মেসির মায়াবি মমতায় মায়ামির মুকুট

এলেন, দেখলেন, জয় করলেন। কে তিনি?

ফুটবলপ্রেমীরা চাইলে আজ বলতেই পারেন, সে আবার কে? সে তো লিওনেল মেসি। মাত্র ৭ ম্যাচ। আর তাতেই শিরোপার সপ্তম স্বর্গে আরোহণ করলেন দ্য এলএমটেন। মেসির মায়াবী জাদুতে ইতিহাস গড়লো ইন্টার মায়ামি। লিগস কাপের মধ্য দিয়ে মায়ামিকে এনে দিলেন প্রথম শিরোপা।

হ্যাঁ। মায়ামির ‘প্রথম’ এর ইতিহাসে ঐতিহাসিক চরিত্র হওয়ার পথেই এগিয়ে গেলেন মেসি। অবশ্য মেসি গোটা ফুটবল ইতিহাসেরই যে এক ঐতিহাসিক চরিত্র। তার কাছে এ আবার নতুন কী! তবে মায়ামির এ শিরোপা যাত্রা কি আর এতটাই সহজ ছিল।

উত্তেজনা আর উৎকন্ঠা যেন মিশেছিল ম্যাচের প্রতিটি মুহূর্তেই। মেসির চোখমুখের অভিব্যক্তিতেও এ দিন ফুটে উঠেছিল রাজ্যের চরম চিন্তনীয় মুখশ্রী। তবে সব শঙ্কা, উৎকণ্ঠা ছাপিয়ে শিরোপাটা গিয়েছে মেসির মায়ামির ঘরেই।

ন্যাশভিলের ঘরের মাঠ জিওডিস পার্ক স্টেডিয়ামে ইন্টার মায়ামি এ দিন মাঠে নেমেছিল ইতিহাস গড়তেই। এর আগে কখনোই যে শিরোপা ছোঁয়া হয়নি তাদের। কিন্তু বিশ্বকাপজয়ী মেসির ছোঁয়াতেই যেন পাল্টে গেল দলটা।

মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) দলটা সবার তলানিতে। সেখান থেকে লিগস কাপে এসে শিরোপা জয়। যেটাকে বলা যেতে পারে, একদম শূন্য থেকে শিখরে যাওয়ার গল্প। আর সেই শিখরে যাওয়ার সেই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হচ্ছেন মেসি।

আগের ৬ ম্যাচের প্রতিটিতেই গোল পেয়েছিলেন। ফাইনালের মঞ্চে এসেও পেয়েছেন গোল। ৭ ম্যাচে ১০ গোল আর ১ অ্যাসিস্টে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় আর সর্বোচ্চ গোলদাতা, দুটো পুরস্কারই গিয়েছে মেসির হাতে। তবে সেরার স্বীকৃতিতে মেসি যতটা সহজ, সারল্য পথে এগিয়েছেন, ফাইনাল জেতার পথটা কিন্ত অতো সহজ ছিল না।

ম্যাচের ২৩ মিনিটে মেসির নান্দনিক গোল। ন্যাশভিলের অবশ্য গোলটা দেখে চেয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। রবার্তো টেলরের বাড়ানো বল চলে আসে বক্সের বাইরে। সেখান থেকে বল পেয়ে দুই ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে বাঁ পায়ের জোরাল শট দেন মেসি। এবং গোল। মায়ামি পেয়ে যায় লিড।

ম্যাচ বিরতির পর সমতা ফেরাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিল ন্যাশভিল। সেই চেষ্টার ফলও তাঁরা পেয়ে যায় হাতে নাতে। ম্যাচের ৫৭ মিনিটে সমতা ফেরায় ন্যাশভিল। এরপর থেকেই ব্যবধান বাড়াতে মরিয়া হয়ে ওঠে দুই দল।

তবে, শেষ পর্যন্ত ১-১ এ সমতায় থেকে শেষ হয় নির্ধারিত নব্বই মিনিট। যদিও ম্যাচের একদম শেষ মুহূর্তে দারুণ একটি সুযোগ পেয়েছিল মায়ামি। তবে শেষ পর্যন্ত বল আর জালে জড়ায়নি। ম্যাচ গড়ায় টাই-ব্রেকারে।

আর এখানেই শুরু হয় টাই-ব্রেকার রোমাঞ্চ। এক প্রকার ম্যারানথন পেনাল্টি শ্যুটআউটেই অংশ নেয় দুই দল। প্রথম পাঁচটি শটে ৪-৪ সমতা হলে ম্যাচ গড়ায় সাডেন ডেথে। সেখানেও আবির্ভূত হয় চূড়ান্ত নাটকীয়তা। টানা চার শটেও ফল নির্ধারিত হচ্ছিল না।

টাইব্রেকারে তখন ৯-৯ এ সমতা। শট নেওয়া বাকি শুধু দুই গোলরক্ষকের। প্রথমে দারুণ শটে গোল করেন ইন্টার মায়ামির গোলরক্ষক ড্রেক ক্যালেন্ডার। এরপর প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের শট ঠেকিয়ে ম্যাচের নায়ক বনে যান ঐ ড্রেক ক্যালেন্ডারই।

১-১ গোলে সমতায় থাকার পর ইন্টার মায়ামি টাইব্রেকারে ম্যাচ জিতে নেয় ১০-৯ গোলে। আর এর মধ্য দিয়েই লিগস কাপের শিরোপা জেতে মায়ামি। একই সাথে, এই শিরোপ জয়ের মাধ্যমে ফুটবল ইতিহাসে সর্বোচ্চ বার শিরোপা জয়ের কীর্তি গড়েন মেসিও।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link