মেহেদি হাসান মিরাজ সম্ভবত ঠিক করেই এসেছিলেন নতুন ব্যাট দিয়ে করবেন অনুশীলন। তাইতো মিরপুর ইনডোর সংলগ্ন মাঠে তিনি হাজির তার নতুন ব্যাট নিয়ে। সেই ব্যাট নেড়েচেড়ে দেখলেন আশেপাশে থাকা সকলে। নতুন ব্যাটের আমেজটা যেন ভিন্ন। একজন ব্যাটারের কাছে নতুন একটা ব্যাট মানেই বাড়তি এক আনন্দ।
মিরাজেরও বোধহয় আনন্দের কমতি নেই। দিনের শুরু থেকেই বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। কারণটা বোধহয় নিজের নতুন ব্যাট অথবা চলতে থাকা দারুণ সময়। সেই যাই হোক। অনুশীলন তো করা প্রয়োজন। তাইতো তিনি খানিকটা ছায়া অনুশীলন সেরে নিয়ে অপেক্ষায় রইলেন, নেট খালি হবার। কেননা তখনও যে বাকিরা ব্যাটিং অনুশীলনে ব্যস্ত।
ব্যাট কাঁধে নিয়ে বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে মিরাজ চলে গেলেন নেটের দিকে। মিরাজের এই নির্ভার ভঙ্গিমাই অন্তত বুঝিয়ে দেয় ঠিক কতটা মানসিকভাবে চঞ্চল আছেন তিনি। অবশ্য মিরাজ সবসময়ই চনমনে। সাম্প্রতিককালে তার ফর্ম জোগাচ্ছে বাড়তি আত্মবিশ্বাস।
সেই আত্মবিশ্বাস থেকেই যেন নেটে গিয়ে দূর্দান্ত এক কাভার শট খেলে ফেললেন ডানহাতি এই ব্যাটার। মূল মাঠে ফিল্ডারের সাধ্য নেই সেটা ফেরায়। এমন একটা শটই তো তার আত্মবিশ্বাসের পালে নব হাওয়ার জোগান দেয়। দারুণ সময়ে মিরাজকে আরও একটু উৎফুল্ল থাকার রসদ জোগায়।
উৎফুল্ল মিরাজ বাংলাদেশ দলের জন্যে রীতিমত আশীর্বাদ। বল হাতে তার কার্যকারিতা নতুন করে বলার নেই। ক্যারিয়ার শুরুতে তো তিনি সেই পরিচয়েই সবচেয়ে বেশি পরিচিত হয়েছেন। জাত বোলার হিসেবেই তাকে গন্য করতে শুরু করা হয়েছিল দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে।
উপায়ও ছিল না কোন। তিনি যে অফস্পিনের ভেল্কি দেখিয়ে কুপকাত করতে জানেন ধুরন্ধর সব ব্যাটারদের। সেটাই বরং তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল একজন দূর্ধর্ষ অফ স্পিনার হিসেবে। তবে নিজের সেই তকমা সরিয়ে ফেলতে বড্ড মরিয়া মেহেদী হাসান মিরাজ। একজন বোলার না, তিনি একজন বিশ্বমানের অলরাউন্ডার হিসেবে নিজের ছাপ ফেলে যেতে চান।
তাইতো ব্যাটিংয়ের প্রতি তার বেড়েছে মনোযোগ। স্পিনার মিরাজের চাইতেও অলরাউন্ডার মিরাজ এখন বড্ড প্রয়োজন। অন্তত বাংলাদেশ জাতীয় দলের বর্তমান কম্বিনেশন বিবেচনায় ব্যাট হাতে মিরাজের রোলটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ একটু আগ্রাসী ক্রিকেটই খেলতে চায়। সেদিক থেকে সাত ব্যাটার নিয়েই খেলার পরিকল্পনা দলের।
সেই বিষয়টি আরও একটিবার স্পষ্ট করেছেন স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ। তিনি সংবাদ সম্মেলনে আভাস দিয়েছেন যে, যতদিন অবধি দল একটা কম্বিনেশনের ভাল করছে ততদিন অবধি সেখানে বদল আসার সম্ভাবনা ক্ষীন। তাতেই অন্তত ব্যাটার মিরাজের দায়িত্বের পরিধিটা আরও একবার স্পষ্ট হয়। শেষের দিকে দলের সংগ্রহটা বড় করবার দায়িত্ব তার।
আধুনিক ক্রিকেটে সেটা বেশ চাপের। তাছাড়া যেকোন বিপর্যয় সামলে নিতে হবে তাকে। তবে সেটা টেলএন্ডারদের সাথে নিয়ে। সে কাজটা মোটেও সহজ নয়। মিরাজের তাই ভুলত্রুটি করবার সুযোগ নেই। তাকে হতে হবে সেরাদের সেরা। ব্যাট হাতে হতে হবে একেবারে তীক্ষ্ণ। সে কাজটাই ক্রমাগত চালিয়ে যাচ্ছেন মিরাজ। হয়ত ব্যাটার মিরাজও নিজেকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।