যে কারণে সাত নম্বরে অচল মাহমুদউল্লাহ

সাত নম্বর, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ – বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপের আগে ঘুরে ফিরে এসবই ক্রিকেটাঙ্গনের হট টপিক। কেউ চাচ্ছেন মাহমুদউল্লাহকে দলে রাখা হোক, কেউ তার উল্টোটা বলছেন। যারা তাঁকে দলে দেখতে চান তারা মূলত রিয়াদের অভিজ্ঞতা আর অন্যদের ব্যর্থতাকে পুঁজি করেই এই দাবি তুলছেন; কিন্তু সাত নম্বরে রিয়াদের পারফরম্যান্স যথেষ্ট সেটা বলতে পারছেন না।

অর্থাৎ রিয়াদ ইস্যুতে সৃষ্ট দু’পক্ষই অন্তত এটা মেনে নিয়েছেন সাত নম্বরে এই ব্যাটার মোটামুটি অচল। কিন্তু সেটা লুকানোর জন্য কখনো ব্যাটিং গড়ের পরিসংখ্যান টেনে আনা হয়, কখনো আবার হাল ধরার অজুহাত দেয়া হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রায়ই একটা তথ্য দেখা যায়, সাত নম্বরে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটিং গড় সবচেয়ে সেরা। যদিও সাত নম্বরে খেলা একজন ক্রিকেটারের কাছে দল যা চায় সেটা কিন্তু বড় রান গড়ার ভিত নয়, বরং শেষদিকে নেমে ঝড়ো ইনিংস খেলাই তাঁর প্রথম এবং প্রধান কাজ।

তাই তো স্ট্রাইক রেট হচ্ছে ফিনিশার ভূমিকায় খেলা ব্যাটারদের ইম্প্যাক্ট বোঝার উপায়। স্ট্রাইক রেট ঠিক থাকলে তারপর ব্যাটিং গড় কিংবা অন্যান্য পরিসংখ্যান হিসেবে আনা যেতে পারে।

অথচ এই স্ট্রাইক রেটের দিক দিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বড্ড পিছিয়ে। সাত নম্বরে ১০০০ রান করা পনেরোজন ব্যাটারদের মধ্যে স্ট্রাইক রেট বিবেচনায় তিনি তেরোতম। তাঁর পিছনে আছে ক্রিস হ্যারিস এবং খালেদ মাসুদ পাইলট – এই দুইজন খেলেছেন নব্বইয়ের দশকে; সেসময় ব্যাটারদের স্ট্রাইক রেট ততটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।

কিন্তু এখন ক্রিকেটের রূপরেখা বদলে গিয়েছে। শুধু বেশি রান করাই নয়, কেমন গতিতে রান করছেন সেটাও মুখ্য বিষয়। এই যেমন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সমসাময়িক ফিনিশাররা ওভারপ্রতি রান করেছেন ৫.১৫, অন্যদিকে পাইলট, হ্যারিসদের সময় সেটা ছিল ৪.৩৭।

এই যুগে এসে তাই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের স্ট্রাইক রেট দুশ্চিন্তার বিষয়, ওভারপ্রতি মাত্র ৪.৬৫ রান করা রিয়াদ যে অন্যান্য ফিনিশারদের সাথে পাল্লা দিতে পারছেন না সেটা স্পষ্ট। তাই তো ৭৭.২৯ স্ট্রাইক রেটে সাত নম্বরে ব্যাটিং করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দলে নিতে আগ্রহী নন স্বয়ং হেডকোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের এই ধীরগতির ব্যাটিংকে যৌক্তিক প্রমাণ করার জন্য আরেকটা মিথ প্রচলিত রয়েছে – ব্যাটিং ধ্বস হলে তিনি নাকি হাল ধরেন। হ্যাঁ, একটা সময় পর্যন্ত ব্যাটিং লাইনআপে ভরসা করার মত একটা নাম ছিল রিয়াদ; কিন্তু ২০১৯ বিশ্বকাপের পর থেকে রিয়াদের সেই ত্রাতা হয়ে ওঠা তেমন একটা দেখা যায়নি।

২০২২ সালে আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কিংবা ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বেশ কয়েকবার ব্যাটিং ধ্বসের মুখোমুখি হয়েছিল টিম বাংলাদেশ। সেসময় দলের হাল ধরা তো দূরে থাক উল্টো বিপদ বাড়িয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কখনো দ্রুত আউট হয়েছেন টপ অর্ডার ব্যাটারদের মতই, কখনো অতিরক্ষণশীল হয়ে চাপ বাড়িয়েছেন সতীর্থ ব্যাটারের উপর।

আবার অনেক ম্যাচে দলের ভাল অবস্থাতেই ক্রিজে এসেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু শুরুর ব্যাটসম্যানদের সাথে তাল মেলাতে পারেননি তিনি, ফলে স্কোরকার্ড ধীরে ধীরে গতি হারিয়েছে।

মূলত বয়সের সাথে সাথে মাহমুদউল্লাহর রিফ্লেক্স, হ্যান্ড আই কো-অর্ডিনেশন অনেকটা অকেজো হয়ে পড়েছে। তাই স্ট্রাইক রোটেট, বাউন্ডারি আদায় করাটা কঠিন হয়ে গিয়েছে এই ডানহাতির জন্য। সবমিলিয়ে রিয়াদের পারফরম্যান্স, এপ্রোচ টিম ম্যানেজম্যান্টের মনে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।

সর্বশেষ ভারত সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৯৬ বলে ৭৭ রান করেছিলেন। শেষদিকে স্লগ করতে না পারার দায় থাকলেও গত কয়েক বছরে এটিই তাঁর একমাত্র সময়োপযোগী ইনিংস ছিল। কিন্ত এই এক ম্যাচ বাদ দিলে, রিয়াদ বারবারই বুঝিয়ে দিয়েছেন সাত নম্বরে এখন আর তিনি পারছেন না।

ইনজুরির কারণে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এখন আর বোলিং করেন না। তাই দলে জায়গা পেলে স্পেশালিষ্ট ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলবেন তিনি। এখন দেখার বিষয়, অনুপযুক্ত একজন ফিনিশারকে সাত নম্বরের মত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সুযোগ দেয় কি না বাংলাদেশ, যদিও আপাতদৃষ্টিতে সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link