হারমানপ্রীত কৌরকে নিয়ে আলোচনা যেন থামছেই না, বাংলাদেশে তো বটেই নিজ দেশ ভারতেও কঠিন সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। আউটের পর স্ট্যাম্পে আঘাত করা কিংবা ম্যাচ প্রেজেন্টেশনে বাজে মন্তব্য – এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের নামে জমা হয়েছে একাধিক অভিযোগ; সেসবের জন্য যদিও শাস্তি পেয়েছেন তিনি।
আইসিসি তাঁকে দুই ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করেছে। ফলে খেলতে পারবেন না এশিয়া কাপের প্রথম দুই ম্যাচ। শাস্তি পেলেও হারমানপ্রীত কৌরের উপর বিরক্তি কমেনি সাবেক ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটার ডায়ানা এডুলজি। ভারত কাপ্তানের এমন আচরণে ব্যথিত হয়েছেন তিনি। হারমানপ্রীতের সমালোচনা করেছেন আরেক ভারতীয় গ্রেট মিতালি রাজও।
ডায়ানা এডুলজি লিখেন, ‘ঢাকায় ভারত-বাংলাদেশ নারী দলের খেলা দেখে আমি খুব বিরক্ত হয়েছি। আমি অনেক দিন ধরে ক্রিকেট দেখছি কিন্তু ভারতীয় অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের মত কাউকে এমন আচরণ করতে দেখিনি। বাংলাদেশে যা ঘটেছে সেটি অনভিপ্রেত।’
অন্যদিকে হিন্দুস্থান টাইমসে দেওয়া এক কলামে মিতালি রাজ লিখেছেন, ‘হারমানপ্রীত ভালো খেলোয়াড়। অসংখ্য বাচ্চাদের কাছে ও রোল মডেল। দায়িত্ববান ক্রিকেটার হিসেবে যে কাউকে মাঠে এবং মাঠের বাইরে সম্মানজনক আচরণ করতে হবে। আগে মেয়েদের ক্রিকেটের এত সম্প্রচার হত না বা সোশ্যাল মিডিয়ায় নারী ক্রিকেটের এতটা অস্তিত্ব ছিল না। এখন সবকিছু জনসক্ষমে আছে। আর যা কিছু ঘটতে দেখে, তা অনুকরণ করার চেষ্টা করে বাচ্চারা। যারা খেলাটাকে পেশা হিসেবে নিতে যায়।’
মাঠে আম্পায়ারদের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নতুন কিছু নয়, নারী দলের ম্যাচে তো বটেই পুরুষদের খেলাতেও এমন ঘটনা হরহামেশাই দেখা যায়। আর সেসব ক্ষেত্রে ক্রিকেটারদের মেজাজ হারানোও স্বাভাবিক।
তাই হারমানপ্রীতের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখানোয় খুব একটা সমস্যা মনে করেন না ডায়ানা এডুলজি। কিন্তু ম্যাচ পরবর্তী সময়ে যা করেছেন ভারতীয় অলরাউন্ডার তাতে মন:ক্ষূণ্ন হয়েছেন তিনি।
সাবেক এই টেস্ট ক্রিকেটার মনে করেন সীমা অতিক্রম করেছে হারমানপ্রীত। তাঁর মতে, ‘হারমানপ্রীত কৌর আম্পায়ারদের বাংলাদেশ দলের সাথে ছবি তোলার জন্য ডাকতে দেখা দু:খজনক ছিল, এমনকি সে তাদের (আম্পায়ারদের) বাংলাদেশ দলের অংশ বলেছিল। আমি জানি যে হারমান একটু মেজাজী কিন্তু উপস্থাপনা অনুষ্ঠানে সে সীমা অতিক্রম করেছিল।’
মিতালির মতে, ‘
‘আগ্রাসী হওয়ার মধ্যে কোনও ভুল নেই। একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত আবেগের বহি:প্রকাশেও কোনও ভুল নেই। কিন্তু কেউ এটা ভুলে গেলে চলবে না যে কোনও ব্যক্তির ঊর্ধ্বে আছে খেলাটা। হারমানের যন্ত্রণা গ্রহণযোগ্য হলেও ওরকম আচরণ ক্ষমার যোগ্য নয়। ম্যাচে যা হয়, সেটা ওখানেই রেখে আসা উচিত।’
মূলত অধিনায়ক হওয়ায় হারমানপ্রীত কৌরের উপর বেশি অসন্তুষ্ট হয়েছেন ডায়ানা এডুলজি। তিনি তাঁর সতীর্থদের জন্য একটি খারাপ উদাহরণ স্থাপন করেছেন। কেননা দলের জুনিয়ররা সিনিয়রদের থেকেই শেখে এবং তাদের আচরণ দলের সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করতে পারে।
এসব কারণে হারমানপ্রীতের আচরণ আরও অগ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে এডুলজির কাছে। অন্যদিকে, মিতালি মনে করেন, দলের সিনিয়র একজন খেলোয়াড় এমনটা করতে পারেন না।
তিনি লিখেছেন, ‘২০১৬ সাল থেকে ভারতীয় টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কত্ব করছে হারমান। ফলে ও ভালোভাবেই নিয়মকানুন (প্রোটোকল) জানে। নারী ক্রিকেটের ক্ষেত্রে কিছু সময় আগেই দ্বিপাক্ষিক সিরিজে ডিআরএস (ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম) চালু করা হয়েছে। তার আগে তো বহুবার বাজে আম্পায়ারিংয়ের শিকার হয়েছে খেলোয়াড়রা। কিন্তু আমার যতদূর মনে পড়ছে, তাতে কেউ কখনও এরকম আচরণ করেনি।’
এছাড়া দলের পারফরম্যান্স নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ডায়ানা এডুলজি। সেই সাথে মতামত দিয়েছেন ক্রিকেটারদের ফিটনেস ইস্যুতেও। তিনি বলেন, পারফর্ম করতে না পারা আরো বড় দুশ্চিন্তার কারণ।
বোর্ড তাঁদের জন্য সবকিছু করা সত্ত্বেও তাদের খেলায় উন্নতির ছাপ পাননি তিনি। এছাড়া হারমানদের ফিটনেসও যথেষ্ট মনে হয়নি তাঁর কাছে। সেই সাথে শেফালি ভার্মা, জেমিমাহ রদ্রিগেসদের সিরিয়াসনেস নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এই কিংবদন্তি।
লম্বা সময় ধরেই ভারতীয় নারী দলে স্থায়ী কোচ নেই; সেটা নিয়েও ক্রিকেট বোর্ডের সমালোচনা করেছেন ডায়ানা এডুলজি। দ্রুত স্থায়ী কোচ নিয়োগ দেয়ার পরামর্শও দিয়েছেন টিম ম্যানেজম্যান্টকে।
তিনি বলেন, ‘স্থায়ী কোচ নিয়োগে এত বিলম্ব কেন? আপদকালীন কোচেরা দল নিয়ে চিন্তিত নয় কারণ তারা মনে করে আমরা তো অল্প সময়ের জন্য আছি।’