‘স্টারকিড’ মানেই অবারিত সাফল্য নয়

কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত ছিলেন তাঁর সময়ের ভারতের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। ভারতের অন্যতম সেরা ধারাভাষ্যকার হিসেবেও তিনি বেশ পরিচিত। বিশেষ করে তিনি নিজের সময়ে মারমুখী সূচনার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। ৪৩ ম্যাচে ২০৬২ রান টেস্ট ও ১৪৬ ওয়ানডেতে ৪০৯১ রান করেন তিনি। তবে ছেলে অনিরুদ্ধ শ্রীকান্ত জাতীয় দলের গালিচায় পা মাড়াতে পারেননি। ২০১১ সালে আইপিএলের চেন্নাইয়ের প্রথম ম্যাচে দলকে জেতানো ব্যাটিং করেছিলেন অনিরুদ্ধ। কিন্তু নিয়মিত পারফর্ম করতে না পারার কারণে চেন্নাই দল থেকে বাদ পড়েন তিনি।

ক্রিকেট ইতিহাসে বাবা-ছেলে জুটি আছে বেশ কিছু। স্বজনপ্রীতি নিয়েও কম আলোচনা হয় না। অনেকের মতে, ক্রিকেট ইতিহাসে বেশ কিছু ক্রিকেটার স্রেফ বাবার পরিচয়ে খেলতে পেরেছেন। তবে স্বজনপ্রীতি ছাপিয়ে অনেক ক্রিকেটারই বাবার অর্জনের তুলনায় ছিটেফোঁটাও নিজের নামে করতে পারেননি।

ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের কিছু তারকা ক্রিকেটার ও তাঁদের ছেলেদের ক্যারিয়ার নিয়ে আলোচনা করা যাক। তালিকাটা দেখলেই বোঝা যাবে – স্টারকিড হলেই সফল হওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

  • সুনিল গাভাস্কার ও রোহান গাভাস্কার

ভারতের প্রথম লিটল মাস্টার তকমা পাওয়া সুনিল গাভাস্কার প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ১০ হাজার রান পূর্ণ করেন। ভারতের কিংবদন্তি এই তারকা ক্রিকেটার ছেলে রোহান গাভাস্কারের অর্জনের খাতাটা সেদিক থেকে বেশ খালি।

ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলা সুনিলের ছেলে রোহান নিজেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেভাবে মেলেও ধরতে পারেনি। মাত্র ১১ ওয়ানডেতে সুযোগ পেয়ে এক ফিফটিতে করেছেন ১৫১ রান। বাবার কীর্তির ছিটেফোঁটাও দেখাতে পারেননি সাবেক এই ভারতীয় ক্রিকেটার।

  • রজার বিনি ও স্টুয়ার্ট বিনি

ভারতের ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম সদস্য ছিলেন রজার বিনি। ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েডকে আউট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন এই পেসার।

বিশ্বকাপজয়ী এই ক্রিকেটার ২৭ টেস্ট ও ৭২ ওয়ানডে খেলেছেন। আছে একশোর বেশি উইকেট। বিপরীতে ছেলে স্টুয়ার্ট বিনি ভারতের জার্সি গায়ে খেলেছেন মোটে ৬ টেস্ট, ১৪ ওয়ানডে ও ৩ টি-টোয়েন্টি।

বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে এক ম্যাচে মাত্র ৪ রানে ৬ উইকেট শিকার করেন তিনি; ভারতের হয়ে ইনিংসে সেরা বোলিং ফিগার। এই এক স্পেল ছাড়া জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তেমন কিছুই করতে পারেননি স্টুয়ার্ট বিনি।

  • বিজয় মাঞ্জরেকার ও সঞ্জয় মাঞ্জরেকার

তার সময়ে ভারতের অন্যতম টেস্ট ব্যাটার ছিলেন বিজয় মাঞ্জরেকার। ৫৫ ম্যাচে তিনি করেছেন ৩ হাজারের বেশি রান। ৭ সেঞ্চুরি ও ১৫ সেঞ্চুরি নিজের নামে করেছেন সাবেক এই ভারতীয় তারকা। আছে ১৮৯ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস।

বিপরীতে, বিজয়ের পুত্র সঞ্জয় মাঞ্জরেকার ৩৭ টেস্টে করেছেন ২০৪৩ রান। ৭৪ ওয়ানডেতে খেললেও ২ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করতে পারেননি। যে সুযোগ তিনি পেয়েছেন – সে হিসেবে বাবার তুলনায় পরিসংখ্যানে বেশ পিছিয়ে আছেন সঞ্জয়।

  • অনিরুদ্ধ শ্রীকান্ত ও কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত

কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত ছিলেন তাঁর সময়ের ভারতের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। ভারতের অন্যতম সেরা ধারাভাষ্যকার হিসেবেও তিনি বেশ পরিচিত। বিশেষ করে তিনি নিজের সময়ে মারমুখী সূচনার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। ৪৩ ম্যাচে ২০৬২ রান টেস্ট ও ১৪৬ ওয়ানডেতে ৪০৯১ রান করেন তিনি।

তবে ছেলে অনিরুদ্ধ শ্রীকান্ত জাতীয় দলের গালিচায় পা মাড়াতে পারেননি। ২০১১ সালে আইপিএলের চেন্নাইয়ের প্রথম ম্যাচে দলকে জেতানো ব্যাটিং করেছিলেন অনিরুদ্ধ। কিন্তু নিয়মিত পারফর্ম করতে না পারার কারণে চেন্নাই দল থেকে বাদ পড়েন তিনি।

  • দিলীপ দোশি ও নয়ন দোশি

আশির দশকে ভারতের অন্যতম সেরা স্পিনার ছিলেন দিলীপ দোশি। ৩২ বছর বয়সে অভিষেক হয় এই স্পিনারের। এরপর ৩৩ টেস্টে তিনি ১১৪ উইকেট শিকার করেন। ছেলে নয়ন দোশিও ছিলেন একজন বাঁ-হাতি স্পিনার।

আইপিএলে খেলার সুযোগ পেলেও জাতীয় দলে কখনো খেলার সুযোগ হয়নি নয়নের। ২০২১ সালের আইপিএলে তিনি সবচেয়ে বয়স্ক ক্রিকেটার হিসেবে নিলামে অংশ নিলেও কেউ তাঁকে নিতে আগ্রহী হয়নি।

  • শচীন টেন্ডুলকার ও অর্জুন টেন্ডুলকার

বাবা শচীন টেন্ডুলকার ক্রিকেট ইতিহাসের জীবন্ত এক কিংবদন্তি। টেস্ট ও ওয়ানডেতে তিনি সর্বোচ্চ রানের মালিক। একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে আছে একশো আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি। বাবার মত ঈশ্বর প্রদত্ত প্রতিভা নিয়ে অর্জুন আসেননি।

এখন পর্যন্ত ক্রিকেটে নজর কাড়া কিছুই করে দেখাতে পারেননি অর্জুন। কিন্তু এরই মধ্যে কয়েক আসরে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে দল পেয়েছেন। ম্যাচ না পেলেও বড় বড় ক্রিকেটারদের সাথে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুযোগটা হয়েছে তাঁর।

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...