দেশের টানে বাকি সব তুচ্ছ

দেশের হয়ে খেলার জন্য থাকতে হবে শতভাগ ফিট, নেয়া যাবে না ইনজুরির ঝুঁকি; তাই তো তাসকিন আহমেদও খেলতে যান নি বিদেশি লিগে।

প্রথমে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ, এরপর পাকিস্তান সুপার লিগ হয়ে জিম আফ্রো টি-১০ লিগ, সবশেষে লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ – এত এত ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট থেকে ডাক এসেছে তাসকিন আহমেদের কাছে; অথচ তিনি খেলেছেন কেবল মাত্র জিম আফ্রো টি-১০ লিগে, বাকি সব আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিয়েছেন। কারণটাও জানা আছে সবার, দেশের স্বার্থ।

দেশের হয়ে খেলার জন্য থাকতে হবে শতভাগ ফিট, নেয়া যাবে না ইনজুরির ঝুঁকি; তাই তো তাসকিন আহমেদও খেলতে যান নি বিদেশি লিগে। স্বাভাবিকভাবেই মোটা অংকের অর্থ হাতছাড়া হয়েছে, কিন্তু লাল-সবুজের জার্সির প্রতি তাৃর নিবেদন তো বিত্তের হাতছানির চেয়ে শক্তিশালী।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ চলাকালীন লক্ষ্মৌ সুপার জায়ান্টসের মেন্টর গৌতম গম্ভীর যোগাযোগ করেছিল এই পেসারের সাথে, কিন্তু বাংলাদেশের হয়ে লাল বলে খেলার জন্য উপেক্ষা করেছিলেন সেই ডাক। পরবর্তীতে পাকিস্তান সুপার লিগেও খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু সেবারও ইনজুরি শঙ্কায় যাওয়া হয়নি বাবর আজমদের দেশে।

 

সর্বশেষ লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে খেলার জন্য এনওসি পাননি তাসকিন আহমেদ। আগামী কয়েক মাসের ব্যস্ত সূচির কথা ভেবে এই এক্সপ্রেস পেসারকে শ্রীলঙ্কা ভ্রমণে বারণ করেছে ক্রিকেট বোর্ড। তাতে কোটি ভক্তের মন খারাপ হলেও তাসকিনের আপত্তি নেই। এশিয়া কাপ আর বিশ্বকাপে নিজের সেরাটা দিতে মুখিয়ে আছেন তিনি।

যদিও জিম্বাবুয়েতে অনুষ্ঠিত জিম আফ্রো টি-১০ লিগে খেলেছেন তাসকিন আহমেদ, আর সেখানের প্রমাণ করেছেন ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে কতটা সফল হতে পারতেন তিনি। দশ ওভারের এই টুর্নামেন্টে যেখানে বোলারদের ইকনোমি দশ হলেও প্রশংসনীয় সেখানে পাওয়ার প্লে তে নিয়মিত বোলিং করা ‘ঢাকা এক্সপ্রেস’ ওভারপ্রতি খরচ করেছেন মাত্র ৭.৮৬ রান।

টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেরা উইকেটশিকারীও তাসকিন আহমেদ। তাঁর দল নক আউট পর্বে উঠতে পারলে হয়তো সেরা বোলার হতে পারতেন তিনি; এমনকি পেতে পারতেন টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার। শুধু পরিসংখ্যানে তাসকিনের পারফরম্যান্স অনুভব করা যায় না, গতি, বাউন্স, সুইংয়ের যে ভেলকি দেখিয়েছেন তিনি তাতে দর্শক থেকে ধারাভাষ্যকার, মুগ্ধ হতে হয়েছে সবাইকে।

বিধ্বংসী ফর্মের এই তাসকিন আহমেদ যদি নিয়মিত খেলতে পারতেন ভিনদেশী টুর্নামেন্ট, তাহলে নিঃসন্দেহে নিলামের ময়দানে কাড়াকাড়ি হতো তাঁকে নিয়ে, কেননা তাঁর মত পারফর্মারকে দলে ভেড়াতেই তো কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা নিয়ে বসে আছে ফ্রাঞ্চাইজিগুলো।

কিন্তু তাসকিন আহমেদের কাছে দেশ-ই আগে, দেশের হয়ে একটা ম্যাচ খেলা তাঁর কাছে কোটি টাকার চেয়ে মূল্যবান। তাই তো হাসি মুখেই তিনি ফিরিয়ে দেন টি-টোয়েন্টি লিগে খেলার প্রস্তাব; অর্থের ঝনঝনানি ফিরে যায় তাঁর দরজা থেকে।

তাসকিন আহমেদ যে অন্য অনেকের চেয়ে আলাদা, সেটা তাঁর পরিশ্রম আর চেষ্টা দেখলেই বোঝা যায়। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর তাসকিনের মত এমন জমকালো প্রত্যাবর্তন আর কেই-বা করতে পেরেছে? ক’জনই বা পেরেছে ইনজুরিকে হারিয়ে পেস আক্রমণের নেতা হয়ে উঠতে?

একান্ত সাধনায় লাল-সবুজের জার্সি ফিরে পাওয়া তাসকিনের পুরোটা ভাবনা বাংলাদেশ দল নিয়েই; তাই তো মিচেল স্টার্কের মতই দেশকে বড় কিছু উপহার দেয়ার লক্ষ্যে তিনি ফিরিয়ে দেন অর্থের প্রলোভন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...