সাত নম্বরের লড়াই চলছে। পেস বোলিং স্কিল আছে বলে আলোচনায় সৌম্য সরকারও আছেন। এমন অবস্থায় বর্ষীয়ান ক্রিকেট কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেই দিলেন, ‘সাইফউদ্দিন থাকলে অটোমেটিক চয়েজ হতে পারত।’
হ্যাঁ, এমনই অনেক যদি-কিন্তুর মাঝে আটকে আছে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ক্যারিয়ার। অথচ, সাত-আটে ব্যাট করতে পারার সক্ষমতা আর পেস বোলিং – সব মিলিয়ে দারুণ একটা প্যাকেজই হয়ে ওঠার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু, অদৃশ্য এক ইনজুরি আর ফিটনেসের বেড়াজালে বন্দী তিনি।
এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার চরিত্রটাই বাংলাদেশের চিরকালীন এক আক্ষেপ। আন্তর্জাতিক মানের তো দূরের কথা, মোটামুটি চলনসই গোছেরও কোনো পেস বোলিং অলরাউন্ডার আসেননি বাংলাদেশ ক্রিকেটে।
সবচেয়ে কাছাকাছি আসতে পেরেছিলেন কেবল মাশরাফি বিন মুর্তজাই। তবে, নানা কারণে তাঁর ব্যাটিংটাকে কখনোই তিনি নিজে বা দল খুব বেশি গুরুত্ব দিতে পারেনি। এজন্য মাশরাফির ইনজুরিও ছিল বড় একটা কারণ।
এর আগে পরে আতাহার আলী খান, খালেদ মাহমুদ সুজন ছিলেন, মুশফিকুর রহমান বাবু ছিলেন, কিংবা হালের জিয়াউর রহমান, মুক্তার আলী কিংবা ফরহাদ রেজারা ছিলেন। এমনকি পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে মাঝে ক’দিন আবুল হাসান রাজুকে দিয়েও চেষ্টা করা হয়েছে।
এরা কেউই না ব্যাটিং না বোলিং – কোনোটা দিয়ে দলে নিজেদের থিতু করতে পারেনি। এমন একটা সময়ে বাংলাদেশ দলের রাডারে আসেন এই সাইফউদ্দিন। বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান, ডান হাতি পেসার।
অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে দেশের মাটিতে যে দলটা সেমিফাইনালে গিয়েছিল সেই দলে মেহেদী হাসান মিরাজের অধিনায়কত্বে খেলেছিলেন সাইফউদ্দিন। সেখান থেকে প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ, বিপিএল হয়ে তার ডাক আসে জাতীয় দলে।
সর্বশেষ বিশ্বকাপ দলে তিনি ছিলেন আলোচিত এক চরিত্র। রুবেল হোসেনের মত অভিজ্ঞ স্ট্রাইক বোলারকে বসিয়ে রেখে সাইফউদ্দিনের ওপর অগাধ আস্থা রাখায় সমর্থকদের বড় একটা অংশের চক্ষুশ্যূলও হতে হয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্টকে।
বিশেষ করে, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে ডেভিড মিলারের খুনে ব্যাটিংয়ের সামনে গণ্ডায় গণ্ডায় রান হজম করায় তিনি নিজের একটা ‘নেতিবাচক’ রূপ গড়ে ফেলেছিলেন আগেই। বলা হয়েছিল, সাইফউদ্দিন ডেথ ওভার স্পেশালিস্ট।
তবে, কখনো তাকে নতুন বলে দেখা গেছে, কখনো বা মিডল ওভারে বোলিং করেছেন – পেস বোলার হিসেবে তার চরিত্রটা ঠিক বোধগম্য হয়নি কখনোই। তুলনামূলক লুজ ডেলিভারি একটু বেশি দিলেও তিনি যে একজন উইকেট টেকিং বোলার – তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ২০১৯ বিশ্বকাপের মঞ্চে কোয়ালিটি ব্যাটিং লাইন আপের বিপক্ষে সাত ম্যাচে ১৩ উইকেট পাওয়াটাকে তাঁর কৃতীত্ব হিসেবেই ধরতে হবে।
বোলিংয়ে সাফল্য বেশি হলেও সাইফউদ্দিন বরং ব্যাটিংয়েই বেশি মুগ্ধ করেছেন। ভারতের বিপক্ষে ৩৮ বলে ৫১ রানের একটা ইনিংস খেলে। সাইফউদ্দিনের ব্যাটিং সামর্থ্যটা আসলে ছেলে খেলার কিছু না। হাতে যথেষ্ট স্ট্রোকস আছে। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তোলার মানসিকতা আছে।
মোট কথা, মিডল অর্ডারের শেষ ভাগে স্কোরটা বড় করার জন্য যেমন ব্যাটসম্যান দরকার – সেটা হওয়া পুরো সামর্থ্যই সাইফউদ্দিনের মধ্যে আছে, বলা উচিৎ ছিল। কারণ, এখন তিনি কোনো আলোচনার মধ্যেই নেই।
নাজমুল আবেদীন ফাহিমের মত আক্ষেপটা গোটা বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই। তাঁর ইনজুরির কোনো দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হয়নি। না হলে, এবারও হয়তো বিশ্বকাপ খেলে ফেলতেন। পরিচর্যা পেলে হয়তো ভাল সার্ভিসও দিতে পারতেন।
তাঁর শারীরিক সমস্যাটাই নাকি এমন যে, ইনজুরি ফিরে ফিরে আসবে। তা না হলে, ২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা পারফরমারদের একজন কেনোই বা থাকবেন আলোচনার বাইরে। কেনোই বা মাত্র ২৬ বছর বয়সেই একজন পেশাদার ক্রিকেটারের এপিটাফ লেখা হয়ে যাবে।