আম্পায়ারকে আঙুল তুলতে দেখেই ফুঁসে ওঠেন হারমানপ্রিত কৌর। শুরুতে এক হাত দিয়ে থাবা মারেন আরেক হাতে ধরে রাখা ব্যাটে। আম্পায়ারের দিকে থাকেন আগুনে দৃষ্টিতে।
এরপর ব্যাট দিয়ে স্টাম্পে এতটাই জোরে মারেন যে, একটি স্টাম্প উড়ে গিয়ে পড়ে অনেকটা দূরে। ক্রিজ ছেড়ে যাওয়ার সময় আম্পায়ারের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে থাকেন টানা। এরপর ড্রেসিং রুমে ফেরার পথে গ্যালারির দর্শকদের উদ্দেশে দেখান ‘থামস আপ’।
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ম্যাচ নিয়ে। দুই দফায়। দুবারই তিনি আম্পায়ারিংকে টেনে এনেছেন। আম্পায়ারিং নিয়ে অনেক সময়ই টুকটাক কিছু আপত্তি-অভিযোগ ক্রিকেটাররা করেন।
সেখানে রাখঢাক থাকে, ইঙ্গিত থাকে। কিন্তু প্রকাশ্যে এতটা ঢালাওভাবে আম্পায়ারিংকে কাঠগড়ায় তোলার নজির আধুনিক ক্রিকেটে বিরল।
কোনোটিই গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু তর্কে খাতিরে ধরে নিলাম, মাঠে আউট হয়ে ‘হিট অব দা মোমেন্ট’ অমন বলেছেন, ম্যাচ শেষে জিততে না পারায় তাৎক্ষণিক যন্ত্রণায় পুরস্কার বিতরণীতে অমন বলেছেন। কিন্তু এরপর?
ট্রফি ও পতাকা নিয়ে উল্লাস করতে থাকা বাংলাদেশ দলের দিকেও কটূ মন্তব্য ছুড়ে দেন ভারতীয় অধিনায়ক। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের উদ্দেশে তিনি বলতে থাকেন, এই ম্যাচ বাংলাদেশ জেতেনি, আম্পায়াররা জিতিয়েছে। ফটোসেশনে যেন আম্পায়ারদেরও ডেকে নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার সুলতানা এক পর্যায়ে রেগেমেগে দল নিয়ে চলে যান সেখান থেকে। পড়ে থাকে ট্রফি। পরে সংবাদ সম্মেলনে নিগার বলেন, ‘কিছু কথা…সবসময় তো সবকিছু বলা যায় না। যা হয়েছে, আমার কাছে মনে হয়নি যে আমার দল নিয়ে ওখানে থাকব। তো আমি চলে এসেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিছু কথা ছিল যে আমার মনে হয়নি ওখানে থাকা উচিত হবে দল নিয়ে। কারণ, ক্রিকেট খুবই সম্মানজনক একটি জায়গা। শৃঙ্খলার জায়গা। জেন্টলমেন’স গেম। আমার কাছে মনে হয়েছে, ওই পরিবেশ ছিল না। তাই দল নিয়ে চলে এসেছি।’
‘ও যেটা করেছে, সেটা ওরই। সেটা আমাদের কোনো কিছু নয়। তবে আমি বলব, ক্রিকেটার হিসেবে সে আরেকটু ভালোভাবে কথা বলতে পারত। তবে ও করেছে, ওর ব্যাপার। আমার কোনো মন্ত্য করা উচিত হবে না।’, যোগ করেন তিনি।
হারমানপ্রিত যে আউট হয়েছেন, সেটির রিপ্লে দেখলে বারবার আউট বলেই মনে হয়। ব্যাটে-গ্লাভসে স্পর্শ করলে স্লিপে ক্যাচ। স্পর্শ না করলে প্রায় নিশ্চিত এলবিডব্লিউ। আম্পায়ার দিয়েছেন ক্যাচ।
ইয়াস্তিকা ভাটিয়া আউট নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন। তার আউট এখনও ইউটিউবে গিয়ে দেখুন। এতটা ব্যাক ফুটে, স্টাম্পের একদম সামনে, আউট না হয়ে উপায় নেই।
শেষ ব্যাটার মেঘনা সিং আউট ছিলেন কি না, বোঝার উপায় নেই। আল্ট্রা এজ তো নেই। তবে কিপারের গ্লাভসে বল যাওয়ার পরই মেঘানা হাঁটা দিয়েছিলেন। আম্পায়ার আঙুল তোলেন একটু পর। নন-স্ট্রাইকে থাকা জেমিমা আপত্তি জানানোর পর মেঘনাও থমকে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।
কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েই এত আপত্তি জানানোর কিছু নেই। এত বিস্ফোরক হয়ে ওঠা তো বহুদূর। ম্যাচ ভারতের মুঠোয় ছিল। তাদের একাদশের ৯ জনই ভালো ব্যাট করতে পারেন। তারা আজকে ব্যর্থ হয়েছেন। কালকে ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপে যেমন বাংলাদেশ বাজে ব্যাটিং করে জঘন্যভাবে হেরেছে।
মেয়েদের ক্রিকেটে ভারত পরাশক্তি। বাংলাদেশে এসে একটি ম্যাচও হারবেন, এটা হয়তো ভাবতে পারেননি হারমানপ্রিত। কিন্তু বাংলাদেশ তাদের কঠিন পরীক্ষা নিয়েছে। তাঁর মেজাজ খারাপ হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।
কিন্তু ১৪ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা একজন, যিনি তিনশর কাছাকাছি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছন, বিশ্বের সেরা ব্যাটারদের একজন, খেলাটির একজন অ্যাম্বাসেডরও। তার কাছে থেকে এরকম আচরণ শুধু অগ্রহণযোগ্যই নয়, বাংলাদেশ দলের প্রতি, ক্রিকেট খেলাটার প্রতিই অসম্মানজনক।
– ফেসবুক থেকে