্য যে কিছু করেও দেখাতে পারেননি। চলতি ডিপিএলে খেলছেন মোহামেডেনের হয়ে। আর পঞ্চাশ ওভারের এ টুর্নামেন্টে এতটাই অফ ফর্মে আছেন যে, একাদশ থেকে জায়গাও হারিয়েছেন কয়েকটি ম্যাচে।
এখন পর্যন্ত খেলা ১১ ম্যাচে নিজের নামের পাশে যোগ করতে পেরেছেন মাত্র ১৯১ রান। পুরো টুর্নামেন্টে একটি মাত্র ফিফটি এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। সেই ইনিংসও আবার বেশ নড়বড়ে, ৯১ বলে ৫৬!
এমন ছন্দ হারানো ব্যাটারকে কেন প্রধান নির্বাচক দলে পেতে চাইছেন তা বিস্ময় জাগানিয়া। হয়তো হাতুরুর আমলে সোনালি সময় কাটানো সৌম্যর এমন দশা ঠিক মেনে নিতে পারছেন না লঙ্কান এ কোচ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দিয়েই দিয়েই সম্ভবত ফেরাতে চান নিজের প্রিয় শিষ্যকে।
কিন্তু সৌম্য সরকারের বিগত বছর গুলোতে আন্তর্জাতিক রেকর্ডও বেশ বাজে। ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে কোনো ফরম্যাটেই ঠিকঠাক জ্বলে উঠতে পারেননি। বারবার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু সেই সুযোগ তিনি হেলায় হারিয়েছেন, নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান দিতে পেরেছেন কমই।
ওয়ানডে ক্রিকেটে শেষ পঞ্চাশের মুখ দেখেছিলেন সেই ২০১৯ সালে। আবার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও ম্যাচের পর ম্যাচ খেলে গিয়েছেন। পর্যাপ্ত সুযোগ পেয়েছেন। শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও দলে ছিলেন।
কিন্তু, ব্যাট হাতে রানে ফিরতে পারেননি। জাতীয় দল, বিপিএল, ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ— বাইশ গজে রান করাই যেন ভুলে গিয়েছেন এ ব্যাটার।
তারপরও হাতুরুর স্নেহভাজন হওয়ায় অল্পেই বিশ্বকাপ দলে ঢুকে পড়ার সুযোগ ছিল সৌম্যর। এবারের ডিপিএল দিয়েই ফিরতে পারতেন দলে। কারণ নির্বাচকদের বারবারই সৌম্যর কথা মাথায় রাখতে বলেছিলেন হাতুরুসিংহে। কিন্তু সৌম্য নজর তো কাড়তেই পারেননি, বরং টানা অফফর্মের কারণে নির্বাচকদের এক প্রকার চক্ষশূলেই পরিণত হয়েছেন এ ব্যাটার।
জাতীয় দলের নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন তো এই কয়েকদিন আগেই সৌম্যর ব্যাপারে হতাশা জানিয়ে বলেছেন, সৌম্য তাদের আস্থার প্রতিদান দিতে পারেনি।
এটা এখন এক প্রকার স্পষ্টই যে, হাতুরুর চাওয়ায় এবার আর মন গলছে না নির্বাচকদের। অবশ্য এমন একজন ব্যাটারকে দলে টানা হলে প্রশ্নের মুখে পড়বেন তো ঐ নির্বাচকরাই। এবারের ডিপিএল নাইম শেখ রান বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন। এনামুল হক বিজয়ও রয়েছেন সেই ধারাতেই।
তারপরও জাতীয় দলে তাদের সুযোগ মিলছে না। সেখানে রান খরায় ভুগতে থাকা একজন ব্যাটারকে দলে নেওয়াটা এক প্রকার স্বেচ্ছাচারিতাই বলা চলে। একই সাথে প্রশ্নবিদ্ধ ভাবনাও বটে।
এখন পর্যন্ত নির্বাচকরা সেই ভাবনায় এগোয়নি। তবে অতীত ইতিহাস বলে, এই হাতুরু যেটা চান সেটা দিন শেষে করেই ক্ষান্ত হন। এখন দেখার পালা, তাঁর সৌম্যপ্রীতি শেষ পর্যন্ত কোন জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায়।
হাতুরুসিংহের চোখে সৌম্য মানেই সাবলীল স্ট্রোক প্লে, দারুণ হ্যান্ড আই কর্ডিনেশন, ক্ল্যাসিকাল অ্যাপ্রোচ। সেই ২০১৫ সালের সৌম্যতে শুধু হাতুরুই নন, পুরো বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরাই মুগ্ধতায় ডুব দিয়েছিল।
পাকিস্তানকে হোয়াইট ওয়াশ করা সিরিজের শেষ ম্যাচে ১১০ বলে ১২৭, এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে জোড়া ফিফটিতে সিরিজ সেরা হওয়া— হাতুরুর স্মৃতিতে বোধহয় এখনও সেই সৌম্য ভূতই মাথায় চেপে বসে আছে।
তবে, তাঁরও সম্ভবত একটু বোধোদয়ের প্রয়োজন—তাঁর সেই সৌম্যের ব্যাটে অমন ইনিংস এখন বিলুপ্ত প্রায়। ক্ষণিকের সফলতাকে সে আর পরবর্তীতে ধারাবাহিকতায় রূপ দিতে পারেননি।