গেভ ওভার ফর দ্য গেম চেঞ্জার

প্রস্থানের লগ্ন। তৃপ্ততা, আবেগের মিশেলে চোখ ছলছল করার মতো চাহনি মিশে যেখানে একাকার। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া দারুণ এক অভিযাত্রার সমাপ্তি ঘটলো সিডনিতে। টেস্ট ক্রিকেটের আঙিনা থেকে সরে দাঁড়ালেন ডেভিড ওয়ার্নার।

প্রস্থানের লগ্ন। তৃপ্ততা, আবেগের মিশেলে চোখ ছলছল করার মতো চাহনি মিশে যেখানে একাকার। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া দারুণ এক অভিযাত্রার সমাপ্তি ঘটলো সিডনিতে। টেস্ট ক্রিকেটের আঙিনা থেকে সরে দাঁড়ালেন ডেভিড ওয়ার্নার।

সাদা পোশাকে ওয়ার্নারের শেষের মুহূর্তটাও কী দারুণ রোমাঞ্চে ঘেরা। ব্যক্তিগত ৫৭ রানের সময় সাজিদ খানের বলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েছিলেন। তবে অনফিল্ড আম্পায়ার আবেদনে সাড়া দেয়নি। পাকিস্তান রিভিউ নিলেই গোটা গ্যালারিতে ভর করে অদ্ভুত এক উৎকণ্ঠা। এটাই কি তবে ওয়ার্নারের শেষ? এমন প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চাহনি তখন গিয়েছে মাঠের বড় পর্দায়।

কিছুক্ষণ বাদে সেখানে ফুটে উটল ‘আউট’। একটু হাসলেন ডেভিড ওয়ার্নার। হয়তো বিদায়ের হাসি কিংবা শেষের অধ্যায়ে তৃপ্ততা খুঁজে নিয়েছিলেন ওয়ার্নার! তাকে আউট করেছেন যিনি, সেই বোলার সাজিদ খানই সবার আগে অভিনন্দন জানালেন। উইকেটে সঙ্গী মার্নাস লাবুশেন গিয়ে তাকে জড়ালেন আলিঙ্গনে। ছুটে গিয়ে হাত মেলালেন বাবর আজমও। পিঠ চাপড়ে দিলেন পাকিস্তানের প্রায় সবাই। কিংবদন্তি প্রস্থান বলে কথা।

এ দিকে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের গোটা গ্যালারি তখন দাঁড়িয়ে। প্রায় ২৫ হাজার দর্শকের তুমুল করতালিতে তখনকার মুহূর্ত ছেয়ে গেছে ওয়ার্নার বন্দনায়। স্ক্রিণে ভেসে উঠল ওয়ার্নারের স্ত্রী, সন্তানদের ছবিও। ওয়ার্নার হেলমেট খুলে নিলেন।

এরপর হেলমেটে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রতীকে চুম্বন এঁকে দিলেন। হাঁটতে হাঁটতেই দুহাত প্রসারিত করে এবং ব্যাট উঁচিয়ে সবার ভালোবাসার একটা উত্তর দিলেন। এরপর সিডনির মাঠ ছেড়ে সিড়ি ধরে এক মুহূর্তেই চলে গেলেন ড্রেসিং রুমে। সাদা পোশাকে ‘শেষ’ ওয়ার্নারের।

ধারাভাষ্যকক্ষ থেকেও আসলো সেই সুর। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে মুহূর্তটিকে আইকনিক করে তুলে ইষা গুহ বললেন, ‘গেম ওভার ফর দ্য গেম চেঞ্জার।’ গেম চেঞ্জারই তো বটে। ১১২ ম্যাচে ২০৫ ইনিংসে ৪৪.৫৯ গড়ে ৮৭৮৬ রান। ২৬ শতক ও ৩৭টি অর্ধশতক। অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ইতিহাসে রানের হিসাবে পঞ্চম ওয়ার্নার। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ওপেনারদের মধ্যে আর কেউ টেস্টে ওয়ার্নারের মতো এত রান করতে পারেননি।

অ্যালিস্টার কুক, সুনীল গাভাস্কার ও গ্রায়েম স্মিথের পর টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে ওপেনার হিসেবে তাঁর রানই চতুর্থ সর্বোচ্চ। তবে এই তিনজনকে ওয়ার্নার ছাপিয়ে গেছেন স্ট্রাইকরেটে। টেস্ট ক্যারিয়ারে ৭০.৩১ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছেন এই ওপেনার। ন্যূনতম ৮০০০ রান করা ওপেনারদের মধ্যে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ওপেনার হিসেবে সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেটের রেকর্ডটা বীরেন্দ্র শেবাগের, ৮২.২৩।

ক্যারিয়ারটা শেষ করলেন ৪৪.৫৯ গড়ে। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে খেই না হারালে যে গড়টা থাকতে পারতো অনায়াসেই ৫০-এর উপরে। তবে আক্ষেপের এ গল্পগুলো না হয় তোলাই থাক। আজ শুধুই ওয়ার্নার বন্দনার দিন। যে গল্পে তিনিই নায়ক, দ্য গেম চেঞ্জার।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...