বাংলাদেশের এক নারী ক্রিকেটার গত ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতে নেমেছিলেন। তবে শুরুটা ভাল হয়নি তাঁর, দুই ওভারে সতেরো রান খরচ করে বসেন এই অফ স্পিনার। মন খারাপ করে ভেবেছিলেন ক্যারিয়ারই বুঝি থেমে যাবে এখানে, কিন্তু অধিনায়ক ভরসা হারাননি। ম্যাচের বাকি সময়ও তাঁকে আক্রমণে এনেছিলেন।
ভরসার প্রতিদানও দিয়েছেন এই ক্রিকেটার। দশ ওভার হাত ঘুরিয়ে মাত্র ৩৫ রান খরচ করে এক উইকেট তুলে নেন তিনি। আস্থা রাখার জন্য অধিনায়ককে ধন্যবাদ দিতে ভোলেননি এই স্পিনার।
বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ী হয়ে ক্রিকেট খেলার দু:সাহসী এই তরুণীর নাম জান্নাতুল সুমনা। বিস্ময়কর ব্যাপার, সুমনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে খেলেছিলেন তিন ম্যাচ খেলেছেন। অথচ অতীতকে পিছনে ফেলে তিনি এখন প্রস্তুত অজিদের হয়ে মাঠে নামতে।
রংপুরের জান্নাতুল সুমনা ছোটবেলা থেকেই বাড়ির উঠোনে প্রতিবেশী ছেলেদের সঙ্গে খেলা শুরু করেন। অবশ্য ছেলেদের চেয়ে ভাল খেলতেন বলেই জানিয়েছেন তিনি। আবার ক্রিকেট খেলার জন্য স্কুল পালানোর স্মৃতিও আছে সুমনার।
নিয়মিত ক্রিকেট খেলতে খেলতে একদিন বিস্ময়কর ভাবেই বাংলাদেশ জাতীয় দলে ডাক পান জান্নাতুল সুমনা। ২০১৬ সালে তাঁকে নিয়েই আয়ারল্যান্ডে উড়াল দেয় টিম টাইগ্রিস। প্রথম ম্যাচেই আন্তর্জাতিক ক্যাপ পেয়ে যান তিনি, শুরু হয় নতুন পথচলা। কিন্তু বৃষ্টি বাধায় প্রথম ম্যাচে মাঠেই খেলাই হয়নি সেদিন।
দুই বছর পর পচেসট্রুমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে নামর সুযোগ পান জান্নাতুল সুমনা। কিন্তু সেদিন ছয় বল খেলে কোন রান করতে পারেননি পারেননি তিনি। আম্পায়ার সে সময় আউট না দিলেও সততার পরিচয় দিয়ে ক্রিজ ছেড়েছিলেন সুমনা। লম্বা একটা সময় ক্রিকেট ম্যাচ না থাকায় উচ্চ শিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়া চলে যান এই তরুণী।
তিনি বলেন, ‘আমার উচ্চশিক্ষা বিদেশে, বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ায় করতে চেয়েছিলাম। এবং আমার প্রিয় ক্রিকেট দল ছিল অস্ট্রেলিয়া। আমি সবসময় সেরা ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলাম, তাই অস্ট্রেলিয়া কীভাবে বিশ্ব ক্রিকেটে আধিপত্য বিস্তার করে তা দেখার চেষ্টা করেছিলাম। তবে এটি কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল, কেননা আমি ছোট ছিলাম তখন।’
ছয় মাসের মধ্যে ফিরে আসার কথা থাকলেও ২০২০ সালে কোভিড – ১৯ এর জন্য বাংলাদেশে আসা হয়নি জান্নাতুল সুমনার। সৌভাগ্যবশত, সে সময় সিডনি গ্রেড ক্রিকেটের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলেন সুমনা। পিচগুলো প্রায়শই স্পিন বোলারদের সাহায্য করায় কাজটা সহজ হয়ে গিয়েছিল তাঁর জন্য।
ইতোমধ্যে অজি ক্রিকেট কাঠামোতে নিজেকে প্রমাণ করেছেন জান্নাতুল সুমনা। ক্লাবের ‘টিম অব দ্য ইয়ার’-এ জায়গা পেয়েছেন একাধিকবার, টিম ম্যানেজম্যান্টের গুডবুকেও আছে তাঁর নাম। তাই দ্বৈত নাগরিত্ব পাওয়ারও খুব কাছে চলে এসেছেন তিনি।
আজকের এই অবস্থানের জন্য সুমনা নিজের মেন্টর নরম্যান কোচানেক এবং রস টার্নারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। চাকরি, পড়াশোনা, ব্যক্তিগত কাজ শেষ করে ক্রিকেটে সময় দেন জান্নাতুল সুমনা।
কখনো ক্লান্ত হন না তিনি, স্বপ্ন দেখেন ক্রিকেট খেলে আরো উপরে যাওয়ার। দুই দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার কীর্তি গড়তে চান এই অফব্রেক বোলার। সেজন্য অবশ্য আরো কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে জান্নাতুল সুমনাকে।
শারীরিক দক্ষতার দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা এই তরুণীকে আরো শক্ত-সামর্থ্য হয়ে উঠতে হবে; এছাড়া নিজের বোলিং ভান্ডারে নিত্য নতুন অস্ত্র যোগ করা জরুরি সুমনার জন্য। এসব করতে পারলে শীঘ্রই হয়তো অজি নারী দলের কাছাকাছি পৌঁছে যাবেন সুমনা, কোচদেরও বিশ্বাস আছে তাঁর ওপর।