সমীকরণটা ছিল একেবারেই সরল। বাংলাদেশ যদি আফগানিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে হারাতে পারত, তাহলেই র্যাংকিংয়ের পাঁচ নম্বরে উঠে আসতে পারত সাকিব আল হাসানরা। তবে সেটা হয়নি, বরং উল্টো পথেই হেঁটেছে বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হেরে হোয়াইট ওয়াশের শঙ্কা মাথায় নিয়েই তৃতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে চান্দিকা হাতুরুসিংহের শিষ্যরা।
র্যাংকিংয়ে অধ:পতনের সম্ভাবনাও তাই বেশ প্রবল। তবুও এমন এক পরিস্থিতিতে আত্মবিশ্বাসীই মনে হয়েছে বাংলাদেশের সহকারী কোচ নিক পোথাসকে। পুরো সিরিজ জুড়ে শুধু নিক পোথাস-ই নন, আত্মবিশ্বাসের ফুলঝুরি ফুটিয়েছেন লিটন দাস, মেহেদি হাসান মিরাজও।
সংবাদ মাধ্যমের সামনে যখনই এসেছেন, বেশ ‘বোল্ড’ আচরণই করেছেন বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধিরা। লিটন দাস নিজের ব্যাটিং গড় নিয়ে চিন্তিত নন। অন্যদিকে, নিক পোথাসও গুণগান গাইলেন তাঁর শিষ্যের। তিনি বলেন, ‘না, সে বিশ্বমানের খেলোয়াড়।’ তিনিও দুশ্চিন্তার কারণ দেখেন না লিটন দাসের সাম্প্রতিক পারফরমেন্সে।
বাংলাদেশ দলের শেষ দু’টো ওয়ানডে সিরিজ বেশ ভালই কেটেছে। এর আগে অবশ্য ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২-১ এ সিরিজ হারলে সমানে সমালে লড়াই করেছিল বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে খেলা সিরিজগুলো বাংলাদেশের মানসিকতায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছিল। বিশ্বকাপে দারুণ কিছু করবার প্রত্যয়ে উজ্জীবিত ছিল গোটা দল, এমনকি পুরো দেশ।
তাই আফগানিস্তানের কাছে এভাবে মুখ থুবড়ে পড়াটা বেশ দৃষ্টিকটুই ঠেকেছে সবার কাছে। কিন্তু এখান থেকেও শিক্ষা নেওয়ার অনেক কিছু রয়েছে। বাংলাদেশ দল সে শিক্ষা যে গ্রহণ করছে বা করবে, তেমন কথা দ্বিতীয় ওয়ানডে শেষে জানিয়েছিলেন মেহেদি মিরাজ। আবার সেই একই ধারার বাক্যপ্রবাহই ঘটালেন নিক পোথাস।
তিনি মনে করেন, এই সিরিজে বাজে ভাবে হার বাংলাদেশের জন্য ভালই হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি হিসেবে এটি (চলমান সিরিজ) বেশ উপকারীই ছিল।’ হ্যাঁ, একটা দিক বিবেচনায় অবশ্যই এই সিরিজটি বাংলাদেশকে প্রস্তুতির ঘাটতি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তবে এই পুরো পরিস্থিতিতে, আফগানিস্তানের স্পিনারদের প্রশংসাই করেছেন নিক পোথাস।
তাঁর মতে, বিশ্বের কোন দেশেই একসাথে তিনজন দুর্ধর্ষ স্পিনার দেখা যায় না, যারা কিনা প্রতিনিয়ত ভড়কে দিতে পারে প্রতিপক্ষের ব্যাটারকে। এদিক থেকে আফগানিস্তানের বোলিং আক্রমণ রীতিমতো অনন্য। রশিদ খানের গুগলি আর মুজিবের মিস্ট্রি স্পিন যেকোনো দলের জন্য যথেষ্ট। আর কোনভাবে এগুলো সামলে উঠতে পারলেও নিস্তার নেই, আছে মোহাম্মদ নাবির কনভেনশনাল অফ স্পিন।
শুধু স্পিন বিভাগ নয়, আফগানিস্তানের পেস এটাকও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ভয়ের কারণ। ফজল হক ফারুকি, আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের বলেও বারবার পরাস্ত হন লিটন, তামিমরা। বিশেষ করে ফারুকি একাই বাংলার টপ অর্ডার ধসিয়ে দিতে জানেন। সব মিলিয়ে আফগানিস্তানের বোলিং বিভাগকে সমীহ না করে উপায় নেই।
বিশ্বকাপকে সামনে রেখে আয়োজিত আফগানিস্তান সিরিজ নানান কারণেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে এই সিরিজ জিতলেই যেমন অনেক কিছু হয়ে যেত না, তেমনি পরাজয়েও সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। বরং বিশ্বমানের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে নিজেদের দুর্বলতা যাচাই করতে পেরেছে টিম টাইগার্স। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসময় দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারলে আফগানদের বিপক্ষে সিরিজ হার শাপে বর হয়ে উঠবে।
২০০৭ সালের বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়া ঘরের মাঠে বিধ্বস্ত হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের কাছে। কিন্তু বড় দলগুলোর এই এক স্বভাব, তারা দ্রুত শিখতে জানে। তাই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ঠিকই বিশ্বকাপে বাজিমাত করেছিল অজিরা। টাইগাররাও কি পারবে তেমন কিছু করতে, করতে পারলে অবশ্য দারুণ কিছু অপেক্ষা করছে টিম বাংলাদেশের জন্য।