চেলসিতে থাকাকালীন তাঁকে ডাকা হতো ‘প্রিন্স অব স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ’ নামে। ৭ মৌসুমে ব্লুজদের জার্সি গায়ে চাপিয়ে সব মিলিয়ে ৩৫২ ম্যাচে গোল করেছিলেন ১১০টি।
শুধু গোলের সংখ্যায় চেলসির সেই এডেন হ্যাজার্ডকে হয়তো বোঝানো সম্ভব নয়। তবে মাঠ কাপানো সেই ডিব্রলিং, দুর্দান্ত স্পিডের হ্যাজার্ড সত্যিকার অর্থেই এক সময়ে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের বাজারে হটকেক হয়ে উঠেছিলেন।
তাই তো বড় আশা নিয়েই হ্যাজার্ডকে ২০১৯ সালে দলে ভিড়িয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। মাদ্রিদের ইতিহাসে ১১৫ মিলিয়ন ইউরোর রেকর্ড ট্রান্সফারে সেবার লস ব্ল্যাঙ্কোস শিবিরে নাম লিখিয়েছিলেন বেলজিয়ান এ তারকা ফুটবলার। কিন্তু মাদ্রিদ সমর্থকদের সে স্বপ্ন যাত্রায় গুড়ে বালি!
‘ইনজুরি’ নামক বেড়াজালে বদ্ধ হয়ে খেই হারিয়ে ফেললেন হ্যাজার্ড। আর তাতে রিয়ালের আশা পূরণ হওয়া তো দূরে থাক, মৌসুমের পর মৌসুম ইনজুরিতে মাঠের বাইরে থেকে রীতিমত দলের জন্য বিরক্তির এক নাম হয়ে উঠেছিলেন এ ফুটবলার। ফিটনেসের দুরবস্থায় এক সময়কার ‘প্রিন্স অব স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ’ বছর চারেকের ব্যবধানে নাম পেয়ে গেলেন ‘বার্গার হ্যাজার্ড’ হিসেবে।
রিয়ালের হয়ে ব্যক্তিগত ব্যর্থতার গ্লানির চরমতম অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিলেন হ্যাজার্ড। শেষ চার মৌসুমে মাঠেই নামতে পেরেছেন মাত্র ৭৬ টি ম্যাচে। তাতে গোল করেছেন মাত্র ৭ টি। চোট জর্জর হ্যাজার্ড বারবার ফিরে আসার গল্প শুনিয়েছেন। কিন্তু সেই গল্পটা শেষ পর্যন্ত আর লিখতে পারেননি তিনি।
২০২২-২৩ মৌসুমে ম্যাচ পাওয়া তো দূরে থাক, সর্বসাকূল্যে খেলতেই পেরেছেন মাত্র ৩৯২ মিনিট। তাছাড়া, ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে কোনো ম্যাচেই পুরো নব্বই মিনিট খেলা হয়নি বেলজিয়ান এ ফুটবলারের।
তাই রিয়াল মাদ্রিদের সাথে চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই বিচ্ছেদের পথেই এগোচ্ছিল মাদ্রিদ-হ্যাজার্ড সম্পর্ক। অবশেষে সেই ঘোষণাও আসে এই মৌসুম শেষ হওয়ার পরে। এরই মধ্যে নিশ্চিত হয়েছে, আগামী ৩০ জুনের পর আর রিয়াল মাদ্রিদে থাকছেন না এডেন হ্যাজার্ড। কোচ কার্লো আনচেলত্তির সাথে তাঁর সম্পর্কের দূরত্বের কথা আগেই জানা গিয়েছিল।
তবে কোচ নয়, হ্যাজার্ডের মূল প্রতিবন্ধকতা হয়ে উঠেছিল তাঁর ইনজুরি প্রবণতাই। নিয়মিত বিরতিতে চোট, অফফর্ম আর ফিটনেসের কারণেই রিয়ালের হয়ে তাঁর অধ্যায়ের সমাপ্তির সময়টা ধেয়ে আসছিল। অবশেষে সেটা হয়েও গিয়েছে। হ্যাজার্ডের রিয়াল অধ্যায়ে এখন ফুলস্টপ বসে গিয়েছে।
ব্যক্তিগত ব্যর্থতার পরও হ্যাজার্ডের দলগত অর্জন কিন্তু বেশ সমৃদ্ধ। রিয়ালের হয়ে ৪ বছরে শিরোপা জিতেছেন মোট ৮ বার। এর মধ্যে ২ বার করে লা লিগা ও সুপার কাপ, আর ১ বার করে চ্যাম্পিয়নস লিগ, ক্লাব বিশ্বকাপ, ইউরোপিয়ান সুপার কাপ ও স্প্যানিশ কোপা দেল রে’র শিরোপা জিতেছেন।
রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে রেকর্ড ট্রান্সফারে এখন পর্যন্ত এডেন হ্যাজার্ড শীর্ষেই থাকছেন। কিন্তু রিয়ালের ইতিহাসে ফুটবলার হিসেবে হ্যাজার্ডের অবস্থানটা অনেকটা তলানিতেই থাকার মতো।
এমন একটা ট্রান্সফার, প্রত্যাশার কিঞ্চিৎ ভাগ না মিটিয়ে এরপর হ্যাজার্ডের এভাবে ছন্দচ্যূতি ঘটা— সব মিলিয়ে এটাই কি তাহলে ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ট্রান্সফারের ঘটনা হয়ে থাকল? প্রশ্নটা রাখাই যায়।