ভারতীয় ক্রিকেট তাঁকে ভাবা হচ্ছে ‘নেক্সট বিগস্টার’। হবে নাই-বা কেন? বছর জুড়ে রানফোয়ারা ছোটাচ্ছেন। টেস্ট থেকে ওয়ানডে, ওয়ানডে থেকে টি-টোয়েন্টি— ফরম্যাট বদলালেও বদলাচ্ছে না তাঁর ব্যাটিং ছন্দ। সময়টা তাই এখন শুভমান গিলেরই।
সদ্য আইপিএল শেষ করেছেন অরেঞ্জ ক্যাপ মাথায় চড়িয়ে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দুরন্ত ফর্ম টেনে এনেছিলেন আইপিলের মঞ্চেও।৩ সেঞ্চুরিসহ আসরের সর্বোচ্চ ৮৯০ রান এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। তবে দীর্ঘ ২ মাসের এ টুর্নামেন্ট শেষের পরও শুভমান গিল ঠিক বিশ্রামটা আপাতত পাচ্ছেন না। কারণ আগামী ৭ জুন থেকেই যে ওভালের মাটিতে গড়াবে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইনাল।
সাদা বলের ক্রিকেটে বরাবরই দুর্দান্ত শুভমান গিল। লাল বলের ক্রিকেটেও এ বছরে রয়েছেন দারুণ ফর্মে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আরেক ফাইনালিস্ট অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই শেষ টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন। তবে গিলের সামগ্রিক টেস্ট পরিসংখ্যান আবার ততটা সুখকর নয়। স্বল্প সময়ের ক্যারিয়ারে ৩৪.২৩ গড়ে ব্যাটিং করেছেন।
অথচ ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে গিলের ব্যাটিং গড় যথাক্রমে ৬৫.৫৫ ও ৪০.৪। তবে কি শুভমান গিল লঙ্গার ভার্শন ক্রিকেটে ঠিক ততটা সাবলীল নয়? এমন আশঙ্কা ছাপিয়ে বরং এখানে অন্যদিক দিয়ে সম্ভাবনার গল্পই বেরিয়ে আসবে। প্রথমত, মাত্র ১৫ টা টেস্ট খেলেছেন। একজন ক্রিকেটারকে যাচাই কিংবা পর্যবেক্ষণ করার জন্য যে সংখ্যাটা নগণ্যই বটে।
তাছাড়া, আশার ব্যাপার হচ্ছে, লাল বলের ক্রিকেটে ৩৪.২৩ গড়ে ব্যাটিং গড়া শুভমান গিলে এ বছরে ব্যাটিং করেছেন ৫১.৩৩ গড়ে। যার মধ্যে আবার ক্যারিয়ার সেরা ১২৮ রানের ইনিংসও ছিল। আর এই ইনিংসটি তিনি খেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
ঘরের মাটিতে কিংবা ঘরের বাইরে, দুটিতেই শুভমান গিলের টেস্ট পরিসংখ্যান প্রায় একই। যেমন ক্যারিয়ারের ২ সেঞ্চুরির একটি করেছেন ঘরের মাটিতে, অন্যটি পেয়েছেন বিদেশের মাটিতে। একইভাবে ৪ হাফসেঞ্চুরির ২ পেয়েছেন ভারতের মাটিতে, বাকি দুটি পেয়েছেন ঘরের বাইরের মাটিতে।
ওভালের ফাইনাল যেহেতু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, সেই অজিদের বিপক্ষে গিলের সাথে জড়িয়ে রয়েছে সুখস্মৃতি। ২০২১ সালে ব্রিজবেন টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ৩২৮ রান চেজ করে ম্যাচটা জিতে নিয়েছিল ভারত। আর চতুর্থ ইনিংসে দলের সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন এই শুভমান গিল। সেদিন তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ৯১ রান।
এখানেই শেষ নয়। ঐ ইনিংসেই চেতেশ্বর পুজারার সাথে ১১৪ রানের জুটি গড়েছিলেন তিনি। যেটি অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সফল রান চেজের ক্ষেত্রে ভারতের প্রথম শতরানের জুটির কীর্তি গড়েছিল। অবশ্য ইংল্যান্ডের মাটি আবার এতটা ‘পয়া’ নয় শুভমান গিলের জন্য।
ইংলিশ দুর্গে ২ টি টেস্ট খেলা গিল ১৪.২৫ গড়ে সর্বসাকূল্যে তাঁর নামের পাশে যোগ করতে পেরেছেন ৫৭ রান। আর এখানেই কিছুটা চিন্তিত হওয়ার কারণ রয়েছে। এমনিতেই ইংলিশ কন্ডিশন উপমহাদেশের দেশগুলোর জন্য বেশ প্রতিকূল। তাছাড়া, এখানকার উইকেটে পেসাররা প্রচুর বল মুভমেন্ট পান। যার কারণে ব্যাটারদের উইকেটে টিকে থাকার ক্ষেত্রে অনেক বেগ পেতে হয়। শুভমান গিলের জন্য তাই অজি পেসারদের পেস সামলানোর চ্যালেঞ্জটা থাকছেই।
২০২১ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও খেলেছিলেন গিল। লর্ডসের সে ফাইনালে এ ব্যাটার বলার মতো তেমন কিছুই করতে পারেননি। দুই ইনিংসে যথাক্রমে ১৭ ও ৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। নিজের ব্যাটিং ব্যর্থতায় ভারতও সেবার ফাইনাল পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ নিয়ে মাঠ ছেড়ে ছিল।
২ বছরের ব্যবধানে শুভমান গিল এখন অনেক পরিণত। এবার দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যও তিনি। প্রত্যাশার চাপ তাই অনুমিত ভাবেই থাকছে। তবে বছর জুড়ে ঐ চাপকে সঙ্গী করেই তো গিল দলে নিজের জায়গা পোক্ত করেছেন।তাই ইংলিশ কন্ডিশনে তাঁর অতীত পরিসংখ্যানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানোর এটাই মোক্ষম সময়।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। এত বড় মঞ্চে পারফর্ম করার সুযোগটা বোধহয় এবার আর হেলায় হারাতে চাইবেন না শুভমান গিল নিজেও। কারণ শচীন, বিরাটদের নাম জড়িয়েই তো তাঁকে তাদের উত্তরসূরি ভাবা হচ্ছে। আর ক্রিকেট প্রাঙ্গনে ছড়িয়ে যাওয়া এ ভাবনার বিস্তৃতি নিশ্চিতভাবেই ঘটাতে চাইবেন গিল।