একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর ব্যাটিং গড় ৬৫.৫৫। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সেটা ৪০.৪০। কিন্তু ফরম্যাট টা যখন টেস্ট হয়ে যায়, তখন ব্যাটিং গড় বেশ নিম্নগামী, কোনো মতে ত্রিশ ছাড়িয়ে ৩২.২০। সাদা বলের ক্রিকেটে দুর্দান্ত শুভমান গিল কেন লাল বলের ক্রিকেটে গড়পড়তা?
এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজেছেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার উরকেরি ভেক্টর রমন। তাঁর মতে, লাল বলের ক্রিকেটে শুভমান গিলের সফল না হওয়ার কারণটা হচ্ছে তাঁর ব্যাটিং টেকনিক। মূলত, দ্রুত গতির বল বটম হ্যান্ডে গিল খেলতে কিছুটা তাড়াহুড়ো করে ফেলছেন বলে মনে করছেন রমন।
ভারতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক এ কোচ মনে করেন, টেস্ট ক্রিকেটের ট্র্যাকটা মূলত পেসারদের জন্য গতিশীলই থাকে। আর এ সময়ে যে ভুলটা গিল করছেন তা হলো, তিনি বল খেলার সময় ফ্রন্ট ফুটের ঠিকঠাক পজিশন নিশ্চিত করতে পারছেন না। এ কারণে বল ইনসাইড কিংবা আউটসাইড এজ হয়ে উইকেটরক্ষক নয়তো স্লিপে থাকা ফিল্ডারদের তালুবন্দী হচ্ছে।
এ নিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আমি ওর ব্যাটিং মুভমেন্টে স্থির কিছু দেখি না। ও খুব তাড়াতাড়ি ব্যাট চালায়। এমন টেকনিকে যে সফল হবে না, তা নয়। কিন্তু এই টেকনিকে তাঁর অনেক দিন বাজেও যাবে। এই মুহূর্তে গিলের সেই বাজে দিনটাই যাচ্ছে।’
উরকেরি রমনের মতে, গিলের এমন অফফর্মের আরেকটি কারণ হলো, ব্যাটিংয়ের সময় তাঁর কাঁধ বল বরাবর সমন্বয়ে থাকে না। কিছুটা এক পাশে ঝুঁকে থাকে। আর এ কারণেই পায়ের পাতার মুভমেন্টও ঠিকঠাক হয় না। আর তাই বল ফেস করার ক্ষেত্রে নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণটাও থাকছে না।
গিলের ব্যাটিংয়ের আরো কয়েকটি সমস্যার কথা তুলে ধতে সাবেক এ ক্রিকেটার আরো বলেন, ‘গিল ৯০ ডিগ্রি এঙ্গেলে ব্যাট মুভমেন্ট করে। এই ব্যাপারটা তাঁর আসলে বুঝা উচিৎ। ওর এখন কোচের পরামর্শ নেওয়া দরকার। নিজের মধ্যে ব্যাটিং নিয়ে বোধোদয় ঘটাতে। অনেকের সাথে কথা বলতে হবে। তবেই সব কিছু সহজসাধ্য হবে।’
অবশ্য গিলের ব্যাটিং ত্রুটি নিয়ে কথা বললেও তাঁকে ভারতের ভবিষ্যৎ তারকাই ভাবছেন উরকেরি রমন। তিনি বলেন, ‘সে কিন্তু রান করছে। আমার বিশ্বাস, ভবিষ্যতেও করবে। ও যেভাবে রান করছে, সেটাই ওকে অনেক অনুপ্রাণিত করবে। এটা সবচেয়ে ইতিবাচক দিক।’
তবে গিলকে বটম হ্যান্ডে না গেলে আপার হ্যান্ডে খেলার পরামর্শ দিয়ে রমন বলেন, ‘অনেকেই বটম হ্যান্ডে খেলতে পছন্দ করেন। সফলতাও পান। কিন্তু তার অনুপাত কম। এ জন্য আদর্শ ব্যাটার হতে প্রয়োজন কাঁধের পজিশন সাম্যবস্থায় রেখে আপার হ্যান্ডে খেলা। এই যেমন রাহুল দ্রাবিড়। তাঁর ব্যাটিং স্ট্যান্স, লিফট, দুটোই দুর্দান্ত ছিল। কিন্তু এর চেয়েও দারুণ ছিল ওর ব্যাটিং টেম্পারমেন্ট। এখনকার সময়ে অধিকাংশই বটম হ্যান্ডে খেলেন। হিটিং শটও আসে তাতে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে হিটিংয়ের চেয়ে প্রয়োজন উইকেট বেশি সময় কাটানো।’
এরপর ভারতের নারী দলের অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘হারমান শুরুর দিকে বটম হ্যান্ডে খেলতো। এটা ওকে অনেক ভুগিয়েছেও। কিন্তু এখন সে আপার হ্যান্ডে স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে পারে। আশা করছি, গিলও এটা খুব দ্রুতই রপ্ত করে নিতে পারবে।’