আরও এক চ্যাম্পিয়ন গ্রাজুয়েটের উত্থান

তার সুযোগ পাওয়ার সম্ভবনা ছিল একেবারে শূন্যের কাছাকাছি। তবে তাতে কি? ভাগ্য়ে যা থাকে তা তো হবারই। কিন্তু সেই ভাগ্যের পরিপূর্ণ ব্যবহারটা ক’জনই বা করতে পারে! তবে সাকিব পেরেছেন। না সাকিব আল হাসান না। এদফা সুযোগের সদ্ব্যবহারটা করেছেন জুনিয়র সাকিব, তানজিম হাসান সাকিব।

এশিয়া কাপের স্কোয়াডে তিনি সুযোগ পেলেন এবাদত হোসেনের জায়গায়। উড়ন্ত এক পেস ইউনিটের সঙ্গী হলেন তিনি। তবে অনুমিতই ছিল একাদশে খুব একটা সুযোগ পাবেন না তিনি। একেবারেই সমীকরণহীন এক ম্যাচে তবুও সুযোগ এলো। ক্যারিয়ারকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ।

তবে বোলার সাকিবের প্রথম পরীক্ষাটা ব্যাট হাতেই দিতে হয়েছে। বাংলাদেশের লেজের দিকের ব্যাটাররা রান পান না। তবে এদিন সব হিসেব উলটে গেল। বাংলাদেশের টপ অর্ডার ধারাবাহিক ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেনি। তবে মিডল অর্ডার থেকে লোয়ার মিডেল সবাই ব্যাট হাতে দলের সংগ্রহ বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টাই করলেন।

তাতে আবার অংশ নিলেন অভিষেক হওয়া তানজিম সাকিব। ব্যাট করতে নামলেন নবম উইকেটে। খেললেন এক ‘কুইক ক্যামিও’। ১৭৫ স্ট্রাইকরেটের একটা ইনিংস। একটি চার ও একটি ছক্কা। ৮ বলে ১৪ রানে ইনিংস খেলে থাকলেন অপরাজিত। খুব বেশি রান নয়। তবে বাংলাদেশের টেল এন্ডারদের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।

তবে তার মূল কাজটা ছিল বল হাতে। তাকে বল হাতেই নিজের সুযোগের যথার্থতা প্রমাণ করতে হতো। তিনি সে কাজটিও করলেন দূর্দান্তভাবে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট তার, রোহিত শর্মা। পরিকল্পনার বাস্তবায়নের দৃশ্যমান উজ্জ্বল চিত্র।

স্লিপ থেকে সরিয়ে ফিল্ডার নিয়ে আসা হয় পয়েন্ট অঞ্চলে। সেখানেই ভারতের হিটম্যান তুলে দিলেন ক্যাচ। আনন্দের আর বাঁধ থাকে! থাকলো না। তবে তখনই আনন্দের জোয়ারে নিজেকে ভাসিয়ে দিলেন না তরুণ সাকিব। দারুণ লাইল লেন্থের সাথে বলে মুভমেন্টও আদায় করতে শুরু করেন সাকিব।

ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওভারে আরও একটি উইকেট। দারুণ এক আউট সুইংগার করলেন তিনি। বা-হাতি তিলক ভার্মার জন্যে তা ইনসুইংয়ে পরিণত হলো। তিনি ভাবলেন অফস্ট্যাম্পের বাইরে দিয়ে চলে যাবে সে বল। তবে ক্ষুদ্র এক সুইং বলটিকে মোলাকাত করিয়ে দেয় অফ স্ট্যাম্পের সাথে। হতভম্ব তিলক খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন উইকেটের দিকে।

সাকিবের ঝুলিতে দ্বিতীয় উইকেট। বছর তিনেক আগে পচেশট্রুমেও সাকিবের শিকারে পরিণত হয়েছিল তিলক। একই দিনে দুই তরুণের অভিষেক হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। তবে এবারও তিলকের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। সাকিবের উইকেটের পরিণত হতে হয় তাকে।

খালি চোখে প্রথম স্পেলে সাকিবের সফলতা সেই দুইটি। তবে টানা ছয় ওভার করা সাকিব ভারতীয় টপ অর্ডারকে রাখলেন ভীষণ চাপে। ছয় ওভারে তার খরচা মোটে ১৫ রান। ব্যাটিং ইনিংসের শেষটা যেখানে, ঠিক সেখান থেকেই যেন তানজিম সাকিব বোলিং ইনিংসের শুরুটা করলেন।

এরপরে তিনি দ্বিতীয় স্পেলে একওভার করেন তিনি। তবে সে ওভারে সেট ব্যাটার গিলের তোপের মুখে পড়তে হয় তাকে। ১২ রান আসে সেই ওভার থেকে। একটু ছন্দপতন। এরপর ম্যাচ নির্ধারনী শেষ ওভারে তার হাতে বল তুলে দেন সাকিব আল হাসান। ১২ রান রক্ষা করতে হতো তাকে। ভারতের লেজের ব্যাটারদের বিপক্ষে স্নায়ুচাপ ধরে দক্ষতার পরিচয়ই দেন তিনি।

৭.৫ ওভারে ৩২ রান আর ২ উইকেট। ব্যাট হাতে কার্য্যকর ১৪ রান। শেষ ওভারে ১২ রান ডিফেন্ড করে দলকে জয় এনে দেওয়া। মনের রাখার মতই তো এক অভিষেক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link