মাইকেল নেসার, জীবন না যেন এক সিনেমা

আর মাত্র দু’দিন পরেই শুরু হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মধ্যে ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় আসরের এই ফাইনাল ম্যাচের আগে বড় ধাক্কা খেয়েছে টিম অস্ট্রেলিয়া। দলের ফাস্ট বোলার জোশ হ্যাজেলউড পুরনো ইনজুরির কারণে এই ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়েছেন এবং তাঁর বদলি হিসেবে দলে ডাকা হয়েছে মাইকেল নেসারকে।

এখন পর্যন্ত মাত্র দু’টি টেস্ট খেলা মাইকেল নেসার দক্ষিণ আফ্রিকার ডাক্তারদের একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তাঁর পরিবার অস্ট্রেলিয়ায় স্থানান্তরিত হওয়ার আগে প্রিটোরিয়াতে প্রথম ১০ বছর কাটিয়েছিলেন। পুরো পরিবারের মতই মাছ ধরতে পছন্দ করতেন নেসার। ২০১৩ সালে বিগ ব্যাশকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নেসার জানিয়েছিলেন, কেনিয়াতে একবার পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাছটি ধরেছিলো তাঁর পরিবার।

মাছ ধরার পাশাপাশি সঙ্গীতের বিভিন্ন যন্ত্র বাজাতে পছন্দ করতেন নেসার। একটি মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে জন্মস্থান দক্ষিন আফ্রিকা ছাড়ে নেসারের পরিবার। একবার এক সাক্ষাৎকারে নেসার সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন, ‘একজন মদ্যপ গাড়ি চালক গাড়ি নিয়ে আমাদের গাড়ির ওপর আছড়ে পড়ে। আমরা সবাই ভয়ে গাড়ির বাইরে ছিটকে পড়ি। যখন আমরা আবার গাড়ির কাছে আসি তখন দেখলাম আমাদের জিনিসপত্র কিছুই নেই। আমরা ডাকাতির শিকার হয়েছিলাম।’

নেসারদের দক্ষিন আফ্রিকা ত্যাগের পেছনে এই ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দক্ষিন আফ্রিকা ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমানোর জন্য নিজের বাবা-মায়ের ওপর কৃতজ্ঞ। নিজেদের প্রতিষ্ঠিত ক্যারিয়ার ফেলে শুধু সন্তানদের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় চলে এসেছিলেন নেসারের বাবা-মা।

অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমানোর পর কুইন্সল্যান্ডের হয়ে নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেন নেসার। ২০১৩ সালে সুযোগ এসে যায় বিগ ব্যাশেও। বিগ ব্যাশে ভালো খেলায় সুযোগ পেয়ে যান আইপিএলেও। তবে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের হয়ে আইপিএলে এক দুঃসহ স্মৃতিই আছে নেসারের। আইপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচেই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিখ্যাত ত্রয়ী ক্রিস গেইল, বিরাট কোহলি ও এবিডি ভিলিয়ার্সের তোপের মুখে পড়েন নেসার।

অভিষেকে ৬২ রান খরচ করায় অভিষেক ম্যাচই হয়ে আছে নেসারের একমাত্র আইপিএল ম্যাচ। নিজের আইপিএল অভিষেক ম্যাচটা অবশ্য মনে রেখেছেন নেসার। এক সাক্ষাৎকারে নেসার বলেন, ‘প্রথম ওভারটায় আমি ভালোই বোলিং করেছিলাম। এরপর স্কোরবোর্ডের দিকে তাকিয়ে দেখি আমি ১৫ রান দিয়ে দিয়েছি। এরপর সব খারাপ হতে থাকলো। আমি জানি এটা শুনতে খারাপ শোনাবে কিন্তু আসলে আমার মনে হয় আমি খুব বেশি খারাপ বোলিং করিনি।’

ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করলেও কিছুতেই জাতীয় দলে সুযোগ হচ্ছিলো না নেসারের। এরপর ৩১ বছর বয়সে টেস্ট অভিষেক হয় এই পেসারের। ২০২১ সালে খেলেছিলেন সবশেষ টেস্টটি।

কাউন্টি ক্রিকেটে বিস্ফোরক পারফরম্যান্স করে অস্ট্রেলিয়া দলে ফেরার আলোচনাতেই ছিলেন নেসার। গ্ল্যামরগানের হয়ে খেলা শেষ ৫ ম্যাচে ১৯টি উইকেট নিয়েছেন নেসার। ২ ইনিংসে ৪ বা তার বেশি উইকেট নিয়েছেন তিনি। শুধু বোলিংই না, ভালো ব্যাটিংও করেন নেসার। কাউন্টি ক্রিকেটের শেষ ৫ ম্যাচে একটি সেঞ্চুরি ও ২ হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। সম্প্রতি ভারতের চেতেশ্বর পূজারার কাউন্টি দল সাসেক্সের বিরুদ্ধে ১২৩ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি।

মাইকেল নেসার সেই ম্যাচে চেতেশ্বর পূজারাকে বেশ ভুগিয়েছিলেন। লাল বলে একের পর এক পরীক্ষা নিতে থাকেন পূজারার। অবশেষে পূজারার উইকেটও পেয়েছিলেন নেসার। ওভালেও নেসারেরও রয়েছে বিশেষ স্মৃতি । ২০১৮ সালে এই মাঠেই তাঁর ওয়ানডে অভিষেক হয়। নেসার ৯৬টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ২৩.৫ গড়ে ৩৪৭ উইকেট নিয়েছেন। একই সাথে ২৬.৭৮ গড়ে ৩০৮০ রান করেছেন। বল ও ব্যাটহাতে নেসারের এমন পারফরম্যান্স তাই আর উপেক্ষা করতে পারেনি অজিরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link