২০০৫ এর অ্যাশেজ। সেবার এজবাস্টনে ইংলিশদের দেওয়া ২৮২ রানের লক্ষ্যে নাটকীয়ভাবে ২ রানে হেরে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। এবার সেই এজবাস্টনেই ২ উইকেটে জিতে ১৮ বছর আগের দু:সহ স্মৃতিতে প্রলেপ দিল অজিরা। আর সেই মধুর প্রতিশোধের তৃপ্তিদায়ক মুহূর্ত এসেছে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের জন্যই।
এজবাস্টন টেস্টের এ ম্যাচ জয়ের নায়ক উসমান খাজা। হবে না-ই বা কেন? পুরো টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচে রেখেছিলেন বাঁহাতি এ ওপেনার। প্রথম ইনিংসে ১৪১ এর পর দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেছেন ৬৫ রানের ইনিংস। আর এতেই হয়েছে রেকর্ড। ১৯৮৯ সালে মার্ক টেলরের পর প্রথম অস্ট্রেলীয় ব্যাটার হিসেবে ইংল্যান্ডের মাটিতে অ্যাশেজের একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ফিফটি করার কীর্তি গড়েছেন এ ওপেনার।
তবে ম্যাচজুড়ে উসমান খাজা অস্ট্রেলিয়ার তরী এগিয়ে নিয়ে গেলেও সেটা তীর পর্যন্ত নিয়ে আসেন প্যাট কামিন্সই। বেন স্টোকসের ৭২তম ওভারের শেষ বলটায় উসমান খাজা যখন বোল্ড হয়ে ফিরে যাচ্ছেন, তখন ম্যাচ কিছুটা হেলে পড়ে ইংল্যান্ডের দিকে। এমন সময়ে উইকেটে আসেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স।
এজবাস্টনের ড্রেসিংরুম ছেড়ে যখন অজি অধিনায়ক ক্রিজের দিকে ছুটছেন, তখন তাঁর কাঁধে প্রায় অসম চাপ এসে ভর করেছে। তার উপরে ম্যাচের সেরা ব্যাটার খাজা ফিরে গিয়েছেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে বেশ খানিকটা আত্মবিশ্বাসের রসদ নিয়েই উইকেটে আসলেন কামিন্স। দেখে বোঝার উপায় নেই, অস্ট্রেলিয়া তখন ম্যাচ পরাজয় থেকে মাত্র ৩ উইকেট দূরে।
এর মাঝে আবার ফিরে গেলেন অ্যালেক্স ক্যারিও। কার্যত, অজিদের জন্য জয়ের আশা সেখানেই শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এমন চাপও যেন পরাস্ত করতে পারলো না কামিন্সের দৃঢ়চেতা মনকে। চাহনি, ভঙ্গিমায় বারবারই জানান দিচ্ছিলেন, এ ম্যাচটা তিনি জিততেই এসেছেন। ১৮ বছর আগের সেই দু:সহ স্মৃতিকে সরিয়ে একটা নতুন ইতিহাস গড়তে এসেছেন।
প্যাট কামিন্স সেটাই শেষ পর্যন্ত করে দেখালেন। ম্যাচের ৪.৩ ওভার বাকি থাকতেই অস্ট্রেলিয়াকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে। নবম উইকেটে নাথান লায়নের সঙ্গে ৫৫ রানের জুটি গড়ে অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত জিতিয়েই ছাড়েন। আর সেই পথযাত্রায় ৬৯ বলে ৪৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস খেলেন কামিন্স। অথচ শেষ ৪ বছরে এ টেস্টের আগে কামিন্সের চল্লিশোর্ধ কোনো ইনিংসই ছিল না।
ইতিহাস গড়ার দিনে বোধহয় এভাবেই পরিসংখ্যানকে বুড়ো আঙুল দেখাতে হয়। কামিন্স বীরত্বে এজবাস্টনের এ টেস্ট জয়ের মধ্য দিয়ে রেকর্ড গড়েছে অস্ট্রেলিয়াও। এজবাস্টনে এর আগে ২৮১ এর সমান বা বেশি রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করে জেতার ঘটনা ছিল দুটি।
সর্বশেষ গত বছর ভারতের বিপক্ষে ৩৭৮ রান তাড়া করে জিতেছিল ইংল্যান্ড। এর আগে ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ২৮১ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করে জিতেছিল ৫ উইকেটে। এবার সেই বিরল রেকর্ডে নাম লেখালো অস্ট্রেলিয়াও।
কামিন্স যখন ব্যাটে নেমেছিলেন তখন অস্ট্রেলিয়ার জয়ের প্রদীপ প্রায় নিভু নিভু। এমন সময়ে কোণঠাঁসা হয়ে পড়েছিল অজিদের ড্রেসিংরুমও। কিন্তু প্যাট কামিন্স নাকি পরাজয়ের চিন্তাটাই মাথায় আনেননি। ম্যাচ শেষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘আমি ম্যাচ হারার কথা ভাবিও নি। এমনকি আমাদের যখন দুটো উইকেট হাতে ছিল, তখনও না। ভালো সুযোগই দেখছিলাম। উইকেটে তো ভয়ংকর কিছু ছিল না। আমার সবসময় মনে হয়েছিল, ম্যাচ আমাদের হাতের মুঠোতেই আছে।’
প্যাট কামিন্সের মূল কাজ তাঁর বোলিংয়ে। কিন্তু দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে যে দৃঢ়তা তিনি এজবাস্টনে দেখালেন, তা অবিশ্বাস্যই বটে। দ্বৈরথটা ইংল্যান্ডের সাথে বলেই, সেটার মাঝে বিশেষত্বটা খুঁজে নিচ্ছে অনেকেই। ভারতের স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল তো এমন দাপুটে পারফরমেন্সে উচ্ছ্বসিত হয়েই টুইটে লিখেছেন, ;প্যাট কামিন্স, কুর্নিশ’।
এমন পারফর্মেন্সের পরে অবশ্য কামিন্সকে কুর্নিশ করাটা অতিরঞ্জিত কিছুই নয়। উইনিং রান তুলে নিয়ে এজবাস্টনের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত থেকে ছুটছেন কামিন্স। আর তাঁকে মধ্যমণি বানানোর চেষ্টায় সতীর্থরা। এ দৃশ্যই তো ভবিষ্যতের ইতিহাস। আর সেই ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে, একেই বলে, ক্যাপ্টেন লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট।