হাসান ক্রমশ ছড়িয়ে যাচ্ছেন মুগ্ধতা

দিনের প্রথম আলোই নাকি বাকি দিনের বার্তা দিয়ে দেয়। ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ড অবশ্য ছিল মেঘে ঢাকা। সেই আকাশ চিড়েই আলো জ্বালিয়ে হাসান মাহমুদের আগ্রাসী শুরু। আর সেই আগ্রাসনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ধারাভাষ্যকক্ষে থাকা অ্যালান উইলকিন্স।

আগের দিনই অভিজ্ঞ উইলকিন্সের নজর কেড়েছিলেন হাসান। ব্যাটারকে নিজের পরিকল্পনা আর বুদ্ধিদীপ্ততায় পরাস্ত করেছিলেন তিনি। অফ স্ট্যাম্পের বাইরে বলটা সূক্ষ্ম সুইংয়ে ব্যাটারকে বোকা বানালো। অ্যান্ডি বালবার্নি স্রেফ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলেন। আর ঠিক তখনই উইলকিন্সের স্মৃতির দৃশ্যপটে ভেসে উঠেছিল দ্য গ্রেট গ্লেন ম্যাকগ্রার কথা।

হাসান এখনও হয়ত ম্যাকগ্রার সাথে তুলনাযোগ্য হয়ে ওঠেননি। তবে উইলকিন্স মনে করেন তিনি হয়ত হয়ে উঠবেন তেমনই একজন। ঠিক সে কথা আবারও মনে করিয়েছেন উইলকিন্স দ্বিতীয় ওয়ানডের শুরুতেও। কেননা হাসান যে আবারও তাকে মুগ্ধ করেছেন তার কারিশমা দিয়ে।

বৃষ্টির বাগড়ায় খেলা খানিকটা দেড়িতেই শুরু হয়। কাটা হয় পাঁচ ওভার। কাভারে ঢাকা পিচে টস জিতে তামিম ইকবালের বোলিং করবার সিদ্ধান্ত। বাতাস আছে, পিচটাও দারুণ। শুরুতে যতটুকু সাহায্য নেওয়া যায় কন্ডিশনের সবটুকু দু’হাত ভরে নিয়ে নিলেন হাসান মাহমুদ। ম্যাচের একেবারে প্রথম ওভারে আঘাত হাসানের।

আবারও সেই পরিকল্পনার ছক কষে হাসান তুলে নিলেন পল স্টার্লিংয়ের উইকেট। টানা তিনটি বল অফ স্ট্যাম্পের বাইরের লাইনে করলেন। এরপর টানা দুই বল ডান হাতি ব্যাটার স্টার্লিংয়ের জন্যে ভেতরের দিকে ঢুকলো। সিমের যথাযথ ব্যবহার বলতে যা বোঝায় আরকি। দু’বারই পরাস্ত স্টার্লিং। দ্বিতীয় দফা ব্যাটের খোঁচা লেগে বল জমা পড়ল মুশফিকের দস্তানায়।

তামিমের রিভিউতে অবশ্য সে উইকেটটি হয়ে যায় হাসানের নামে। এরপর একটানা পাঁচ ওভার করলেন হাসান। কর্তনকৃত নয় ওভারের প্রথম পাওয়ার প্লে-তেই হাসানের কোটার অর্ধেক শেষ করেন তামিম। তিনি হয়ত চাইছিলেন না হাসানের মোমেন্টামে ব্যাঘাত ঘটাতে। হাসানও ফলাফল এনে দিতে ভুল করেননি।

ব্যক্তিগত চতুর্থ ওভারের প্রথম বলেই তিনি ফেরান স্টিফেন ডোহেনিকে। পয়েন্টে থাকা মেহেদী মিরাজের কাছে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলনের পথে হাটা দেন ডোহেনি। প্রথম স্পেলে সেই দুই উইকেট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় হাসানকে। তবে এই সময়ে মাত্র ১২ রান খরচা করেছেন তরুণ এই পেসার। শেষ অবধি নিজের কোটার নয় ওভার ৪৮ রান খরচ করেছেন।

দিনের শেষে হয়ত উইকেটের সংখ্যা বেশি নয়। তবে তিনি বেশ ভুগিয়েছেন আইরিশ ব্যাটারদের। সময় যত গড়িয়েছে উইকেট তত ব্যাটিং সহায়ক হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটা বোলারকে রীতিমত তুলোধুনো করেছে আইরিশ ব্যাটাররা। তবুও হাসান নিজের কাজটা করে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। চেমসফোর্ডের সেই ছোট্ট মাটটিতে যতটা সম্ভব কম বাউন্ডারি হজম করার চেষ্টা করেছেন তিনি।

এমনকি নিজের সপ্তম ওভারে এসেও দারুণ খেলতে থাকা হ্যারি টেক্টরকে খাবি খাইয়েছেন হাসান। সেই টেক্টর পরবর্তীতে শতক তুলে নিয়েছেন। তবে হাসান পুরোটা সময় জুড়ে লাইন আর লেন্থ মেনে বল করেছেন। সাথে গতির মিশেল ঘটিয়েছেন। নিজের বোলিং সক্ষমতার সাথে বুদ্ধির দারুণ সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন পুরোটা সময় জুড়ে। তাছাড়া হাতের খুবই সূক্ষ্ম পরিবর্তনে করা তার ইনসুইংগুলো এড়ায়নি ধারাভাষ্যকারদের চোখ।

হাসান নামক সম্ভাবনা প্রতিনিয়ত আলো ছড়িয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে জায়গা করে নিচ্ছেন। ক্যারিয়ার শেষে ৫০০টি আন্তর্জাতিক উইকেটের মালিক হতে চেয়েছেন হাসান মাহমুদ। নিশ্চয়ই তিনি নিজের সেই লক্ষ্য স্থির রেখেই নিজের সক্ষমতা আর শৈলী বাড়িয়ে চলেছেন। একদিন হয়ত স্বপ্ন পূরণ হবে তার। অপেক্ষা সেদিনটার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link