বিশ্ব জিতে শুনলেন, বাবা আর নেই!

জীবনের চিত্রনাট্য হার মানায় সিনেমাকেও। চিরায়ত এ কথাটা নিছকই কোনো পঙক্তিতে আটকে থাকে না। তা বাস্তমব হয়ে ধরা দেয় প্রায়শই। যার সর্বশেষ উদাহরণ ওলগা কারমানো। যিনি ঘন্টা খানেকের ব্যবধানে জীবনের সেরা অর্জনে উচ্ছ্বাসে ভেসেছেন, আবার খানিকক্ষণ বাদেই পিতৃবিয়োগে বিষাদে আচ্ছন্ন হয়েছেন।

তাঁর একমাত্র গোলেই প্রথমবারের মতো ফিফা নারী বিশ্বকাপ জিতেছে স্পেন। ইতিহাস কিংবা জয়োৎসব, সিডনিতে  স্বাভাবিকভাবে দুটোরই মধ্যমণি হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু উৎসবের রাতটাই যেন বিধুরতায় আচ্ছন্ন করে রাখলো ওলগা কারমোনাকে।

স্পেন নারী দল যখন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনাল জিতে শিরোপা উচ্ছাসে ভেসে উঠেছে, ঠিক তখনই কারমানো শুনলেন, তাঁর বাবা আর এই পৃথিবীতে নেই। যতটুকু জানা গিয়েছে, কারমানোর বাবা মারা গিয়েছিলেন ফাইনাল শুরুর আগেই।

তবে ম্যাচের আগের সেই খবরটা আর জানানো হয়নি স্প্যানিশ এ ফুটবলারকে। এমন দু:সংবাদে খেলার প্রভাব পড়বে কিনা, মূলত সেই আশঙ্কাতেই কারমানোকে খবরটা দেওয়া হয়নি।

কদিন আগেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন কারমানোর এক বন্ধুর মা। আর সেই প্রিয় বন্ধুর সদ্যপ্রয়াত মাকেই তিনি উৎসর্গ করেছিলেন বিশ্বকাপ ফাইনালের গোল।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৯তম মিনিটে ম্যাচের একমাত্র গোলটি যখন তিনি করলেন, তখন এই গোলের উদযাপন করতে গিয়ে জার্সি উঁচিয়ে ভিতরের টি-শার্টে ‘merchi’ নামের একজনের নাম দেখান কারমোনা। অথচ, ম্যাচ শেষে তাকে শুনতে হয়েছে নিজের বাবার মৃত্যু সংবাদ।

বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে উদযাপন শেষে অবশ্য বাবার মৃত্যুর খবর জানতে পান ওলগা কারমানো। রয়্যাল স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন (আরএফইএফ) এর মধ্যে বিবৃতিতে শোকও প্রকাশ করেছে।

বিবৃতিতে তাঁরা বলেছে, ‘বিশ্বকাপ ফাইনালের পর কারমোনা এই অনাকাঙ্ক্ষিত সংবাদটি শুনেছেন। আমরা ওলগা ও তাঁর পরিবারের এই সময়ে গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি। ওলগা, আমরা তোমায় ভালোবাসি। তুমিই স্প্যানিশ ফুটবলের ইতিহাস।’

বাবার এমন বিদায়ে নিজেও একটি টুইট করেছেন ওলগা। তিনি বাবাকে বিশ্বকাপের একটা তারা উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘বাবা, আমি জানতাম না। তবে খেলা শুরু হওয়ার আগেই আমার একটা তারা ছিল। আমি জানি, তুমি আমাকে অনন্য কিছু অর্জন করার শক্তি দিয়েছো। আমি এটাও জানি, আজ রাতে তুমি আমাকে দেখে গর্বিত হচ্ছো। শান্তিতে ঘুমাও, বাবা।’

কারমানোর পিতৃবিয়োগে সমবেদনা জানিয়েছে তাঁর ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদও। তারা বিবৃতিতে জানিয়েছে,  ‘ভালোবাসা এবং সমবেদনা’। সত্যি, এ এমন একটা নিষ্ঠুর সময় – যেখানে বিশ্ব জয়ের আনন্দেরও যেন কোনো মূল্য নেই!

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link