কালজয়ী কোনো সিনেমার চিত্রনাট্যও এতটা নিখুঁত হয় না। স্টুয়ার্ট ব্রডের ক্যারিয়ার যেভাবে শেষ হল, সেভাবে হয়তো কোনো সিনেমার পরিচালকও তাঁর সিনেমার হিরোকে ক্লাইম্যাক্স দৃশ্যে দেখাবেন না। অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয় আর মাত্রাতিরিক্ত সিনেম্যাটিক এক বিদায় হল ব্রডের।
শেষ দুটো উইকেট, নিজের সর্বস্বটুকু উজাড় করে দিয়ে সেরা বোলিং করলেন। দলকে জিতিয়ে অবসরে গেলেন স্টুয়ার্ট ব্রড। পাশাপাশি এটাও প্রমাণ হল যে আগের টেস্টে বৃষ্টি না হলে এই অ্যাশেজ ট্রফি অস্ট্রেলিয়ায় যেত না। আর সেই প্রমাণের মঞ্চে নায়ক তো ওই একজনই – স্টুয়ার্ট ব্রড।
জীবন অনন্ত উপন্যাসের মত ব্রডের হাতে শেষ স্পেলের জন্যে বল তুলে দিয়ে অধিনায়ক বেন স্টোকস কি বলেছিলেন – ‘যাও নিজেকে ফিরিয়ে আনো, শেষ বারের মত!’
কি বলেছিলেন স্টোকস, জানা গেল না। তবে, তাঁর হাসিতেই বোঝা গেল একটা ঝড় আসতে চলেছে।ঝড় আসলো, শেষ স্পেলেও স্মরণীয় হয়ে থাকলেন ব্রড। অ্যালেক্স ক্যারিকে অনেকবার পরাস্থ করলেন। করলেন, একবার বল স্লিপ ফিল্ডারের ঠিক আগে ড্রপ পড়লো, কিন্তু শেষ হাসি তিনিই হাসলেন।
২০০৭ সালে কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেকের পর শেষ অবধি ১৬৭ টি টেস্ট খেলেছেন ব্রড। আরেক অভিজ্ঞ পেসার জেমস অ্যান্ডারসনের সতীর্থ হয়ে টেস্ট ক্রিকেটের বোলিংয়ে দুর্দান্ত এক জুটি গড়ে তোলেন ব্রড।
সবাই যখন অ্যান্ডারসনের বিদায়ের প্রহর গুণছিল, তখন বিদায় বলে দিলেন ব্রড। নামের পাশে লেখা হয়ে থাকল ৬০৪ টি উইকেট। কে জানে, হয়তো এই ৬০০ উইকেটের মাইলফলকটার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন ব্রড। আর সেটা হয়ে যাওয়ার পর আর একটা মুহূর্তও দেরি করলেন না।
২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যুবরাজ সিংয়ের কাছে ৬ বলে ৬ ছক্কা হজম করেছিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড। কিন্তু সেদিনের ব্রডই বাইশ গজ থেকে বিদায় নিলেন ছয় শতাধিক টেস্ট উইকেটের কীর্তিতে। ছয় ছক্কার জবাবে ৬০০’র বেশি টেস্ট – এমন জবাব দিতেও তো দরকার অনবদ্য সাহস।
যাওয়াটা জরুরী ছিল না ব্রডের, অন্তত ফিটনেস ও পারফরম্যান্সের বিবেচনায় তো কোনো ভাবেই না। বয়স ৩৭ হয়ে গেলেও টেস্ট ফরম্যাটে শেষ দিন অবধি তিনি ছিলেন দলের সেরা পেসার। এই অ্যাশেজেও তো নিয়েছেন ২২ টা উইকেট, যা ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ।
কিন্তু, ওই যে – জবাবটা যে দেওয়া হয়ে গেছে। তাহলে আর অপেক্ষা কেন। এবার না হয়, ব্রডের স্মৃতি রোমন্থন করেই কাটুক বেলা। রাস্তাটা তুলে রাখা যাক ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য।
এই অ্যাশেজ ইংল্যান্ড না জিতলেও, ওদের খেলা অনেকদিন মনে থাকবে। সব খেলার ফলাফল আসলে স্কোরকার্ড ঘাটলে পাওয়া যায় না। ইংল্যান্ডের খেলাটাও ছিল তেমনই। আর ব্রডকে ভুলে যাওয়ার তো কোনো কারণই নেই। তিনি বাইশ গজে টিকে রইবেন নিজের কীর্তির মাঝে।