দল নির্বাচনের ভুলেই অ্যাশেজ হারিয়েছে ইংল্যান্ড

প্যাট কামিন্স এবং বেন স্টোকসের অধিনায়কত্বের ধরন আলাদা কিন্তু একথা স্বীকার করতেই হয় যে তারা দুজনেই প্রথম বল থেকেই জয়ের জন্য ঝাঁপাতে ভালোবাসেন।

তাদের মধ্যে একটি বড় পার্থক্য হল স্টোকসের দলের ব্যাটারদের শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং, যা কামিন্সকে কিছু রক্ষণাত্মক কৌশল প্রয়োগ করতে বাধ্য করেছে। ইনিংসের শুরুতে ভালো ব্যাটারদের সহজ সিঙ্গেল দেওয়া বাঞ্ছনীয় নয়, এবং একজন অধিনায়ক যদি বাউন্সার ব্যারেজ দিয়ে একজন বুদ্ধিমান ব্যাটারকে আউট করার চেষ্টা করেন তাহলে তিনি আসলে ভাগ্যের উপর ভরসা করছেন। বর্তমান সিরিজে কামিন্স এরকম কৌশল একাধিকবার প্রয়োগ করেছেন, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে, এবং ইয়ান চ্যাপেল প্রশ্ন তুলেছেন যে কেন দলের অন্যান্য সিনিয়র ক্রিকেটাররা এই কৌশল নিয়ে কোনো পরামর্শ দিলেন না?

একটি শক্তিশালী টেস্ট দলের প্রধান একটি লক্ষ্য হল বিরোধী দলকে তাদের কৌশল পরিবর্তন করতে বাধ্য করা, তা দলগত কৌশল হোক বা ব্যক্তিগত। ইংল্যান্ড সেই লক্ষ্যে সফল, কিন্তু কিছু ভুল দল নির্বাচনের কারণে তারা এখনও সিরিজে পিছিয়ে রয়েছে। স্টোকসের এজবাস্টনে ইনিংস ডিক্লেয়ার এবং ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ব্যাট করার সিদ্ধান্তের সমালোচনা হয়েছে।

দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে বরং ইংল্যান্ডের কিছু সিদ্ধান্ত বেশ প্রশ্ন রেখে যায়। এই সিরিজে তারা ভুলবশত জনি বেয়ারস্টোকে, যিনি একজন স্বীকৃত ব্যাটার, অনেক উচ্চমানের উইকেটরক্ষক বেন ফোকসের চেয়ে আগে সুযোগ দেয় যার ফল প্রথম দুই টেস্টে দেখা গেছে একাধিক ড্রপ কাচের মধ্যে দিয়ে।

তারা মঈন আলীকে বেছে নিয়েছে, যিনি একজন অফস্পিনার এবং ভালো ব্যাটিং করেন কিন্তু তিনি এমনকি তার পিক ফর্মে থাকা অবস্থায়ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলার চ্যালেঞ্জ উপভোগ করেননি। ইংল্যান্ড তৃতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দেরি করে হলেও একজন সত্যিকারের স্পিডস্টারকে সুযোগ দেবার আগে এমন একটি সীম আক্রমণ পছন্দ করেছিল যাতে বৈচিত্র্যের অভাব ছিল। ইংল্যান্ড তার পরেও মার্ক উডকে নতুন বল ব্যবহারের সুযোগ দিতে ব্যর্থ হয়।

এগুলি এমন সব ভুলত্রুটি যা কাটিয়ে ওঠা কঠিন, এমনকি রান-স্কোরিং এবং উইকেট-তোলার অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রশংসনীয় উদ্দেশ্যের পাশাপাশিও। বিশেষ করে যখন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক এবং কোচ দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট বড়ো ভূমিকা রাখেন।

রক্ষণাত্মক ফিল্ডাররা আধুনিক অধিনায়কদের মধ্যে বাউন্ডারি রক্ষাকে অগ্রাধিকার দেবার প্রবণতা বৃদ্ধি করেন, যার ফলে সহজ সিঙ্গেল নিতে দেওয়া হয়। আধুনিক ব্যাটের উন্নতি সত্ত্বেও এই নীতি কিন্তু প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। যদি একজন ব্যাটার বাউন্ডারি মারেন, তিনি তখনও পরের বলের মুখোমুখি হন, কিন্তু একটি সিঙ্গেল তাকে স্ট্রাইক থেকে সরিয়ে দেয় এবং তাকে নন-স্ট্রাইকারে দাঁড়িয়ে নিরাপত্তা উপভোগ করতে দেয়।

একজন ক্যাপ্টেন যিনি ক্লোজ ক্যাচিং ম্যান সরিয়ে দিয়ে বাউন্ডারিতে বেশির ভাগ ফিল্ডার ছড়িয়ে দেন তিনি আসলে একজন আক্রমণাত্মক বোলারের কার্যকারিতাকে ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেন। একজন অধিনায়ক যদি নয়জন লোককে বাউন্ডারিতে রাখেন, যে কোনো আত্মসম্মানবোধযুক্ত বোলার বলতে পারেন, ‘তুমি যদি এই ফিল্ড চাও তাহলে তুমিই বল করো।’

অধিনায়কত্ব একটি সাবজেক্টিভ বিষয়; এর কোনো নির্দিষ্ট ফর্মুলা নেই, বিশেষ করে যখন একটি ম্যাচ হারার পরিস্থিতি হয়। একজন অধিনায়ককে অবশ্যই তার স্নায়ু শক্ত রাখতে হবে এবং তার সিনিয়র ফিল্ডারদের কাছ থেকে ভাল, ইতিবাচক পরামর্শ নিতে হবে। অর্থাৎ অন্যরা ইনপুট দিতে পারে, তবে এটি অধিনায়ককেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

কামিন্স এবং স্টোকস উভয়ই নিজ নিজ দলের নেতা হিসেবে সঠিক পছন্দ। কামিন্সের ক্ষেত্রে তিনি একজন ভালো অধিনায়ক এবং এই অবস্থান ধরে রাখার যোগ্য। যাইহোক, তিনি হয়তো আজকাল খুব বেশি উপদেশ শুনছেন, যার মধ্যে অনেকগুলোই এমন লোকেদের থেকে যাদের হয়তো তাঁকে উপদেশ দেবার যোগ্যতাই নেই।

সমালোচকদের মনে রাখা ভাল যে কামিন্সের অধিনায়কত্বে অস্ট্রেলিয়া বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা এবং অ্যাশেজ ট্রফি উভয়ই ধরে রেখেছে। কামিন্স অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ওভাল টেস্টে তার যোগ্যতা প্রদর্শন করেন। ইংল্যান্ডকে এমন একটি পিচে ব্যাট করতে পাঠানোর পর যেখানে বোলারদের জন্য কিছুটা প্রাণ ছিল, অস্ট্রেলিয়া কিছু মিসফিল্ডিং সত্ত্বেও তাদের প্রতিপক্ষকে ৩০০ এর কম স্কোরে অলআউট করেছিল।

টেস্টটি এখন এক ইনিংস শ্যুটআউটে শেষ হতে চলেছে (অস্ট্রেলিয়া ১৩৫/০ রানে জয়ের লক্ষ্যে ভালোই এগোচ্ছে) এবং সিরিজ শেষ হচ্ছে – যেমনটি শুরু হয়েছিল – রান তাড়া করে জয়ের লক্ষ্যে। দুই অধিনায়কের নিজ নিজ যোগ্যতা যাই থাকুক না কেন, দুই দল যথেষ্ট বিনোদন জুগিয়েছে এবং মনে রাখার মতো একটি সিরিজ উপহার দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link