আইপিএল ইতিহাসের অন্যতম সেরা বোলার তিনি। অথচ গত দুই মৌসুম ধরেই যেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন সুনীল নারাইন। তবে চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে দুর্দান্ত পারফর্ম করে বুঝিয়ে দিলেন ব্যাটারদের কাছে আজও রহস্য হয়েই আছেন এই স্পিনার।
ছোটবেলায় বাবা চেয়েছিলেন ছেলে হবে ব্যাটসম্যান। নামটাও তাই ভারতীয় কিংবদন্তী ব্যাটার সুনীল গাভাস্কারের সাথে মিলিয়েই রেখেছিলেন। সুনীল নারাইনও ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে। মারকুটে ব্যাটার হিসেবে সুখ্যাতিও মিলেছিল ক্যারিবীয়ান ক্রিকেট পাড়ায়। কিন্তু বয়সভিত্তিক দলে পা রাখতেই ব্যাটিং ছেড়ে মজলেন অফস্পিনের মায়ায়।
এরপর আর ফিরে তাঁকানো নয়, রহস্য স্পিনার হিসেবে আলোড়ন তোলেন গোটা বিশ্বজুড়ে। ফ্যাঞ্চাইজি দলগুলোর চাহিদার শীর্ষেই থাকে এই ক্যারিবীয় তারকার নাম। জাতীয় দলের হয়েও সাফল্যটা কম নয়, দুবার জিতিয়েছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা। প্রথম বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে সুপার ওভারে মেইডেন ওভার দেয়ার রেকর্ড তাঁর দখলে।
২০১১ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আলো ছড়ানোর সুবাদে আইপিএলে তাঁকে দলে ভেড়ায় কলকাতা নাইট রাইডার্স। এরপর থেকেই রীতিমতো কলকাতার ঘরের ছেলে বনে গেছেন এই তারকা। পারফরম্যান্সে কখনো আপোষ করেননি, ফলে নারাইনকে ছাড়ার কথা ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি কলকাতা। বরং অ্যাকশনের কারণে নিষিদ্ধ হবার সময়েও এই স্পিনারের পাশেই ছিল দলটি।
আইপিএলে দুবার শিরোপার দেখা পেয়েছে কলকাতা। দুই আসরেই দলের পক্ষে সেরা বোলার ছিলেন নারাইন। মাঝের ওভারগুলোতে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইন আপ গুঁড়িয়ে দেবার কাজটা তাঁর চাইতে ভালো বোধহয় কেউই জানেন না। ২০১৮ মৌসুমে তো ওপেনার হিসেবে রীতিমতো বিস্ময়কর উত্থান ঘটেছিল নারাইনের। সেবারে ১৮৯ স্ট্রাইকরেটে ৩৫৭ রান করেন এই তারকা।
তবে গত কয়েক মৌসুম ধরেই ব্যাট কিংবা বল, দুই জায়গাতেই নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন এই তারকা। শর্ট বলের দুর্বলতায় জায়গা হারিয়েছেন টপ অর্ডার থেকে, বোলিংয়েও দেখা মিলছিল না পুরনো নারাইনের। গত মৌসুমে ১৪ ম্যাচে শিকার করেন মাত্র নয় উইকেট।
এবারের মৌসুমেও শুরুর দিকে ছন্দটা পাননি। সমর্থকদের একাংশ তো তাঁকে দল থেকে বাদ দেবার দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু কলকাতার কোচ চন্দ্রকান্ত পন্ডিত নারাইনের উপর ভরসা রেখেছিলেন। তিনি জানতেন নিজের দিনে একাই ম্যাচের চিত্রনাট্য বদলে দেবার সামর্থ্য রাখেন এই স্পিনার। সেই আস্থার প্রতিদান কি দারুণভাবেই না দিলেন নারাইন! টুর্নামেন্টে টিকে থাকার লড়াইয়ে চেন্নাইয়ের বিপক্ষে তাঁর দুর্দান্ত বোলিংয়ের সুবাদে দারুণ এক জয় পেয়েছে কলকাতা।
চেন্নাইয়ের মাঠ বরাবরই ব্যাটারদের জন্য স্বর্গরাজ্য। সেই কারণেই কিনা মহেন্দ্র সিং ধোনি টস জিতে ব্যাট করতে চাইলেন, লক্ষ্যটা স্পষ্ট প্রতিপক্ষকে রান পাহাড়ে চাপা দেয়া। কিন্তু নারাইনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে সেটা আর হলো কই!
দুই ওপেনার ভালো শুরু এনে দেবার পরও এই স্পিনারের দুর্দান্ত বোলিংয়ে মাঝের ওভারে খেই হারায় দলটি। মাত্র দুই উইকেট পেলেও নারাইন আসল মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন রান আটকে রাখায়। চার ওভারে একটিও বাউন্ডারি হজম করেননি এই রহস্য স্পিনার। শেষ পর্যন্ত মাত্র ১৫ রান দিয়ে দুই উইকেট শিকার করেন তিনি।
ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় পৌঁছে গেছেন এই স্পিনার। তবে শেষ বেলায় জ্বলে উঠে নারাইন যেন বুঝিয়ে দিলেন এখনো ফুরিয়ে যাননি তিনি, আজও রহস্য হয়েই আছেন।