শত আক্ষেপের মাঝে ক্ল্যাসিক লিটনের ফেরা

অফফর্মের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছিলেন না বহুদিন ধরেই। ২০২২-এ বছর জুড়ে ব্যাট হাতে যিনি বাংলাদেশের হয়ে আশার প্রদীপ জ্বেলেছিলেন, সেই লিটনের ব্যাটে ঔজ্জ্বল্য কমে আসছিল ২০২৩-এ এসে। বিশ্বকাপের বছরে যা দুশ্চিন্তার উদ্রেকই ঘটিয়েছিল বটে। সময়ের ব্যবধানে সে দুশ্চিন্তা গড়িয়েছিল শঙ্কায়। বিশ্বকাপের মঞ্চে অসম চাপটা নিতে পারবেন তো লিটন?

অবশেষে সেই চাপ কিছুটা জয় করে ফিরলেন লিটন দাস। ধর্মশালায় ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশের যা একটু প্রাণসঞ্চারের যোগান হয়েছিল, তার সিংহভাগটাই এসেছে লিটনের ব্যাট থেকে। ক্ল্যাসিক লিটনের মোহনীয় সব শটের দেখা মিলল নয়নাভিরাম ধর্মশালায়। ইংলিশ বোলারদের উপর পাল্টা আক্রমণ দেখিয়ে ৬৬ বলে খেললেন ৭৬ রানের একটি ইনিংস।

তবে লিটন দাসের ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠার দিনে আবার বাংলাদেশ ছিল পুরোই বিপরীত। বোলাররা খেই হারিয়েছে, ইংলিশ ব্যাটাররা সমানে বল উড়িয়েছে বাউন্ডারিতে। এরপর ৩৬৬ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ছিল একদমই পথহারা। দ্বিতীয় ওভারে রিস টপলির অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ধরা দেন তানজিদ তামিম। ঠিক এর পরের বলেই ফিরে যান তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত।

রিস টপলির আকস্মিক এ আঘাতে যথারীতি কোণঠাঁসা হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। সাকিব আর মিরাজও সেই ধাক্কা সামলাতে ব্যর্থ হন। অল্পেই গুঁটিয়ে যাওয়া শঙ্কা যখন আসন্ন ঠিক তখনই বাংলাদেশকে কিছুটা টেনে তোলেন লিটন দাস। অবশ্য বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালোই করেছিলেন লিটন। প্রথম ওভারেই হ্যাটট্রিক বাউন্ডারিতে রানের খাতা খুলেছিলেন এই ওপেনার।

এরপর একপাশ থেকে সঙ্গী হারাতে থাকলেও লিটন দাসের ব্যাট থেকে রানের গতির আর অবনমন ঘটেনি। ইংলিশ পেসারদের সামলে সমানে বাউন্ডারির দিকে ঝুঁকেছেন। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে তাই ৩৮ বলেই পৌঁছে যান ব্যক্তিগত অর্ধ-শতকে। লিটন তাঁর ব্যাট হাতে স্বরূপে ফেরার যাত্রায় অবশ্য পাশে পেয়েছিলেন মুশফিককে। ৫০ রানের আগেই ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন লিটন-মুশফিক জুটি। তাদের ব্যাটে ভর করেই এরপর আর কোনো উইকেট না হারিয়েই শতরান টপকায় বাংলাদেশ।

ব্যক্তিগত অর্ধ-শতকের পরে সেঞ্চুরির পথেই ছুটেছিলেন লিটন। সাবলীল ব্যাটিংয়ে লিটনের জন্য সেটি অবশ্য সহজই মনে হচ্ছিল। কিন্তু ছন্দে থাকা লিটনকে থামিয়ে দেন ক্রিস ওকস। ২১তম ওভারের শেষ বলে ওকসের স্লোয়ার কাটারে পরাস্ত হন লিটন। আউটসাইড এজে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে  ব্যক্তিগত ৭৬ রানে ফিরে যান এই ওপেনার।

লিটনের আউটের পরই অবশ্য মলিন হতে শুরু করে বাংলাদেশের ইনিংস। এমনিতে ইংলিশ ব্যাটারদের তাণ্ডবের পর জয় থেকে অনেক দূরেই সরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে লিটনের ব্যাটে কিছুটা হলেও ম্যাচে চোখ রেখেছিল টাইগাররা। তবে লিটন দাস থেমে গেলে থেমে যায় বাংলাদেশের জয়যাত্রাও। এরপর অবশ্য মুশফিক ফিফটি করেছেন। তবে তিনিও পঞ্চাশের পর ইনিংস বড় করতে পারেননি। নিশ্চিত পরাজয়ের দিকেই তাই ছুটেছে বাংলাদেশের এ ম্যাচের দৃশ্যপট।

অন্যরা পারেনি, পেরেছেন লিটন। তবে বাকিদের ব্যর্থতাতে তো দলেরও ব্যর্থতা নিশ্চিত হয়। ৭৬ রানের ইনিংসটা তাই লিটনের নিজেকে ফিরে পাওয়ার একটা টনিক হিসেবে কাজ করলেও আদৌতে সেটি ম্যাচের দৃশ্যপট বদলাতে পারেনি। লিটন নিজেও নিশ্চয় এমন ইনিংসকে সঙ্গী করে মাঠ ছাড়তে চান না। তবে শত অপ্রাপ্তির মধ্যেও লিটনের এমন ইনিংস একটা প্রাপ্তি বটে। এই প্রাপ্তিযোগে পরের ম্যাচগুলোতে টাইগারদের চোখ নিশ্চিতভাবেই এখন ঘুরে দাঁড়ানোর দিকে।

 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link