দ্য স্টোন ওয়াল!

নিজের সময়ে তিনি ছিলেন বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন। পারফরম্যান্সের জোরেই তাঁকে মিস্টার কনসিস্টেন্ট বলা হয়। যদিও, কখনোই বিশ্বকাপ জিততে পারেননি তিনি। সেটা যতটা তাঁর আফসোস, তার চেয়ে বেশি আফসোস খোদ ক্রিকেট বিশ্বের। তিনি হলেন দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তি জ্যাক ক্যালিস।

  • বাবার সাথে সম্পর্ক

বাবা হেনরি’র সাথে ক্যালিসের খুবই অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল। হেনরি’র ক্যানসার (একেবারে শেষ পর্যায়) ধরা পড়ার পর ক্যালিস বেশ কিছুদিন খেলা থেকে বিরতি নেন- যাতে করে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বাবার সাথে থাকতে পারেন। এর কিছুদিন পর হেনরি মারা যান, ৬৫ বছর বয়সে। বাবার মৃত্যুর পর ক্যালিস ৬৫ নম্বর জার্সি পড়ে ওডিআই ম্যাচ খেলা শুরু করেন।

  • চিয়ারলিডার বোন

ক্যালিস আইপিএল এর দ্বিতীয় সংস্করণ খেলেছিলেন রয়েল চ্যালেঞ্জার ব্যাঙ্গালোরের হয়ে। ওদিকে তাঁর বোন জ্যানিন সে সময় ছিলেন চেন্নাই সুপার কিংস এর চিয়ারলিডার! দুই দলের খেলায় ক্যালিস আউট হবার পর জ্যানিন নেচে নেচে সেই আউট উৎযাপন করেছিলেন! ক্যালিসও পুরো ব্যাপারটিকে স্পোর্টিং মনোভাবেই দেখেছিলেন! কী দারুণ একটি পরিবার, তাই না?

  • মিস্টার কনসিস্টেন্ট

ধারাবাহিকতার প্রতীক ক্যালিসের শুরুটা কিন্তু মোটেও ভাল হয় নি। টেস্টের প্রথম ৭ ইনিংসে (৫ টেস্টেরও বেশি খেলে, সবগুলোই ঘরের  মাঠে) মাত্র একবার দুই অঙ্কের ঘরের রান করতে পেরেছিলেন! সে মোট রান ছিল ৫৭, গড় ৮.১৪! ঠিক এরপর থেকেই মূলত রান করা শুরু করেন…যা বজায় ছিল পরবর্তী ১৮ টি বছর!

  • বিগ হিটিংয়ের ক্ষমতা

বেশিরভাগ মানুষ ক্যালিসকে ‘স্টোন ওয়াল’ হিসেবেই মনে রাখবে। তবে, অবসরে যাবার সময় তিনি ছিলেন টেস্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছক্কার মালিক! সর্বমোট ৯৭ টি! (প্রোটিয়াদের হয়ে ৯৬ এবং বিশ্ব একাদশের হয়ে ১ টি)। সর্বোচ্চ ১০০ টি ছক্কার মালিক অ্যাডাম গিলক্রিস্ট।

ওয়ানডেতেও তাঁর ছক্কার সংখ্যা কম নয়, ১৩৭ টি। সব মিলিয়ে ১৩ তম স্থানে তবে প্রোটিয়াদের মধ্যে একেবারে শীর্ষে, দ্বিতীয় স্থানে থাকা গিবস এর চেয়ে নয়টি বেশি!

  • পুঁচকে ছোঁড়া!

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে ঘরোয়া লিগের পশ্চিমাঞ্চলের অনুর্ধ্ব-১৫ দল থেকে আকারে ছোট-খাটো হবার কারণে তিনি বাদ পড়েছিলেন! এটা জানার পর কিশোর ক্যালিস পণ করেছিলেন নির্বাচকদের দেখিয়ে দেবেন। বিশাল বপুর পরিণত ক্যালিসকে দেখলে অবশ্য এই ঘটনা বিশ্বাস হতে চায় না।

  • এশিয়ানদের জম

২৫ টেস্টে ৫৫.৬২ গড়ে এশিয়ার মাটিতে তাঁর মোট রান সংখ্যা ২০৫৮। প্রথম অ-এশীয় হিসেবে তিনি এই মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন। পরবর্তীতে ইংলিশ ব্যাটসম্যন কুকও এই সাফল্য অর্জন করেন।

  • বধির!

গ্রেট ব্যাটসম্যানেরা সাধারণত স্লেজিং এ তেমন বিচলিত হন না। ক্যালিস এই দিক এক ধাপ উপরে ছিলেন। তাঁকে কেউ কখনোই স্লেজিং করে টলাতে পারে নি। একবার অসি ফাস্ট বোলার মাইকেল ক্যাস্প্রোউইজ স্লেজিং থেকে শুরু করে প্রচুর নোংরা গালাগালিও করছিলেন। একই সাথে একের পর এক বাউন্সার দিয়ে ক্যালিসকে ক্ষ্যাপানোর চেষ্টায় ছিলেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না…এক পর্যায়ে হতাশ হয়ে ক্যাস্পারের আক্ষেপ- ‘Is this man f*king deaf?!’

  • জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা

মাঠে দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত চলাকালে ক্যালিস কখনোই গলা মেলাতেন না- এটা অনেকেই ভালভাবে নিত না। পরবর্তীতে সাংবাদিক জেরাল্ড মাহোলা বলেছিলেন, ‘ক্যালিস মনে মনে গাইতে পছন্দ করে এবং সে সময় সে কৃতজ্ঞতার সাথে নিজের পিতা-মাতাকে স্মরণ করে, এজন্য যে তাদের কারণে ও এতদূর আসতে পেরেছে। জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি তাঁর পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে এবং দেশের হয়ে পৃথিবীর যেখানেই খেলতে গিয়েছেন, প্রতিটি মুহূর্ত নিয়েই তিনি গর্বিত!’

  • না হওয়া স্প্রিংবক

কিশোর বয়সে ক্যালিস রাগবিও খেলতেন। জাতীয় দলে খেলার মতন দক্ষতা এবং নৈপুণ্যও তাঁর ছিল। শেষ পর্যন্ত শীর্ষ পর্যায়ে খেলা না হলেও রাগবি ইউনিয়ন কোচ জ্যাক হোয়াইট, অলিম্পিক স্বর্ণ-জয়ী রোয়ার (Rower) জন স্মিথ, ক্রীড়া সাংবাদিক অ্যাঙ্গাস পাওয়ার্স এবং আইকোনিক দৌড়বিদ অস্কার পিস্টোরিয়াসের সাথে লিখেছিলেন ‘রাগবি ইন আওয়ার ব্লাড’ বইটি।

  • চোখে চুল?

২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর উইনবার্গে নিজের অডি আর-৮ চালানোর সময় ক্যালিস দুর্ঘটনার শিকার হন। অবশ্য, কোন ক্ষয়-ক্ষতি ছাড়াই বেঁচে যান। এটা নিয়ে মার্ক বাউচার মজা করতে ছাড়েন নি! বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয় গাড়ি চালানোর সময় ওর চোখে চুল চলে গিয়েছিল!’ জানিয়ে রাখা ভাল, ওই সময় ক্যালিস হেয়ার প্ল্যান্ট করিয়েছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link