কলিন অ্যাকারম্যান, ফ্রেড ক্লাসেন, পল ফন মিকেরেন ও রুলফ ফন ডার মেরওয়া আজকে একাদশেই থাকতে পারতেন। কিন্তু তাদেরকে পায়নি নেদারল্যান্ডস। তারা ব্যস্ত ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে। এমনকি ব্র্যান্ডন গ্লোভার, টিম ফর গুগটেনও থাকতে পারতেন। তাঁদেরকেও পায়নি দল।
তার পরও দলটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কী অসাধারণ স্কিল, উজ্জীবিত পারফরম্যান্স আর হার না মানা মানসিকতা মেলে ধরল। শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ হয়তো তারা খেলতে পারবে না। কিন্তু আইসিসিকে, ক্রিকেট বিশ্বকে এই বার্তা দিয়ে রাখল, তারা বিশ্বকাপ খেলার মতোই দল।
নেদারল্যান্ডস যখনই ভালো করে, আমার মনে পড়ে পিটার বোরেনের কথা। এই অলরাউন্ডার ছিলেন ডাচদের অধিনায়ক। সত্যিকারের এক নেতাও ছিলেন তিনি। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রাথমিক পর্বে বাংলাদেশে সঙ্গে তুমুল লড়াই করে ৮ রানে হেরে যান তারা। পরের ম্যাচে ওমানের সঙ্গে একটি বলও খেলা হয়নি বৃষ্টির কারণে। ব্যস, তারা বাদ! শেষ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের সঙ্গেও জিতেও লাভ হয়নি।
ধর্মশালার প্রেস কনফারেন্স কক্ষে বোরেনের সেই চেহারা এখনও চোখে ভাসে, কথাগুলি কানে বাজে। প্রায় বিধ্বস্ত ছিলেন তিনি, চোখ ছিল ছলছল। কিন্তু কণ্ঠে ছিল দৃঢ়তা আর তেজ। কখনও কখনও কিছুটা কাতরও।
তাঁর কথাগুলি অনেকটা এরকম ছিল, ‘ড্রেসিং রুমে সবাই খুব ভেঙে পড়েছে। গত এক বছর ধরে এই টুর্নামেন্টের জন্য প্রচণ্ড কষ্ট করেছি আমরা। অনেক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করেছি। অথচ এখানে বাংলাদেশের সঙ্গে তিন ঘণ্টার এক ম্যাচে ৮ রানে হারলাম, আরেকটি ম্যাচ খেলতেই পারলাম না, এরপরই বাদ, এটা মেনে নেওয়া কঠিন।’
আরেকটু বেশি সুযোগ, আরও বেশি ম্যাচ খেলার দাবি জানিয়েছিলেন তিনি। কাতর অনুরোধও করেছিলেন। ক্রিকেটের বিশ্বায়ন যে সত্যিকার অর্থে দ্রুত হচ্ছে না, সহযোগী দেশগুলির প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে না, সব তুলে ধরেছিলেন।
আজও চিত্র খুব বেশি বদলায়নি। এই বাছাই থেকে দুটি দল বিশ্বকাপে যাবে। অথচ শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড়াও নেদারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, স্কটল্যান্ড – এমনকি এই বাছাইয়ে ভালো করতে না পারলেও আয়ারল্যান্ডও তো বিশ্বকাপ খেলার মতোই দল।
আইসিসির বিতর্কিত সিদ্ধান্তের তো এমনিতেই শেষ নেই। তবে ১০ দলের বিশ্বকাপের মতো বাজে সিদ্ধান্ত কমই হয়েছে।
এই যে নেপাল একটি উঠতি শক্তি। ক্রিকেট উন্মাদনা সেখানে অবিশ্বাস্য। তাদের জন্য আইসিসি কতটা কী করতে পারছে! একটা ভালো মাঠ পর্যন্ত নেই তাদের। যে ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে তারা খেলেন, অবকাঠামো সেখানে একদমই বাজে।
অন্তত মন্দের ভালো যে, ২০২৭ থেকে ১৪ দলের বিশ্বকাপ হবে। কিন্তু এই প্রজন্মের যারা, অনেকেই তখন থাকবেন না। অনেকেই যেমন ২০১৯ বিশ্বকাপ খেলতে না পেরে হারিয়ে গেছেন। নেদারল্যান্ড, স্কটল্যান্ডের মতো দেশগুলিতে ক্রিকেটারদের জন্য প্রতিটি দিনই তো অনিশ্চয়তার। অনেকের জন্য একটি বিশ্বকাপ খেলতে না পারা মানে একটি ক্যারিয়ারের সমাপ্তি, এক জীবনের আক্ষেপ।
– ফেসবুক থেকে