বাদশাহ বাবর এশিয়া কাপের শুরুটাও করলেন রাজসিক চালে। প্রথম ম্যাচেই নেপালের বিপক্ষে খেলেছেন ১৫১ রানের অতিমানবীয় এক ইনিংস। শুধু পরিসংখ্যানেই নয়, এদিন ১১৫ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে খেলা বাবরের ব্যাটিং শৈলীতেও মুগ্ধ হতে বাধ্য যেকোনো ক্রিকেটপ্রেমী; ম্যাচসেরার পুরষ্কারও জিতেছেন এই তারকা।
অবশ্য পাকিস্তান দলপতি যে এমন কিছু করবেন সেটা প্রত্যাশিতই ছিল। পুরো বছর জুড়েই তো কি দারুণ গতিতে রান করে যাচ্ছেন তিনি। এশিয়ান কন্ডিশনে যেমন আলো ছড়িয়েছিল বাবরের ব্যাট তেমনি ভিনদেশেও এই ডানহাতি ছিলেন চেনা ছন্দে।
সর্বশেষ আফগানিস্তান সিরিজের প্রথম ম্যাচে করেছিলেন ০, সমালোচনার তীব্র স্রোত ধেয়ে এসেছে সঙ্গে সঙ্গে। কিন্তু বাবর আজম সেগুলোকে স্থায়ী হতে দিলেন কই, টানা দুই ফিফটিতে বন্ধ করে দিলেন নিন্দুকের মুখ। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে করেছেন ৫৩ আর শেষ ম্যাচে ৬০। শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং প্রতিকূল কন্ডিশনে এই রানের গুরুত্ব সংখ্যায় বোঝা যায় না।
এর আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও বাবর আজম পারফর্ম করেছেন সামনে থেকে। ঘরের মাঠে দুই অর্ধশতকের পাশাপাশি শতক হাকিয়েছেন একটি। সবমিলিয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৫৫.২০ গড়ে ২৭৬ রান করেছিলেন এই ব্যাটার। কিউইদের ৪-১ ব্যবধানে উড়িয়ে দেয়ার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল তাঁর।
২০২৩ সাল পুরোটাই অবশ্য স্বপ্নের মত কাটছে বাবর আজমের। ১২ ম্যাচ খেলে আটবারই পেরিয়েছেন পঞ্চাশ রানের গণ্ডি; এর মাঝে দুইবার ছুঁয়েছেন তিন অঙ্কের ম্যাজিকাল ফিগার। ৫৭.৪২ গড়ে এসময় বাবরের মোট সংগ্রহ ৬৮৯ রান; স্ট্রাইকরেটও ঈর্ষণীয়, ৮৭.১০। এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপের বছর অধিনায়কের এমন ফর্ম নিশ্চিতভাবেই বাড়তি ভরসা দিবে পাকিস্তানকে।
জাভেদ মিয়াদাঁদ, সেলিম মালিকদের মতই ব্যাটিংয়ের নান্দনিকতা নিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেটে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন বাবর আজম। দলটির ব্যাটিং লাইনআপের সবচেয়ে বড় নাম এখন তিনি, প্রত্যাশার ভারও সবচেয়ে বেশি বহন করতে হয় তাঁকে। সেই ভার বহনে কখনো ক্লান্ত হলেও বাবর প্রতিবারই ফিরে আসেন দ্বিগুণ উদ্যমে – দলকে এনে দেন বড় রান পরার ভিত্তি।
দুর্দান্ত বোলিং আক্রমণ, ভিনদেশী পরিবেশ,বোলিং স্বর্গ হয়ে উঠা বাইশ গজ; এসব কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করাই যদি হয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই তবে বাবর আজম ইতোমধ্যে সেটায় পাশ করে গিয়েছেন লেটার মার্কস সহই। সংখ্যার হিসেব বাদ থাকুক; দল যখন চাপের মুখে, খাদের কিনারায় তখন তাঁর পারফরম্যান্সই বলে দেয় বাবরের সামর্থ্য কতখানি।
বর্তমানে ওয়ানডে ফরম্যাটে আইসিসির র্যাংকিংয়ে এক নম্বর ব্যাটসম্যান বাবর আজম। যেভাবে এগুচ্ছেন তিনি তাতে মনে হয় না সহসা সিংহাসন থেকে নামবেন। আর এভাবে যদি বাবর তাঁর সাম্রাজ্যে শাসন চালিয়ে যান তবে পাকিস্তানের স্মরণীয় কিছু করার স্বপ্ন পূরণের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে কয়েক গুণ।
এক বাবর আজমের ওপর ভর করেই হয়তো ২০১৭ সালের পর মেজর কোন শিরোপা জিততে পারবে পাকিস্তান, দলটির ভক্ত-সমর্থকেরাও সেই অপেক্ষায় দিন গুণছে।