অলরাউন্ডারের মাপকাঠি

তাঁরা প্রত্যেকেই বল হাতে দলের কাছে যথেষ্ট জরুরি ছিলেন। বল যা করতেন, উইকেট নিতেন তার চেয়ে বেশি। ইচ্ছা আছে, লেখার শেষ পর্বে যে এক্সেলটায় এই অনুশীলন করেছি তা শেয়ার করার। তাহলে গোটা তালিকা সবাই দেখতে পাবেন। এবং তাহলে দেখবেন, সব ক’টি তালিকায় কপিল, ইমরান, বোথাম ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় রয়েছেন। অর্থাৎ, তাঁদের গ্রাফ ব্যাটিংয়ের দিকেও বেশি স্কিউড নয়, বোলিংয়ের দিকেও না। তাই হয়তো অলরাউন্ডার হিসেবে তাঁরা আজ এতো বন্দিত।

একজন অলরাউন্ডারকে মাপার সবচেয়ে জুতসই মাপকাঠি কি হতে পারে? ব্যাপারটা নির্ধারণ করা সহজ নয়। এখনো অব্দি সবচেয়ে জনপ্রিয় মাপকাঠি হলো ব্যাটিং ও বোলিং গড়ের আঙ্কিক তফাৎ। কিন্তু সেই মাপকাঠি কি সব উত্তর দেয়? জানি না। তাই আমি নিজের মতো করে একটা অনুশীলন করার চেষ্টা করেছি অলরাউন্ডারদের নিয়ে।

আজ সেই অনুশীলনের প্রথম পর্ব। আগেই বলে রাখি, আমি অল-রাউন্ডার নির্বাচন করার সময় শুধু মাত্র তাঁদেরই বেছে নিয়েছি যাঁদের কমপক্ষে ২০০০ রান ও ১০০ উইকেট রয়েছে। এই অনুযায়ী, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে খেলোয়াড় দাঁড়াচ্ছেন ৩১ জন। এই পরিসংখ্যানের সময়সীমা গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর অব্দি।
আজ দ্বিতীয় পর্বে দেখে নেবো, নিজেদের দলের বোলিংয়ে এই অলরাউন্ডারদের অবদান ঠিক কতটা।

এই অনুশীলনের জন্য আমি তালিকাভুক্ত অলরাউন্ডারদের, তাঁদের ক্রিকেট জীবনে, তাঁরা দলে থাকাকালীন যে কটি ম্যাচ হয়েছিল সেই ম্যাচ গুলি মিলিয়ে দলের উইকেটের কত শতাংশ সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়টি নিয়েছেন তা বার করেছি। তবে শুধু উইকেট নয়, বোলিংয়ের ক্ষেত্রে দলের করা বলের কত শতাংশ সেই বোলারটি করেছেন তাও জরুরি। কারণ উইকেটের সংখ্যার সাথে সাথে কত বলের অন্তরে উইকেট নিচ্ছেন, সেটাও একান্ত জরুরি।

একটি উদাহরণ দেয়া যাক। ধরে নিচ্ছি সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়টি হলেন ভিনু মানকর। উনি নিজের ক্রিকেট জীবনে নিয়েছেন ১৬২ উইকেট। সেই সময়কালে ভারত দলগত ভাবে নিয়েছে ৫৫২ উইকেট। অর্থাৎ মানকার নিয়েছেন ২৯.৩৫% উইকেট। এই সময়কালে মানকার ভারতের দলগত বলের ২৮.০৪% করেছেন। মানকারকেই কেন বেছে নিলাম উদাহরণ হিসাবে সেটা বোঝানোর জন্যে একটা পরিসংখ্যান দেই।

অশ্বিন মূলত বোলার হিসেবেই তাঁর ক্রিকেট জীবনের সিংহভাগ খেলেছেন। ১১১ ইনিংসের মধ্যে তিনি ৮ ও ৯ নম্বরে খেলেছেন ৭৭ ইনিংস। সেখানে মানকার তাঁর ৭২ ইনিংসের মধ্যে ৮ বা তার নিচের পজিশনে খেলেছেন মাত্র ১৪ ইনিংস। আর এই ৭২ ইনিংসের মধ্যে মানকার ওপেন করেছেন ৪০ বার। অশ্বিন দলগত ওভারের ২৮.৮৯% করেছেন। অর্থাৎ মানকারের প্রায় সমান।

তাহলে মানকরের শরীরের ওপর দিয়ে কি পরিমান ধকল যেত, তা বোঝাই যাচ্ছে। ব্যাটিং এবং বোলিং, দুটোতেই মানকার প্রায় বিশেষজ্ঞর কাজ করেছেন। এবার দেখে নেবো দলগত ওভারের শতাংশের হিসাবে কোন পাঁচ জন সবচেয়ে বেশি বল করেছেন। সাথে ব্র্যাকেটে উইকেটের শতাংশও দিলাম।

ফরম্যাট-ওভার শতাংশ (উইকেট শতাংশ)

  • রবিচন্দ্রন অশ্বিন – ২৮.৮৯% (৩০.১৭%)
  • অনিল কুম্বলে – ২৮.৭৬% (৩০.৭২%)
  • ভিনু মানকর – ২৮.০৪% (২৯.৩৫%)
  • শেন ওয়ার্ন – ২৮% (২৮.৩১%)
  • হরভজন সিং -২৬.৮৬% (২৬.২৬%)

পাঁচ জনই স্পিনার এবং এঁদের মধ্যে একমাত্র মানকার স্বীকৃত অলরাউন্ডার। এই তালিকায় প্রথম পেসার হলেন রিচার্ড হ্যাডলি। তিনি রয়েছেন ৭ নম্বরে এবং করেছেন নিজের দলের ২৪.৮৬% ওভার। সাকিব আল হাসান স্পিনার হয়েও সেখানে ২৩.৯০% ওভার করেছেন।

এবার দেখে নেবো দলের ওভারের শতাংশের হিসাবে একেবারে নিচের পাঁচজনকে।

  • জ্যাক ক্যালিস-১২.৪১% (১০.৭৯%)
  • কার্ল হুপার-১৩.২২% (৭.৩৪%)
  • বেন স্টোকস-১৩.৪৭% (১৪.০৯%)
  • ট্রেভর বেইলি-১৪.৭২% (১৩.৩৭%)
  • উইলফ্রেড রোড্স্-১৪.৭৭% (১৩.১৫%)

এখানে একটা বিষয় বলে রাখি, সোবার্স নিজের দলের ১৭.৮৪% ওভার করেছেন। যা কিনা মিলারের (কিথ) চেয়েও বেশি। কিথ মিলার করেছেন ১৬.৪৮% ওভার। টেস্টে ক্যালিস বোলার হিসাবে খুব কম বল করেছেন। যা পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট। তাঁর দলে এতো অলরাউন্ডার ছিলেন, (পোলক, ক্লুজনার) যে তাঁকে বেশি বল করতে হয়নি। ৯০ ওভারের দিনে ক্যালিস করতেন গড়ে মাত্র ১১ ওভার। হুপার যেহেতু চার পেসার সম্বলিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের রেস্ট বোলার হিসাবে খেলতেন তাই প্রচুর ওভার করতেন।

একেবারে শেষে দেখে নেবো নিজের দলের উইকেটের শতাংশ হিসাবে প্রথম ও শেষ ৫ জন কে কে। সাথে ব্র্যাকেটে তাঁদের ওভারের শতাংশও দিলাম।

ফরম্যাট-উইকেট শতাংশ (ওভার শতাংশ)

  • রিচার্ড হ্যাডলি-৩৫.৭১% (২৪.৮৬%)
  • কুম্বলে-৩০.৭২% (২৮.৭৬%)
  • রবিচন্দ্রন অশ্বিন-৩০.১৭% (২৮.৮৯%)
  • ভিনু মানকর-২৯.৩৫% (২৮.০৪%)
  • সাকিব আল হাসান-২৮.৬৯% (২৩.৯০%)

হ্যাডলির পরিসংখ্যান দুটো জিনিস বোঝায়। এক, উনি ঠিক কত বড় বলার ছিলেন। এবং দুই, ওঁর টিম কতটা খাজা ছিল। দ্বিতীয় পয়েন্ট টা অবশ্য শাকিবের জন্যেও খাটে। এবার এই তালিকায় শেষ পাঁচ জন কারা সেটাও দেখে নেবো।

  • কার্ল হুপার-৭.৩৪% (১৩.২২%)
  • জ্যাক ক্যালিস-১০.৭৯% (১২.৪১%)
  • উইলফ্রেড রোডস – ১৩.১৫% (১৪.৭৭%)
  • ট্রেভর বেইলি – ১৩.৩৭% (১৪.৭২%)
  • বেন স্টোকস-১৪.০৯% (১৩.৪৭%)

তাঁদের মধ্যে একমাত্র স্টোকস শতাংশের পরিমানে যত বল করেন তার চেয়ে বেশি উইকেট তোলেন। অর্থাৎ কেউ ১০% বল করলে ১০% উইকেট তুললে সেটা হবে গড় হিসাব। স্টোকস তার চেয়ে এগিয়ে। হ্যাডলি কে নিয়ে আজ আলাদা করে কিছু বলছি না। কপিল, বোথাম ও ইমরান-এই তিনজনের হিসাব একবার দেখে নেওয়া যাক।

ফরম্যাট-উইকেট শতাংশ (ওভার শতাংশ)

  • ইমরান খান – ২৭.৯১% (২১.৮৮%)
  • কপিল দেব – ২৫.০৯% (২০.০৫%)
  • ইয়ান বোথাম – ২৬.৩৪% (২১.২৯%)

অর্থাৎ, তাঁরা প্রত্যেকেই বল হাতে দলের কাছে যথেষ্ট জরুরি ছিলেন। বল যা করতেন, উইকেট নিতেন তার চেয়ে বেশি। ইচ্ছা আছে, লেখার শেষ পর্বে যে এক্সেলটায় এই অনুশীলন করেছি তা শেয়ার করার। তাহলে গোটা তালিকা সবাই দেখতে পাবেন। তাহলে দেখবেন, সব ক’টি তালিকায় কপিল, ইমরান, বোথাম ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় রয়েছেন। অর্থাৎ, তাঁদের গ্রাফ ব্যাটিংয়ের দিকেও বেশি স্কিউড নয়, বোলিংয়ের দিকেও না। তাই হয়তো অলরাউন্ডার হিসেবে তাঁরা আজ এতো বন্দিত।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...